সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশে শুধু রোগততত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) কোভিড -১৯ (করোনা ভাইরাস) সনাক্তকরণের পরীক্ষা করছে। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আইইডিসিআর এর পরিচালক প্রফেসর ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন।
তিনি বলেন, রোগ নজরদারি ও আকস্মিক রোগ প্রাদুর্ভাব তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইইডিসিআর-এর ল্যাবরেটরি নমুনা পরীক্ষা করে থাকে। এ ল্যাবরেটরিতে প্রায়শঃই মারাত্মক সংক্রামক রোগের জীবাণূ পরীক্ষা হয়। একটি উচ্চ মাত্রার জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ল্যাবরেটরিতেই কেবল এসব মারাত্মক সংক্রামক রোগের জীবাণু পরীক্ষা করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, এটি হাসপাতালের ল্যাবরেটরির মত রোগ নির্ণয়ের কাজ করে না, রোগ নজরদারি ও প্রাদুর্ভাব তদন্তের প্রয়োজনে কাজ করে। এ কাজের অংশ হিসেবে নির্বাচিত রোগসমূহের ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ফলাফল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রোগ নজরদারিনথিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। যে সব রোগী সনাক্ত হয়, তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের ঐ রোগের সুপ্তিকাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
তিনি বলেন, রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে সম্ভাব্য ও সন্দেহজনক রোগীকে কোয়ারান্টাইন ও আইসোলেশন করার কাজের সমন্বয় করে থাকে আইইডিসিআর। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা ফলাফলের তথ্যের ভিত্তিতেই কেবল এটি করা সম্ভব। অন্য ল্যাবরেটরির ওপর নির্ভরশীল হয়ে এ কাজটি করা সম্ভব নয়। এ কারণেই ঈঙঠওউ-১৯পরীক্ষা এ মুহুর্তে কেবল আইইডিসিআর-এই করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে রোগ নজরদারি ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করে আইইডিসিআর-এর অনুরূপ উচ্চ জৈব নিরাপত্তা সম্বলিত ল্যবরেটরি প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানেও এ ধরণের পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগী পাওয়া যায় নি। আশকোনা অস্থায়ী কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রে অবস্থানরত সবাই ভাল আছেন। সিঙ্গাপুরে যে দু’জন বাংলাদেশের নাগরিক কোভিড -১৯ আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সম্পর্কে অবহিত করা হয়। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল।
সিঙ্গাপুর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে- নিশ্চিত রোগী ৫০ জন। পরীক্ষায় ৬৩৮ জনের নমুনায় কোভিড-১৯ভাইরাস পাওয়া যায় নি, ১২৫ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এখনো আসে নি। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১৫ জন। রোগীদের সংস্পর্শে আসা ১০৯০ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৯৮৪ জন সিঙ্গাপুরে আছেন, ৯৬১ জনের সাথে যোগাযোগকরা হয়েছে যারা কোয়ারান্টাইনে অথবা আইসোলেশনে আছেন। বাকী ২৩ জনকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
চীন পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি জানান, চীনের স্বাস্থ্য কমিশন ১১ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছে, প্রাদুর্ভাব ঘটেছে এমন সব গুচ্ছের ৮৩ শতাংশ এ সংক্রমণ ঘটেছে পরিবারের সদস্যদের মাঝে। চীনে হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রোগী নির্ধারণের সংজ্ঞা হালনাগাদ করার কারণে পূর্বে অন্তর্ভুক্ত হয় নি, এমন রোগীরাও কোভিড-১৯ তালিকাভুক্ত হয়েছেন। ফলে একদিনে ১৪ হাজারেরও বেশী মানুষ কোভিড-১৯ রোগী তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
তিনি জানান,কোভিড-১৯ এর কারণে গত ২১ জানুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন প্রবেশ পথে স্ক্রিনিং করা হয়েছে ১৩৩২০৬ জনের। এরমধ্যে ৩টি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিদেশ থেকে আসা স্ক্রিনিং করা যাত্রীর সংখ্যা ৫৮৬৮৫ জন। স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে বিমান বন্দরে একজন রোগীকে সন্দেহজনকভাবে সনাক্ত করা হয়, পরে তার মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পায়নি।
এদিকে, দু’টি সমুদ্র বন্দরে (চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও মংলা সমুদ্র বন্দর) স্ক্রিনিং করা যাত্রীর সংখ্যা ১৪৭২ । অন্যান্য চালু স্থলবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং করা যাত্রীর সংখ্যা ৭৪১৪১। এ পর্যন্ত আইইডিসিআর এর হটলাইন নম্বরে আসা মোটকলের সংখ্যা ১৯১৫ টি। এরমধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কল এসেছে ১৪১৫ টি। হটলাইনের মাধ্যমে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সেবা নিয়েছেন ৭৩ জন। টেস্ট করা হয়েছে ৬২ জনের।
আইইডিসিআর-এর হটলাইন নম্বর
০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় :
× ঘনঘন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোবেন (অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবৎ) × অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না × ইতোমধ্যে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন × কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন (হাঁচি/কাশির সময় বাহু/ টিস্যু/ কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন) × অসুস্থ পশু/পাখির সংস্পর্শ পরিহার করুন × মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাবেন × অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন × জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত চীন ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং প্রয়োজন ব্যতীত এ সময়ে বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করুন × অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা