ফজলুল বারী
অভিনন্দন প্রিয় প্রজন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব ছাত্রছাত্রী স্বরস্বতী পুজার দিন সিটি নির্বাচন করার জেদাজেদির প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছিলেন, অনশনে নেমে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তাদেরকে অভিনন্দন। নির্বাচন কমিশন ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে। ৩০ জানুয়ারির বদলে এখন নির্বাচনের ভোট নেয়া হবে পহেলা ফেব্রুয়ারি। এর মাধ্যমে আবার প্রমান হলো অনর্থক জেদাজেদি করে কেউ জেতে না। তারুন্যের শক্তিকে কেউ হারাতে পারেনা। ‘পুলাপান পথে নামলে কেউ তাদের দাবায়া রাখতে পারেনা’। বাংলাদেশের তরুনরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা অনেক দিন পর একটি বিজয় হলো, যার সঙ্গে সারাদেশের মানুষের সমর্থন ছিলো। স্বরস্বতী পুজার দিন ভোট করে ফেলবো এমন যে জেদাজেদি করেছিল নির্বাচন কমিশন, এর মাধ্যমে তাদের নৈতিক পরাজয় ঘটলো। নির্বাচন কমিশনের সচিব মোঃ আলমগীর কী পদত্যাগ করবেন? তিনি কিন্তু ওই পদে থাকার নৈতিক অবস্থান হারিয়েছেন। পদত্যাগ না করলে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া জরুরি। ওখানে বসে তিনি অনেক উল্টাপাল্টা বয়ান দিয়েছেন। এমন উল্টাপাল্টা লোকের অন্তত নির্বাচন কমিশনের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় থাকা উচিত নয়।
স্বরস্বতী পুজা বাঙ্গালি হিন্দুদের দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বিদ্যা দেবীর পুজা নিয়ে ছাত্রছাত্রী, তাদের অভিভাবকদের বিশেষ এক আবেগ-শ্রদ্ধা কাজ করে। যেহেতু স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পুজা হয় তাই এরসঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবাই যোগ দেন, শরীক হন। এমন একটি পুজার দিনে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন করে ফেলার জেদাজেদি এক অস্বস্তি সৃষ্টি করেছিল। নির্বাচনের আগের দিন থেকে ভোট কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। আর নির্বাচন কমিশনের সচিব মোঃ আলমগীর বলেছিলেন ভোট-পুজা দুটিই পাশাপাশি চলবে! ১৪৪ ধারার মধ্যে কিভাবে এ দুটি স্বাভাবিক চলে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি সচিব। উল্টো ছেলেরা যখন আন্দোলন শুরু গেলো, অনশনে গেলো তখন কান্ডজ্ঞানহীনের মতো বলা হয়েছে এসব দেখার অন্য লোক আছে!
আরও অবাক লাগলো যখন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যখন একটু ধমকের সুরে বলেন, ‘৩০ জানুয়ারিই নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি না করতে বলেছেন!’ এমন বক্তব্যে আওয়ামী লীগ দলটাকে যারা ভালোবাসেন তারা বিব্রত হন। অসহায় বোধ করেন। কারন বড় দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগই অন্তত কাগজে কলমে হলেও ধর্ম নিরপেক্ষ দল। ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য দল হিসাবে আওয়ামী লীগের ক্ষতি করেছে। ক্ষতি যার না বাড়িয়ে একদিনের মধ্যে বক্তব্য পাল্টে ওবায়দুল কাদের পরে বলেন ভোট পিছালে তাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু ক্ষত যেটা হয়েছে তা দ্রুত সারানোর উদ্যোগ নেয়া হবে কী?
ঢাকার সবচেয়ে বড় স্বরস্বতী পুজা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে। পুজার দিন নির্বাচন করার জেদাজেদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদটি জগন্নাথ হল থেকে শুরু হয়। জগন্নাথ হলের ছাত্র সংসদ ছাত্রলীগের। তাই এই আন্দোলনের সঙ্গে শুরু থেকেই ছাত্রলীগ ছিলো। কিন্তু অবাক বিষয় এই আন্দোলনের কোথাও ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরুর কোন ভূমিকা ছিলোনা। কোন হিন্দু অসাম্প্রদায়িক ভোটার নেই নুরুর? রাজু ভাস্কর্যের কাছে শুরু হওয়া অনশনে কিন্তু অনেক মুসলমান ছাত্রছাত্রীও যোগ দিয়েছেন। এটিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য।
দুই সিটির প্রধান চার প্রার্থী শুরু থেকেই পুজার দিন নির্বাচন পিছানোর পক্ষে ছিল। উত্তর সিটির বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল আবার ভোট বর্জন না করে প্রতিবাদ হিসাবে হিন্দু সম্প্রদায়কে বিএনপিকে ভোট দিতে বলেন। নির্বাচন কমিশন যখন জেদাজেদি করছিলো তখনও অনেকে প্রশ্ন রাখছিলেন এটি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র কিনা। কারন ভোটগুলোতো আওয়ামী লীগের। বাংলাদেশের হিন্দুরা ঐতিহাসিকভাবে সব সময় আওয়ামী লীগকেই ভোট দেয়। এরজন্যে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেও বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিল। শেষ পর্যন্ত কিন্তু ভোট পিছিয়েছে সরকারি উদ্যোগেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষা পিছিয়েছে এরপর নির্বাচন পিছিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিষয়টা ক্যাশ করতে পারলোনা সরকারি দল। ওবায়দুল কাদের যদি ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন হবেই না বলে বলতেন, নির্বাচন কমিশন চাইলে আমরা পরীক্ষা পিছিয়ে দেবো তাহলে এটি সরকারি দল ক্যাশ করতে পারতো। এরমাঝে অনেক পানি ঘোলা হয়েছে। অনশনে নেমে অসুস্থ হয়েছে অনেক ছাত্রছাত্রী।
এখন নির্বাচন শেষ মূহুর্তে পিছানোয় অনেক প্রার্থীদের প্রিন্টিং ব্যয় সহ নানা ব্যয় বাড়বে। কারন এখন পর্যন্ত তারা যা যা ছেপেছেন তাতে লেখা হয়েছে নির্বাচন ৩০ জানুয়ারি। যে বাচ্চাদের পরীক্ষা পিছানো হয়েছে তারা, তাদের অভিভাবকরা বিরক্ত-বিব্রত হবেন। আরেকটা বড় ইভেন্ট আছে পয়লা ফেব্রুয়ারি। সেদিন অমর একুশের বইমেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বড় ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। ভোটের দিন সেটি করা কী সম্ভব? এ নিয়ে কী বইমেলার উদ্বোধন নিয়ে নতুন চিন্তার সৃষ্টি হবে। সব সমস্যা সৃষ্টির মূলে নির্বাচন কমিশন। আর যাতে কোন নির্বাচনের সময় এমন এলোমেলো সিদ্ধান্ত না হয়। হিন্দুদেরও যে দেশের মানুষ ভাবে নির্বাচন কমিশন। তাদের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে যেন আর কোন ছেলেখেলা না হয়।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা