মনোজিৎ কুমার বিশ্বাস (৫২) খুলনা মহানগরীর হাজী মহসিন রোডের আর্জেন আলী বাইলেন এলাকার ধীরাজ বিশ্বাসের ছেলে। তাপস কুমার বিশ্বাস ও শ্রাবন্তি বিশ্বাস তিথি নামে তার দুটি সন্তান আছে।
শুক্রবার ময়নাতদন্ত শেষে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মনোজিৎ বিশ্বাসের মৃতদেহ তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে সৎকার করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের খুলনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান জানান, বিষাক্ত মদপানে মনোজিৎ নামে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছিন তিনি। পরে নিশ্চিত হন, এই মনোজিৎ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ে এএসআই পদে কর্মরত ছিলেন। এর আগে গত বছর তিনি খুলনা কার্যালয়ে এসআই পদে কর্মরত ছিলেন। তার পুরো নাম মনোজিৎ কুমার বিশ্বাস। তার বর্তমান কর্মস্থল খুলনায় না হওয়ায় এ বিষয়ে তিনি হস্তক্ষেপ করেননি। মৃতদেহ পরিবারের সদস্যরা নিয়ে গেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) বিপ্লব মোদক রাইজিংবিডিকে জানান, এএসআই মনোজিৎ বিশ্বাস চলতি বছরের আগস্টের শেষের দিকে নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ে যোগ দেন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৩ অক্টোবর তিনি ছুটিতে যান। পরে বিজয়া দশমীর রাতে তার স্ত্রী ফোনে জানান, তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বৃহস্পতিবার তার মৃত্যুর খবর পান তিনি। কিন্তু মাদকসেবনে তার মৃত্যু হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত নন। তবে তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা শুনেছেন।
বিপ্লব মোদক বলেন, তার পরিবারের সদস্যরা খুলনায় না থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। এছাড়া, স্ত্রী ও ছেলের সেলফোনেও শনিবার দিনভর চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দুজনকে গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করে খুলনার বটিয়াঘাটা থানায় গিয়েছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (এসআই) মনোজিৎ কুমার বিশ্বাস। তার সঙ্গে ছিলেন গোয়েন্দা শাখার সিপাহী মো. সেলিম ও সোর্স সুশীল।
থানায় তাদের আচরণে (মাতলামি) সন্দেহ হয় পুলিশের। পরে তাদের আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের খবর দেয়া হয়। কর্মকর্তারা তাদের সহকর্মীদের মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিলেও ওই সোর্সের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ।
এ ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় মনোজিৎকে। পরে বিভাগীয় মামলায় ডিমোশন দিয়ে এসআই থেকে এএসআই করা হয় তাকে। গত আগস্টে তিনি যোগ দেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ে। বিজয়া দশমীতে সেই মাদক কর্মকর্তাই মদ পান করে মারা গেছেন।
২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে খুলনার বটিয়াঘাটা থানায় ঘটনার বিষয়ে ওই থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক জানান, ১৫০ গ্রাম গাঁজাসহ দুজন আসামি নিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে এসআই মনোজিৎ কুমার থানায় আসেন মামলা করতে। মামলা নেয়ার সময় বাংলা মদের গন্ধ পান তিনি।
তিনি বলেন, ‘মদের গন্ধ পেয়ে আমি এসআই মনোজিৎকে বললাম, ধরছেন গাঁজা আর বাংলা মদের গন্ধ বের হচ্ছে। বাংলা মদ আবার খাইল কে? তখন এসআই মনোজিৎ “সরি স্যার, সরি স্যার” বলা শুরু করে। আমি বললাম, আপনি যদি (মদ) খেয়ে থাকেন, তবে আপনি এখানে আসছেন কেন? পরে বাইরে গিয়ে দেখলাম, তাদের সঙ্গে আসা একজন সিপাহী দাঁড়ানো। তার মুখ থেকেও মদের গন্ধ আসছে। এরপর দেখি, আমার পুলিশের সঙ্গে একজন তর্কাতর্কি করছে, মাতলামি করছে। জানতে পারলাম, সে তাদের সোর্স সুশীল বিশ্বাস। পরে তিনজনকে বসিয়ে রেখে তাদের কর্তৃপক্ষকে জানাই। পরে এসআই মনোজিৎ, সিপাহী সেলিম ও তাদের সোর্স সুশীলকে হাসপাতালে নিয়ে স্টমাক ওয়াশ করানো হয়। হাসপাতাল থেকে দেয়া সনদের ভিত্তিতে সোর্সের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা