দীর্ঘ চার মাস ধরে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্ত:সত্ত্বা নারী রমিতা বেগমের খোঁজে হাসপাতালে এসেছেন তার স্বামী সুরুজ আলী বাদশা।
মঙ্গলবার রাতে স্ত্রী রমিতার খোঁজে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে আসেন তিনি।
রমিতা বেগম বগুড়ার শেরপুর উপজেলার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির বাংড়া এলাকার সুরুজ আলী বাদশার স্ত্রী। তিনি একই জেলার ধুনট উপজেলার সুরক গ্রামের মৃত অফের প্রামাণিকের মেয়ে। প্রায় ৬ মাস আগে বাসে করে টাঙ্গাইল থেকে শেরপুর যাওয়ার সময় ভুলে লালমনিরহাট চলে আসেন রমিতা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চার মাস আগে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের ভেতরের গেটের সামনে পলিথিন বিছিয়ে শুয়ে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন সিনিয়র স্টাফ নার্স চামেলী বেগম। কয়েকদিন চিকিৎসার পর নিরুদ্দেশ হলেও পুনরায় সদর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় রমিতাকে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন যে ওই নারী ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তবে হাসপাতালে কর্মরত নার্স ও চিকিৎসকরা তার পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে এ ঘটনায় সদর থানায় একটি জিডি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ খবর ফলাও করে প্রকাশিত হয়। খবর পেয়ে স্ত্রীর খোঁজে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন রমিতার স্বামী সুরুজ আলী বাদশা। স্বামী ও একমাত্র সন্তান রতন মিয়াকে (২) কাছে পেয়ে এখন খুশি রমিতা বেগম।
সুরুজ আলী বাদশা জানান, প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বাবা মা হারা রমিতা বেগমকে বিয়ে করেন ৪ বছর আগে। কাজের কারণে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে টাঙ্গাইলে বসবাস করতেন তিনি। প্রায় ৬ মাস আগে শেরপুরে খালার বাড়ির উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে ভুলে বাসে করে লালমনিরহাট চলে এসে নিখোঁজ হন তখন দুই মাসের অন্ত:সত্ত্বা থাকা রমিতা। পরে রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি তাকে।
স্ত্রীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় টাঙ্গাইল থানায় জিডি করতে গেলেও রমিতার ছবি না থাকায় জিডি নেয়নি পুলিশ। স্ত্রীর আশা ছেড়ে দিয়ে সন্তানকে নিয়ে নিদারুন কষ্টে জীবন যাপন শুরু করেন সুরুজ আলী। অবশেষে স্থানীয়দের মাধ্যমে অনলাইনে স্ত্রীর ছবিসহ সংবাদ দেখে সন্তান রতনকে নিয়ে ছুটে আসেন হাসপাতালে। স্ত্রীকে পেয়ে আনন্দিত সুরুজ আলী বাদশা।
সুরুজ আলী বলেন, ছোটবেলায় বাবা মাকে হারিয়ে দাদা জিল্লুর রহমানের কাছে বড় হন রমিতা। তার বাবার রেখে যাওয়া প্রায় ৩ একর জমির মালিক হতে চাচারা নির্যাতন করে তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলে। পায়ে শিকল বেঁধে রাখতেন চাচারা। বিয়ের পরেও স্বামী-স্ত্রী দুজনেই রমিতার চাচা আবুল কালামের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পরে জীবন বাঁচাতে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে টাঙ্গাইলে বসবাস শুরু করেন বলেও জানান সুরুজ আলী বাদশা।
দীর্ঘ ৬ মাস পর অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রী রমিতাকে খুঁজে পেয়ে সব গণমাধ্যমকর্মী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সুরুজ আলী। স্বামীকে কাছে পেয়ে বিড়বিড় করে নিজের ঠিকানা বলতে শুরু করেন রমিতা। একমাত্র সন্তানকে কোলে নিয়ে পরম যত্ন শুরু করেন। রমিতা জানান, সুরুজ আলী বাদশা তার স্বামী ও রতন মিয়া তার একমাত্র সন্তান। এখন স্বামীর সাথে বাড়ি যেতে চান রমিতা। তবে সদর থানায় জিডি থাকায় পুলিশের কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে ছাড়পত্র দেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি রমিতা বেগমকে ওষুধ ক্রয়সহ অন্যান্য আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। রমিতাকে একটি নতুন পোশাক ও যাতায়াতের খরচ বহন করবে সমাজসেবা অধিদপ্তর।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম বলেন, রমিতা বেগম ও তার স্বামীর পুরো ঠিকানার সঠিকতা যাচাইসহ অনান্য কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্বামীর কাছে তাকে হস্তান্তর করা হবে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা