ফজলুল বারী : আমাকে এক সুহৃদ লিখেছেন, ভাই দেশে চলে আসেন। করোনা যুদ্ধে আপনি অস্ট্রেলিয়ায় নিরাপদ না। এরচেয়ে এখন আপনি বাংলাদেশে নিরাপদ থাকবেন। কী ধারনা থেকে তিনি এভাবে লিখেছেন সে ব্যাপারে আমার স্পষ্ট ধারনা নেই। এমন ধারনা এখন অনেকের। অনেকের ধারনা এটি বিদেশের রোগ। বিদেশে যারা আছেন তারাই এখন বেশি ঝুঁকিতে আছেন। ইতালি-স্পেন এবং সর্বশেষ আমেরিকার অবস্থা দেখে এমন ধারনা বাংলাদেশের অনেকেরই হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার বাস্তবতা হচ্ছে এটি একটি কল্যান রাষ্ট্র। নাগরিকদের স্বাস্থ্য-অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এখানে সুরক্ষিত। সে কারনে আমার এখানে যে সব সুরক্ষা আছে তা এখন আমি বাংলাদেশে গেলে সহজে পাবোনা।
করোনা ভাইরাসের উদ্বেগ আসার পরই আমার পারিবারিক চিকিৎসক আমাকে ফ্লু ভেকসিন নেবার পরামর্শ দিয়েছেন। এখানে প্রতি বছর শীতের আগে আমরা ভ্যাকসিনটি দেই। বাংলাদেশের মতো দেশে যাবার আগে দেই ট্র্যাভেল ভ্যাকসিন। যে সব রোগ প্রতিরোধে এসব ভ্যাকসিন দেয়া হয় ভ্যাকসিন দিলে তা হবেনা সেটা আমাদের চিকিৎসকরাও বলেননা। বলে দেন, ভ্যাকসিন দিলে কঠিন রোগ হবেনা। শরীরে লড়াইয়ের উপাদান থাকবে। আমাদের সব সময়ের এই যে পারিবারিক ডাক্তার তাকে দেখাতে আমাদের কোন অর্থ দিতে হয়না। তার পারিশ্রমিক দেয় সরকার। বাংলাদেশের সব নাগরিকের এমন সুরক্ষা কম। এখন করোনা সংকটে বাংলাদেশে একেকজন অসুস্থ রোগীকে গ্রহনে বিভিন্ন হাসপাতাল বা চিকিৎসকের তরফে যে সব অমানবিক আচরন করা হচ্ছে তা অস্ট্রেলিয়ায় অবিশ্বাস্য।
অনেকে বলেন, এখন বাংলাদেশের চাইতে অস্ট্রেলিয়ায় করোনা রোগীতো বেশি। হ্যাঁ। বাংলাদেশের চাইতে উন্নত দেশগুলোতে এই রোগী বেশি। কারন মানুষের আশ্রয়স্থলও এসব উন্নত বিশ্ব। চীনের উহান এ রোগের প্রথম এপিক সেন্টার। চীনে এক সময় সমাজতান্ত্রিক এক নায়ক শাসনের কারনে সে দেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিক অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে আশ্রয় নেন।
সেই চীনা বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয় নাগরিকদের এখন চীনে অবাধ যাতায়াত রয়েছে। চীনে নববর্ষ উপলক্ষে যাওয়া বয়স্ক ব্যক্তিদের মাধ্যমে এ রোগটি প্রথম বিভিন্ন দেশে ছড়ায়। অস্ট্রেলিয়া সহ উন্নত দেশগুলোর বয়স্ক মানুষজনের ভ্রমনের প্রিয় একটি মাধ্যম ক্রুজ। প্রমোদতরীর মাধ্যমে এরা এক দেশ থেকে আরেক দেশে যান। এই ক্রুজে গিয়েও অনেক বয়স্ক মানুষেরা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশে অনেকের ধারনা ইতালি-স্পেন শুরুতে এই রোগকে গুরুত্ব না দেয়ায় সেখানে তা আজ মহামারীর রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশেও তাই হবে, ইত্যাদি। বিএনপির রুহুল কবির রিজভিতে তেমন একটি দায়িত্ব-কান্ডজ্ঞানহীন সংবাদ সম্মেলন করতে দেখা গেছে। এই ধারনাটি মোটেই সঠিক নয়। রিজভিদের দল এক সময় বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিল। বাংলাদেশের চিকিৎসা সামর্থ্য তারা জানে। বাংলাদেশের অনেক সামর্থ্য ছিলোনা। করোনা লড়াইকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ অনেক সামর্থ্য এখন অর্জন করেছে।
ইতালির জুতো ও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বিপুল সংখ্যক চীনা বংশোদ্ভূত ইতালির নাগরিক জড়িত। উন্নত বিশ্ব অর্থনৈতিক-স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে মানুষকে দীর্ঘ জীবনও দিয়েছে। এসব দেশের বয়স্ক মানুষজনের জীবনের সঙ্গে বাংলাদেশের বয়স্ক মানুষজনের জীবনযাপন এক রকম নয়। ওই সব দেশের বয়স্কদের জীবন কাটে ভ্রমনে-ক্রুজে, বারে-ক্যাসিনোয় অথবা পোকার মেশিনের সামনে। বাংলাদেশের বয়স্কদের জীবন কাটে মসজিদ-মন্দিরে, বাড়িতে-সমাজে নাতি নাতনিদের সঙ্গে। কাজেই জীবনের প্রেক্ষাপট সমূহ সম্পূর্ন পৃথক।
রোগটি বাংলাদেশে যে সব প্রবাসীদের মাধ্যমে এসেছে তাদের অনেকে উন্নত বিশ্বের হোটেল-রেষ্টুরেন্টের শ্রমিক। তারা যদি দেশে ফিরে একটু সতর্ক জীবনযাপন করতেন, তথ্য গোপন না করতেন তাহলে রোগটি এভাবে বাংলাদেশে যেতোইনা। বাংলাদেশে রোগ বেশি ছড়ায় মশা-মাছির মাধ্যমে। এরমাধ্যমে করোনা রোগ ছড়ায়না। যে বয়স্ক মানুষ, তাদের জীবনযাপন, রক্ষার বৃদ্ধাশ্রমের মাধ্যমে ইতালি-স্পেন বা আমেরিকায় রোগটি এ মাত্রায় পৌঁছেছে বাংলাদেশে তা যাবেনা। কারন বাংলাদেশে সে জীবনই নেই।
বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে এর বাহক যাতে আর না বাড়ে। একজন করোনা রোগীর স্পর্শ, হাঁচি কাশির মাধ্যমে এটির সামাজিক বিস্তার হয়। এখন ইতালি-স্পেনের মতো দেশ থেকে আক্রান্ত অথবা বাহক প্রবাসীর দেশে ফেরা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। এখনকার এপিক সেন্টারগুলো থেকে লোকজন ফেরা নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে। আগে থেকে পুলিশ-প্রশাসনের অনেকে ভালো কাজ করছিলেন। সেনাবাহিনী নামানোর পর এর অনেক কিছু আরও সুসংগঠিত হয়েছে। এই দুর্যোগে আবারও স্পষ্ট হলো বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের জনবিচ্ছিন্নতা। খুব কম সংখ্যক জনপ্রতিনিধি এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় শুরু থেকে জনগনের সঙ্গে আছেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সে রকম সুসংগঠিত নয়। চিকিৎসক-স্বাস্থ্য কর্মীদের অনেকে মতলববাজ, দলবাজ, শিকার ধরায় দক্ষ। করোনা আতঙ্কের শুরুতে তাদের ভূমিকাটি জনগনের সামনে আবারও প্রকাশিত হয়েছে। এরজন্যে মানুষের বিপদের দিনে তাদের অনেককে জরুরি চিকিৎসাই দেয়া হয়নি।
এটা শুধু চিকিৎসক-স্বাস্থ্য কর্মী নয়, যে যেখানে প্রভাবশালী সেখানে একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। সে জন্যে শুরুতে হজক্যাম্পে সবার সঙ্গে মানবিক আচরন করা হয়নি। উহান থেকে আগতদের শিক্ষার কারনে তারা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিলেন। ইতালি ফেরত সবাই তা পারেননি। বরঞ্চ তারা অব্যবস্থার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছেন নিজের স্বজন-দেশবাসীর সঙ্গে। এমন কিছু কান্ডজ্ঞানহীন প্রবাসীদের কারনে দেশের জন্যে দীর্ঘদিন ধরে অবদান রাখা প্রবাসীদের ভূমিকা সাধারন দেশবাসীর মুখে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। প্রবাসী চরিত্রটিই অনেকের কাছে হয়ে গেছে ভীতি-আতঙ্কের নাম। এ অবস্থার আর যাতে অবনতি না হয় প্রবাসীদেরই সে খেয়াল রাখতে হবে।
বাংলাদেশ এরমাঝে অর্জন করছে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সক্ষমতা। জনসংখ্যার তুলনায় এই সক্ষমতা অবশ্য আহামরি কিছু নয়। তবে সক্ষমতাকে কটাক্ষের আগে কেনো লোকজনকে হাসপাতালে ঢুকতে দেয়া হচ্ছেনা এর আত্মজিজ্ঞাসা করুন। চিকিৎসকতো শুধু আওয়ামী লীগের না, বিএনপিরও আছেন!
এই সময়ে বিএনপির ড্যাব কী কোথাও বলেছে যারা হাসপাতালগুলোতে ঢুকতে পারছেননা তাদেরকে আমরা চিকিৎসা দেবো? মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থাতো দিনশেষে সরকারকেই করতে হচ্ছে। করোনার এই সময়ে সংকটে পড়া ক্ষুদ্র আয়ের মানুষজনের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেবার প্রশংসনীয় এই উদ্যোগকে সহযোগিতা করুন। আমি আমার সামান্য উদ্যোগে সহায়তা করছি। আপনিও করুন।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা