হোম কোয়ারেন্টিন মানে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি নিজ বাড়িতে স্বেচ্ছায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে থাকবেন এবং এ সময় নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।
কোয়ারেন্টিনের অবসর সময়কে কাজে লাগান। এসময় করে নিতে পারেন কিছু আমলও।
ধৈর্য ও নামাজ : নামাজের মাধ্যমে বেশি বেশি বিপদ থেকে পরিত্রাণ প্রার্থনা করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৫)
ইস্তিগফার : দুনিয়ায় আমাদের ওপর বিপদাপদ আসার অন্যতম কারণ আমাদের গুনাহ। আমাদের কৃতকর্মের ফল হিসেবেই কখনো কখনো আমাদের ওপর বিভিন্ন বড় ধরনের বিপদ আসে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমাদের প্রতি যে মুসিবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৩০)
মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে যায়, নিজেদের ক্ষমতাবান ভাবতে শুরু করে এবং দুর্বলদের ওপর প্রভুত্ব কায়েম করতে চায়, তখনই মহান আল্লাহ বিভিন্ন আজাব দিয়ে মনে করিয়ে দেন, মানুষ কতটা দুর্বল। অতীতে বহু জাতিকে এ ধরনের অভ্যাসের কারণে মহান আল্লাহ আজাব দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ফেরাউনের বংশ ও তাদের আগের লোকদের আচরণের মতো তারা আল্লাহর আয়াতগুলো অস্বীকার করেছে, ফলে তাদের পাপের কারণে আল্লাহ তাদের পাকড়াও করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিশালী, কঠিন আজাবদাতা। (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৫২)
কিন্তু বান্দা যখন তার ভুল স্বীকার করে মহান আল্লাহর কাছে ফিরে আসে, তাওবায় লিপ্ত হয়ে যায়, তখন আল্লাহ তাকে আজাব থেকে রক্ষা করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তাদের আজাব দানকারী নন, এমতাবস্থায় যে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করছে।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৩৩)
আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার সূর্যগ্রহণ হলো, তখন নবী (সা.) ভীত অবস্থায় উঠলেন এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ভয় করছিলেন। অতঃপর তিনি মসজিদে আসেন এবং এর আগে আমি তাঁকে যেমন করতে দেখেছি, তার চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কিয়াম, রুকু এবং সিজদা সহকারে নামাজ আদায় করলেন। আর তিনি বললেন, এগুলো হলো নিদর্শন, যা আল্লাহ পাঠিয়ে থাকেন, তা কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে হয় না। বরং আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেন। কাজেই যখন তোমরা এর কিছু দেখতে পাবে, তখন ভীত অবস্থায় আল্লাহর জিকির, দোয়া এবং ইস্তিগফারের দিকে ধাবিত হবে। (বুখারি, হাদিস : ১০৫৯)
জিকির : সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্য থেকে অন্যতম নিদর্শন। এগুলো দেখা দিলে রাসুল (সা.) ভীষণ চিন্তিত হয়ে যেতেন। লম্বা কিরাত ও সিজদায় নামাজ পড়তেন। এবং সাহাবায়ে কেরামকে এই মুহূর্তগুলোতে বেশি বেশি দোয়া, তাকবির, নামাজ ও সদকার প্রতি গুরুত্ব দিতেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। তাঁর মহত্ত্ব ঘোষণা করবে এবং নামাজ আদায় করবে ও সদকা প্রদান করবে। (বুখারি, হাদিস : ১০৪৪)
উল্লেখ্য, এখানে আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা বলতে যেমন আল্লাহর মহত্ত্ব বোঝায়, এমন জিকিরের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে, তেমনি বিভিন্ন হাদিসে আজানের কথাও বলা হয়েছে। সম্প্রতি ফ্রান্সে দেখা গেছে, মানুষ করোনা থেকে বাঁচতে সবাই নিজেদের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আজান দিচ্ছে। আবার কুয়েতে সবাই জোরে তাকবির দিচ্ছে। বিপদের মুহূর্তে এই দুই ধরনের কাজই আমরা করতে পারি। বেশি বেশি আল্লাহু আকবার জিকির করতে পারি।
সদকা : বিপদের মুহূর্তে আমরা বেশি বেশি সদকা করতে পারি। কারণ সদকার মাধ্যমে বিপদ দূর হয়ে যায়। মানুষের হায়াতে বরকত হয়, অপমৃত্যু কমে ও অহংকার অহমিকা থেকে মুক্ত থাকা যায়। (আত্তারগিব ওয়াত তারহিব : ২/৬৫)
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার ঈদুল আজহা অথবা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, হে মহিলা সমাজ! তোমরা সদকা করতে থাকো। কারণ আমি দেখেছি, জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই বেশি। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, কী কারণে, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, তোমরা বেশি পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাকো আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। (বুখারি, হাদিস : ৩০৪)
তা ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে সমাজের একটি বড় অংশকে বেকার করে দিয়েছে, বেশি বেশি সদকার মাধ্যমে তাদেরও অনেক বড় সহযোগিতা হবে।
দোয়া : জুবাইর ইবনে আবু সুলাইমান, ইবনু জুবাইর ইবনু মুত্বইম (রা.) সূত্র থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে উমার (রা.)-কে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ (সা.) সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে এই দোয়াগুলো পড়া ছেড়ে দিতেন না।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিয়াতা ফিদদুনিয়া ওয়াল আখিরাতি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া, ওয়াল আফিয়াতা ফী দ্বিনি ওয়া দুনিয়ায়া, ওয়া আহলি, ওয়া মালি, আল্লাহুম্মাসতুর আওরাতি, ওয়া আমিন রওআতি, আল্লাহুম্মাহফাজনি মিন বাইনি ইয়াদাইয়া ওয়া মিন খলফি ওয়া আন ইয়ামিনি ওয়া আন শিমালি ওয়া মিন ফাউকি ওয়া আউজুবিকা বিআজামাতিকা আন উগতালা মিন তাহতি। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমা এবং আমার দ্বিন, দুনিয়া, পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আপনি আমার দোষত্রুটিগুলো ঢেকে রাখুন এবং ভীতিপ্রদ বিষয়গুলো থেকে আমাকে নিরাপদ রাখুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হিফাজত করুন আমার সম্মুখ হতে, আমার পিছন দিক হতে, আমার ডান দিক হতে, আমার বাম দিক হতে এবং আমার ওপর দিক হতে। হে আল্লাহ! আমি আপনার মর্যাদার ওয়াসিলায় মাটিতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭৪)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুরা বাকারার শেষে এমন দুটি আয়াত রয়েছে যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত দুটি তিলাওয়াত করবে তার জন্য এ আয়াত দুটিই যথেষ্ট।’ (বুখারি, হাদিস : ৪০০৮)
মুআজ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) হতে তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে আমাদের নামাজ পড়াবার জন্য আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে পেয়ে গেলাম। তিনি বললেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বলেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বললেন, বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কী বলব? তিনি বলেন, তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সুরা কুল হুয়াল্লাহু (সুরা ইখলাস), সুরা নাস ও ফালাক পড়বে; এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট হতে রক্ষা পাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮২)
কোরআন তিলাওয়াত : আমাদের যেহেতু সাধারণত ব্যস্ততার কারণে কোরআন তিলাওয়াতে সময় কম দেওয়া হয়, অনেকের রমজান ছাড়া কোরআন খতমের সুযোগই হয় না। তাদের জন্য বর্তমান সময়টা কোরআন খতম করার জন্য উপযুক্ত সময়। আল্লাহ হয়তো ঘরে ঘরে কোরআন তিলাওয়াতের উসিলায় আমাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা