তাসকিনা ইয়াসমিন : কবি সাইয়েদ জামিলের লেখা কবিতার বই ‘প্রেমের কবিতা’। বইটির ভূমিকায় কবি লিখেছেন এটি স্বতন্ত্র কোন গ্রন্থ নয়। এটি আমার রচিত সাতটি কবিতার বইয়ের অংশবিশেষ। পাহাড়ে একটুকরো কুটির বানানোর স্বপ্ন নিয়ে তিনি এই বইটি প্রকাশের আগে অনলাইনে পাঠকদের কাছে বিক্রি শুরু করেন। সাফল্যও পান। তবে, তার যে স্বপ্ন ছিল বইটি বিক্রির টাকায় পাহাড়ে কুটির বানানো সেই স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসেন হানিফ মোল্লা। তিনি তাকে পাহাড়ে জমি উপহার দেন। এ প্রসঙ্গে কবি বলেছেন, আমার স্বপ্ন অকস্মাৎ এভাবে এতো দ্রুত পূরণ হবে তা আমিও ভাবিনি। এতো গেল বইটি প্রকাশের প্রেক্ষাপট, যা কবি তার ভূমিকায় লিখেছেন। এবার আসি বইটিতে কি আছে সে প্রসঙ্গে। পুরো বইয়ে ৮৬টি কবিতা রয়েছে। বইটি শুরু হয়েছে হিমঋতু কবিতা দিয়ে। এ কবিতায় কবি তার প্রেমিকা সুধার উদ্দেশ্যে বলছেন, মায়া ও মুগ্ধতার সাঁকো পার হ’য়ে/ চলে যাচ্ছি মৃত্যুর দিকে/একটু আগুন দেবে, সুধা?
প্রেমিকা কবিতাটি কবি মনের পূূর্ণ প্রকাশ যেন। জন্ম থেকে জীবনে এগিয়ে চলার পথে প্রতিমুহুর্তে মানুষের প্রেমিক মন তার ভালবাসার মানুষ, তার স্বজনকে হৃদয়ে ঠাঁই দেয়। কবি তারই যেন স্মৃতিচারণ করেছেন এই ‘প্রেমিকা’ কবিতায়। কবি বলছেন, যেদিন আমার জন্ম হ’লো সেদিনই আমি প্রথম প্রেমে পড়ি। আমার ওই সত্য সুন্দর আর সৌন্দর্য তার শাড়ির স্নিগ্ধ আঁচলে আগলে আমাকে এই বসুমাতার কোমল মৃত্তিকায় হাঁটতে শেখায়। আমার ওই প্রেমিকার নাম তহুরা বানু। তিনি ছিলেন আমার মা। সেই কবিতাতে কবি লিখছেন, শৈশবে যার প্রেমে পড়ি আজ তার নাম ভুলে গেছি।… আমি কৈশোরে যার প্রেমে পড়ি তিনি রেহানা ম্যাডাম।… বহু বিচিত্র আমার বয়ঃসন্ধি কালের প্রেম।… আর এই যৌবনে ১৯৭১ সালের গল্পে শুনে আমি এক স্নিগ্ধ শ্যামল নারীর প্রেমে পড়ি।…চিরসবুজ চিরমহীয়ান স্নিগ্ধ শ্যামল আমার এই প্রেমিকার নাম বাঙলাদেশ।
হারানো প্রেমিকার মুখ কবিতায় কবি বলছেন ‘ হারানো প্রেমিকার মুখ বড়ো বেশি লিরিক্যাল।’
প্যালেস্টাইন পৃথিবীর বুকে হারিয়ে যাওয়া এক স্বাধীন ভূখন্ড। যেখানে রক্ত ঝরছে তো ঝরছেই। সেই পরাধীনতার গ্লানি কবি যেন কবিতার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন তার ‘প্যালেস্টাইনের মেয়ে’ কবিতায়, এতে রওজা নামের কবির সেই মেয়ে বন্ধু যার সাথে বন্ধুত্ব ঘিরে কবির কাব্যবিলাস। তিনি রওজার মুখেই বলছেন, ‘তুমি সত্য বলেছিলে কবি, প্যালেস্টাইন পৃথিবীর সব শান্তিপ্রিয় মানুষের হৃদয়ের ভেতর বহু শতাব্দী ধ’রে জেগেছিলো কবিতা আর সংগীত হ’য়ে যা বুঝতে আমাদের দীর্ঘ সময় লেগেছে। ‘ কবি মন চঞ্চল, অস্থির। তার পুরো কবিতার বই জুড়ে আছে ভালবাসার ছড়াছড়ি। আছে প্রেম, আছে বিরহ, আছে পরকীয়া, আছে যৌন নিপীড়ন, আছে যৌন হয়রানি, আছে অর্থের বিনিময়ে ভালবাসা কেনার আকাঙ্খার প্রকাশ।
বিরহ প্রসঙ্গে ‘ঈশিতা বসাক’ দুই লাইনের ছোট্ট কবিতায় কবি লিখছেন – দুঃখ জানে, দুঃখসংক্রান্ত কবিতার প্রযোজ্য নাম ঈশিতা বসাক।
সূর্যাস্ত কবিতায় কবি লিখছেন, ‘মেহেদুল, ব্যর্থ প্রেম ব’লে কিছু নেই। যা আছে তা শাহবাগ।… জানি, অন্ধকারের ভাষা তুমি পড়তে চাও না। মেহেদুল, কখনও কখনও তবু, আমাদেরও পড়তে হয় গূঢ় অন্ধকার!’
কবিতায় প্রেম আসলে কি? একেকজনের কাছে প্রেমের সংজ্ঞা একেকরকম। আর প্রচলিত সমাজের ধারণা যা সবসময় শুনে এসেছি। নারীর শরীর পুরুষের খাদ্য এটা উপস্থাপন করতে না পারলে নাকি পুরুষের প্রেমের কবিতা লেখা সার্থক হয়না!
নারী পাঠককে কি আদৌ পাত্তা দেয় কোন কবি (পুরুষ)! নাকি বিশ্বাস করে নারী পাঠক আর কয়জন? কবির সব কবিতার পাঠক যেন শুধুই পুরুষ! নিজের পুরুষ পাঠকের চাহিদা মেটাতেই বোধহয় কবিরা অনরবত রক্ত-মাংসের মানুষ, তারই সমকক্ষ একজন নারীকে পুরুষের খাদ্য হিসেবে উপস্থাপন করে আনন্দ পায়। এটা কি সত্যি তারা চায় নাকি শুধু পাঠকের ক্ষুধা মেটায়? আমার আসলে কবিদের কাছে জানার আগ্রহ। কবি সাইয়েদ জামিলও এর ব্যতিক্রম নয়। কবি সাইয়েদ জামিল বায়োকেমিস্ট্রি ‘তে যেমন লিখছেন – ‘তুমি অনেক নারীকে দেখেছো, জামিল। ছুঁয়েছো অনেক মেদ-মাংস। খেয়েছোও – ‘ বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত। অন্য আরেকজন এই সময়ের নারীবাদী তসলিমা নাসরিন। তসলিমা নারীবাদী লেখক, কবি। কিন্তু যেহেতু সে নারী কবি সাইয়েদ জামিলের কাছে তার নারীসত্ত্বাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। আর সেই নারী যার সাথে শুধুই যৌনতার সম্পর্ক। কবি ‘তসলিমা নাসরিন’ কবিতায় লিখছেন, তসলিমা, যৌনতা ভিক্ষা মাগি তব দ্বারে।…’ শেষ করি কবির কেমিস্ট্রি পড়ানো সেই অধ্যাপিকার কথা দিয়ে। কবি বলছেন, ‘নিষ্ঠুর রঙের বিভায়, সেইখানে, শুয়ে আছে কেমিস্ট্রি পড়ানো এক প্রাচীন অধ্যাপিকা। শেষবার, তুমি ওই অধ্যাপিকার হাত ধরো।’
কবি বইটি উৎসর্গ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ভানভণিতাহীন, সহজসরল, দুর্লভ এক মানুষ আপনি। ..কবির হৃৎপিণ্ড, এই বই আপনার শ্রীচরণে রাখলাম।
বইটি প্রকাশ করেছে নাগরী। প্রচ্ছদ : আল নোমান। মূল্য ২১০ টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১১২।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা