সৈয়দ রাশিদুল হাসান
বর্তমানে গণমাধ্যমের অবস্থা ইঙ্গিত করে বেণিয়া খোলস বা কর্পোরেট সংবাদ মাধ্যম, যে ধারা বহমান, তা পতনের মুখে। যদি একের পর এক সংবাদ মাধ্যম ভাঙে, বন্ধ হয় তবে তা হবে সুখের। চলমান অর্থিক যন্ত্রনা থেকে একবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া বেশ ভালো।কেননা পেটে ক্ষিদে নিয়ে ধর্মও পালন হয়না।
গণমাধ্যম বন্ধ হলে সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য তৈরি হবে। তখন তৈরি হবে উন্নত মানের সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকতা। আজ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে চাকরি হারানোর যে ভয় তৈরি হয়েছে, এটার মূলকারণ বলা যেতে পারে অতিরিক্ত লাইসেন্স অনুমোদন এবং তার নিয়ন্ত্রণ বেণিয়াদের হাতে দেয়া।
গণমাধ্যম রাষ্টের চতুর্থ স্তভের একটি। দেশে গত দুই দশকে ৩০টি বেসরকারি টেলিভিশন চালু হয়েছে। আরও ১৫টি সম্প্রচারে আসার অপেক্ষায় আছে।
২৬টি বেসরকারি রেডিও চালু রয়েছে। প্রত্যেক জেলায় কমিউনিটি রেডিও তো আছে আর ব্যাঙের ছাতার মত দেশ জুড়ে ছড়িয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল। টেলিভিশন রেডিও’র লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয়কেই মুল বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এমন অভিযোগ বেশ জোরালো। গণমাধ্যম স্বাধীনতার নামে দেশে বেসরকারি টেলিভিশন-রেডিও’র সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ফলে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ অপেশাদার (সাংবাদিকতার অনাভিজ্ঞ) লোকেদের হাতে।
রাজনৈতিক পরিচয়ে লাইসেন্স নেয়ার পর সেই ব্যক্তি অন্য ব্যবসার ঢাল হিসেবে তারা মিডিয়া চালু করছেন। কিন্তু তাতে যথার্থ বিনিয়োগ না করে এখন কোনভাবে একটা প্রতিষ্ঠান চালু রাখছেন।যার কারণে আজ এস এ টিভির মত একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলর ফটকে তালা ঝুললো।
মালিকপক্ষের বড় অজুহাত হচ্ছে, তাদের আয়ের মুল উৎস বিজ্ঞাপন নিয়ে। নানান কারণে বিজ্ঞাপনের বাজার ছোট হয়ে যাচ্ছে। এ অভিযোগের কারণে তারা সংবাদ কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে পারে না, সে ক্ষেত্রে বলতে পারি, দেশে টেলিভিশন সাংবাদিকদের একটি সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১২০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের বাজার। যদিও মাঝে ৫০০ কোটি টাকার বেশি অর্থে বিজ্ঞাপন ভারতীয় চ্যানেল এবং ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে চলে যাচ্ছিল। এখন ভারতীয় চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে যে শুধু টাকা যে যায়, তা কিন্তু নয় , টাকা আসেও। গত মাসে শুনেছি, অনেক টেলিভিশন নাকি সোস্যাল মিডিয়া বা নিউ মিডিয়া থেকে প্রায় অর্ধ শত কোটি টাকা কামিয়েছে।
শুধু মাত্র আগ্রহের অভাবে আজ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের উপক্রম হয়েছে। অনেক বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তার অন্যান্য অন্য প্রতিষ্ঠানে সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করে, কিন্তু তার যে মিডিয়া বা ঢাল হিসেবে ব্যবহারিত যে প্রতিষ্ঠান, তার প্রতিচরম অবহেলা। তারা মনে করে, সাংবাদিকদের পারিবারিক জীবন বলতে কিছু নেই। তারা বুঝার চেষ্টা করেনা গণমাধ্যম কর্মীদেরও শরীরে একটা পাকস্থলী আছে, যেখানে ক্ষিদে জন্মায়।
অন্যদিকে, বিজ্ঞাপন নিয়ে টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা এবং অনলাইন-পুরো গণমাধ্যমে বেতন না বাড়া, নিয়মিত বেতন না পাওয়া এবং চাকরি হারানোর ভয়-এসব সংকট অনেক ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হচ্ছে কিনা- এই প্রশ্নও উঠছে অনেকের মাঝে। রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য গণমাধ্যম একটি বড় হাতিয়ার। গণমাধ্যমকে ধুঁকে ধুঁকে চালাতে পারলে রাষ্ট্রের যে অক্সিজেন সামাজিকতা তা উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটবে। আর তার সুযোগ নেবে বহিরাগতরা।
# সৈয়দ রাশিদুল হাসান : লেখক, গণমাধ্যম কর্মী।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা