অনলাইন ডেস্ক
শীত মৌসুমে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। এ সময় সর্দি-জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা নাকের প্রদাহ, কনজাংকটিভাটিস বা চোখ ওঠা, ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়া, খুশকি, খোসপাঁচড়া প্রভৃতি রোগ হয়ে থাকে। শীতে সর্দি-কাশিতে আমরা সবাই কমবেশি ভুগে থাকি। জ্বরেও আক্রান্ত হন অনেকে। নাক দিয়ে বারবার পানি ঝরতে থাকে এবং হাঁচি হয়। মাঝে মধ্যে মাথা ব্যথা, শরীরে ব্যথা, গলা ব্যথা এগুলো শীতের সাধারণ রোগ। । সাধারণত যাদের শরীরে এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাই ভাইরাসজনিত এসব রোগে বেশি ভোগে।
কখনো কখনো চোখ লাল হতে পারে এবং চোখ দিয়ে পানি ঝরতে পারে। সর্দি-জ্বরের সময় বিশ্রামে থাকতে পারলে ভালো। সাধারণ খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পানি, লেবুর রস, আনারস, পেয়ারা বা আমলকী জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারেঠান্ডা জাতীয় খাবার (আইসক্রিম, ঠান্ডা পানি, কোমল পানীয় খাওয়া যাবে না। গরম চা বা কফি খাওয়া যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। জ্বর ও ব্যথানাশক প্যারাসিটামল, অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ কয়েক দিন খেলেই ভালো হয়ে যায়। তবে সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সঠিক মাত্রায় পাঁচ থেকে সাত দিন খেতে হবে। শিশুদের টনসিল বা ফুসফুসের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়ানো উচিত।
সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হলে অন্যদের সঙ্গে, বিশেষ করে শিশুদের সঙ্গে মেলামেশায় সতর্কতা অবলম্বন করুন। হাঁচি দেওয়ার সময় বা নাকের পানি মুছতে রুমাল বা টিসু্য পেপার ব্যবহার করুন। রোগীর ব্যবহৃত রুমাল বা গামছা অন্যদের ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেখানে সেখানে কফ, থুথু বা নাকের শ্লেষ্মা ফেলা যাবে না। স্বাস্থ্যকর, খোলামেলা, শুষ্ক পরিবেশে বসবাস করতে হবে এবং বিরূপ পরিবেশে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এ সময় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি থেকে দূরে থাকতে হলে ঠান্ডা ও ধুলাবালি যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করতে হবে। শীতের শুরুতে ডায়রিয়া কিংবা আমাশয়ের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। সাধারণত শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। দূষিত পানি বা খাবারের সঙ্গে এ রোগের জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। তাই বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বাসি-পচা খাবার, রাস্তার ধারের খোলা খাবার খাওয়া ঠিক নয়। মলত্যাগের পর ও খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। যেখানে- সেখানে মলত্যাগ না করে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে। ময়লা আবর্জনা নির্ধারিত স্থানে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। মাছির বিস্তার রোধ করার জন্য বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখুন।
শীতের সময় বাতাসের জলীয়বাষ্প কমে যাওয়ার কারণে চামড়া থেকে পানি চুষে নেয়। এর ফলে ত্বক বা চামড়া শুষ্ক হয়ে ওঠে এ সমস্যাটি কম বেশি সব বয়সের নারী-পুরুষের হয়ে থাকে। বিশেষ করে পা, পেটে উভয় দিক এবং ঠোঁট বেশি আক্রান্ত হয়। পায়ে ধুলাবালি লেগে থাকলে পা ফেটে যেতে পারে। তা ছাড়া ঠোঁটের যত্ন না নিলে পুষ্টিকর খাবারের অভাবে ঠোঁট ফেটে যেতে পারে। অনেকের দেখা দেয় চুলকানি, একজিমা, স্ক্যাবিস প্রভৃতি চর্মরোগ।এসব কারণেই শীতকালে ত্বকের প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। যাদের এসব সমস্যা দেখা দেয় তারা অল্প গরম পানিতে কম সময় গোসল করুন। যতটা সম্ভব কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন। গোসলের পর শরীরে ময়েশ্চারাইজার যেমন : পেট্রোলিয়াম জেলি, গ্লিসারিন, বিভিন্ন লোশন ব্যবহার করুন। শীত মৌসুমে খাঁটি অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল সারা শরীরে ব্যবহার করুন। এতে শরীরের চামড়া ফাটবেও না মসৃণও হবে এবং শীতও কম লাগবে। হাত পা ও ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন।
শীতকালে আমাদের দেশে রবেশির ভাগ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিরাই শরীরের নানা ব্যাথা- বেদনায় ভোগেন। এ দেশে ৫০ ঊর্ধ্ব জনসংখ্যার শতকরা ৬৫ ভাগই ব্যথাজনিত সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে যেসব জয়েন্ট শরীরের ওজন বহন করে এবং বেশি ব্যবহৃত হয় সেগুলো ব্যথা-বেদনা বেশি হয়। ঘাড়, কোমর, সোল্ডার জয়েন্ট, হাঁটুর ব্যথা, পায়ের ব্যথা ও মেরুদণ্ডের ব্যথা উল্লেখযোগ্য। এধরনের ব্যাথা থেকে উপশমের সেরা উপায় হলো বিশ্রামে থাকা। ব্যথার জায়গায় ১০-১৫ মিনিট গরম বা ঠাণ্ডা সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়। বিছানায় ঘুমাবার সময় যেকোনো একদিকে কাত হয়ে হাতের উপর ভর দিয়ে শোয়া ও ওঠার চর্চা করুন। দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু করে কোনো কাজ করবেন না। চেয়ারে বা অন্যকোথাও বসলে মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। দীর্ঘসময় এক জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন না। কোনো প্রকার মালিশ করার দরকার নেই, এ ধরনের ব্যাথা কয়েকদিন পর এমনিই উপশম হয়ে যায়। তবে যে কোনো ব্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা