মাহমুদা আক্তার ( বামে) ও দিল মনোয়ারা মনু (ডানে)
ইচ্ছা ছিলো একদিন মনু আপার কাছে যাব। অনেক কথা বলবো তার সঙ্গে। তার সাংবাদিকতা জীবন আর লেখালেখি নিয়ে। কিন্তু হঠাৎ করেই আমাদের সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলেন মনু আপা। অথচ দুদিন আগেও আমার পোস্টে কমেন্ট করেছেন। আমার সব পোস্টেই লাইক/কমেন্ট করতেন। শুধু আপাকে নয়, যে মেয়েরা একটু লেখালেখি করতেন তাদেরই উৎসাহ দিতেন। আমরার ‘ফড়িং ওড়ার দিন’ উপন্যাস বের হওয়ার পর আপা আমাকে বলেছিলেন কতগুলো বই কচিকাচার অফিসে দিয়ে আসতে। আমি যে আলসে, সেটা আর করতে পারিনি।
এ বছরের গোড়ার দিকে একবার ফোন করে বললেন,‘ মাহমুদা, তোমাকে একটা সাক্ষাৎকার নিতে হবে।’ আপার কথামত গেলাম মগবাজার কম্যুনিটি হাসপাতালে, এনাসথেসিয়া চিকিৎসক ড. শাহেরা খাতুন বেলার একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিলাম। একটা নারী বিষয়ক পাক্ষিক পত্রিকার জন্য মনু আপা আমাকে সাক্ষাৎকারটি নিতে বলেছিলেন। যে কারণে তিনি নিজ হাতে লেখাটা এডিক করেছিলেন। পরে বিভিন্ন কারণে সেই পত্রিকায় সেটি ছাপা হয়নি। পরে সংবাদে এটি ছাপা হয়েছিলো। আমাদের সাংবাদিক বন্ধু নাসরিন শওকত আমাকে সে খবরটি ফোন করে জানিয়েছিলো। শুনে আমি খানিকটা অবাকই হয়েছিলাম। পরে বুঝতে পারি মনু আপার কাছ থেকেই সে লেখাটি সংগ্রহ করেছিলো। এতটা সহায়ক ছিলেন আমাদের মনু আপা।
দীর্ঘদিন অনন্যার মত পত্রিকায় কাজ করার সুবাদেই হউক বা নারীদের প্রতি সফট কর্নার থেকেই হউক, মনু আপার সঙ্গে আমাদের দেশের বহু প্রতিষ্ঠিত নারীদের যোগাযোগ ছিলো। কোনো বিশেষ নারীর মৃত্যু বা জন্ম দিবসে উনি তাকে নিয়ে লিখতেন। তার এসব লেখা পড়ে আমি অনেকের সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি। একবার প্রয়াত অভিনেত্রী ডলি আনোয়ারকে নিয়ে লিখলেন বাংলা ট্রিবিউনে, সেটা পড়ে আমি কেবল ডলি আনোয়ারের ব্যক্তগত জীবন তৎকালীন চলচ্চিত্র সম্পর্কেও অনেক কিছু জেনেছি। পরে ফোন করে মনু আপাকে সে কথা বলেছিও। খুব ইচ্ছা ছিলো এ দেশের পাইনিয়র নারী সাংবাদিক, লেখক, কব, রাজনীতিবিদ সবার সঙ্গে দেখা করবো, তাদের কথা শুনবো।
জানবো তাদের সংগ্রামের ইতিহাস। এক্ষেত্রে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রর প্রেসিডেন্ট মিনু আপা আর মনু আপা এই দুজনের নাম ছিলো সবার উপরে। কিন্তু মনু আপার কাছে যাওয়ার আর সময় হরো না আমার। বারবার আপাকে ফোন করে বলেছি, ‘আপা একদিন আসবো আপনার বাসায়।’ কিন্তু সেই একদিন আর আসলো না, আমি চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেললাম সে সুযোগ। একই সঙ্গে হারিয়ে ফেললাম অমূল্য এক খনি।
নারীদের ওপর যে কোনো তথ্যের জন্য মনু আপা ছিলেন একটা বিরাট খনি। লেখক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, চিকিৎসক সমাজের সব ধরনের নারীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিলো। এখানে একটা বিশেষভাবে বলতে চাই, তিনি মনপ্রাণ দিয়ে নারীদের উন্নয়ন চেয়েছেন, তাদের জন্য লিখেছেন দু হাত ভরে, কাজ করেছেন। এক্ষেত্রে কোনোরকম রাজনৈতিক কূপমণ্ডুকতা তার মধ্যে দেখিনি। দল-মত নির্বিশেষে তিনি কেবল নারীদের ভালো চেয়েছেন, তাদের কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে মনু আপা অবশ্যই ব্যতিক্রম।
যাওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগেই তিনি প্রথিতযশা লেখিকা রিজিয়া রহমানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। নারী বিষয়ক সব ধরনের অনুষ্ঠানে মনু আপা হাজির হতেন সবার আগে। যদিও দীর্ঘদিন ধরে তিনি পায়ের সমস্যায় ভুগছিলেন। কিন্তু নিজের শারীরিক সমস্যাকে গুরুত্ব দিতেন না। নারী সাংবাদিক কেন্দ্র ও মহিলা পরিষদের সব প্রোগ্রাম তিনি যোগ দিতেন। আমরা আমাদের এত বড় একজন নারী হিতৈষী মানুষকে হারিয়ে ফেললাম। যদি আগেই দেখা করতাম, কথা বলতাম তাহলে কত কিছু তথ্য যে জানতে পারতাম মনু আপার কাছ থেকে। গত কয়েকদিন ধরে কেবল এই আফসোসই হচ্ছে। দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে বেহশত নসীব করেন।
মনু আপা যেখানেই থাকেন তিনি যেন ভালো থাকেন।
# মাহমুদা আক্তার, লেখক, সাংবাদিক।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা