গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ। ছবি: মোঃ আরিফ খান।
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার : দেশে কর্মরত স্বর্ণকারদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদরোগ। মঙ্গলবার (১০ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর এক গবেষণার ফলাফলে এই তথ্য দেখা গেছে।
শহীদ ডা. মিল্টন হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশে স্বর্ণকারদের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ‘Cause of death in goldsmith Workers of Bangladesh: Finding From Verbal Autopsy’ আয়োজিত কর্মশালায় গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, বাংলাদেশে আনুমানিক তিন লক্ষ মানুষ স্বর্ণকার পেশায় নিয়োজিত। ভিন্ন ধরণের পেশাগত ঝুঁকির কারণে তাঁদের মৃত্যুর কারণ জানা জরুরি। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, স্বর্ণকারদের অকাল মৃত্যুর হার বেশি, যেখানে তাঁদের গড় আয়ু মাত্র ৫৯ বছর। ৫৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর প্রধান কারণ কার্ডিওভাস্কুলার রোগ, যার মধ্যে ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ ও স্ট্রোক অন্তর্ভুক্ত। মৃত স্বর্ণকারদের রোগের ইতিহাসে দেখা গেছে, তাঁদের ৪৫ শতাংশ কার্ডিওভাস্কুলার রোগে ভুগছিলেন এবং ২০ শতাংশ আক্রান্ত ছিলেন ক্যান্সারে।
অসংক্রাম রোগ বিবেচনায় নিলে দেখা যায় যে, মৃতদের ৬৫ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ, ৫০ শতাংশ ডায়াবেটিস, ৩৫ শতাংশ হৃদরোগ এবং ২০ শতাংশ কিডনী রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ৭৫ শতাংশ স্বর্ণকারই দুই বা ততোধিক অসংক্রামক রোগে ভুগছিলেন। স্বর্ণকারদের জীবনধারণের অভ্যাস তাঁদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়। মৃত স্বর্ণকারদের ৭০ শতাংশ নিয়মিত ধূমপান ও ২০ শতাংশ ধোঁয়াহীন তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন করতেন। তাঁদের ৫০ শতাংশের নিয়মিত মদ্যপানের অভ্যাস ছিল।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গবেষণা কর্মকে সব সময়ই গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনও গবেষণা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বর্ণকারদের নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁদের কাজের পরিবেশ, দীর্ঘক্ষণ কাজ করা, জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাস ইত্যাদি বিষয় অন্তভুর্ক্ত করা জরুরি।
উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, গবেষণা হতে হবে, জনকল্যাণমুখী এবং বৃহৎ আকারের। যাতে করে গবেষণা থেকে প্রত্যেকটি জানার বিষয় সুন্দরভাবে উঠে আসে।
বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ ও অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, স্বর্ণকারদের পেশাটি ও তাঁদের জীবনযাত্রাসহ খাদ্যাভাস হৃদরোগ ছাড়াও বক্ষব্যধির বিভিন্ন ধরণের রোগের সাথে যোগসূত্র রয়েছে। স্বর্ণকারবৃন্দ পেশা ও ধূমপানের কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ রেসট্রিকটিভ ও অবস্ট্রাকটিভ লাং ডিজিজেস বা বাধাজনিত শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়। এগুলো প্রতিরোধের জন্য ধূমপান পরিহার, মদ্যপান থেকে বিরত থাকা ও কাজের সময় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান গবেষক সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ খালেকুজ্জামান বলেন, স্বর্ণকারদের অকাল মৃত্যুর কারণ তাঁদের খাদ্যাভাস ও জীবনযাত্রা কিনা, অকাল মৃত্যুর কারণের সাথে স্বর্ণকারদের কাজের পরিবেশ, তাঁদের পেশা, দীর্ঘক্ষণ কাজ করার কতটা যোগসূত্র রয়েছে সেটা পরবর্তী আরো গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের গবেষকদের মাধ্যমে এই মহতী গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আইসিডিডিআর,বি-এর ইমেরিটাস সাইনটিস্ট ডা. মোঃ ইউনুস। সভাপতিত্ব করেন ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ শরীফুল ইসলাম। ভারবাল অটোপসি পদ্ধতিতে করা গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন এই গবেষণাটির প্রধান গবেষক পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ খালেকুজ্জামান।
বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও এই গবেষণার সহযোগী প্রধান গবেষক ডা. মোহাম্মদ তানভীর ইসলাম। কর্মশালায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পেশাগত স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণার সাথে জড়িত প্রতিনিধিবৃন্দ, স্বাস্থ্য গবেষক, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপক, নীতি নির্ধারক, গণমাধ্যমে থেকে আগত সাংবাদিকবৃন্দ অংশ নেন।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা