নিরাপদ, নারী বান্ধব ঢাকা মহানগরী গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। মঙ্গলবার ( ২১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর-দক্ষিণ) নির্বাচন-২০২০ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, চার দশকের অধিক সময় ধরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন সমসাময়িক ইস্যূতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে। ঢাকা সিটিতে বসবাসরত নাগরিকদের নাগরিক অধিকার ক্রমান্বয়েই হারিয়ে যেতে বসেছে। এর সাথে নারীর নিরাপত্তাহীনতা ঘরে-বাইরে প্রতিটি ক্ষেত্রে চরমে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নাগরিকদের হারানো অধিকার ফিরে আসুক এবং ঢাকা নগর নারী বান্ধব হিসেবে, নারীর জন্য নিরাপদ নগর হিসেবে গড়ে উঠুক এই আহ্বান জানিয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী। বক্তব্যে বলা হয় আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০২০ এ ২ টি মেয়র পদে, ১২৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে এবং ৪৩টি সংরক্ষিত আসনে নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে নির্বাচিত নারী কাউন্সিলররা পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি দায়িত্বপ্রপাপ্ত ওয়ার্ডগুলোতে বিগত বছরের মত জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কাজ করবেন।
কিন্তু পূর্বের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত সংরক্ষিত আসনের নারী জনপ্রতিনিধিগণ যথাযথ কাজের সুযোগ ও পরিবেশ এবং পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় সিটি কর্পোরেশনে তাঁরা নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মাধ্যমে জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অর্জনের জন্য নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।
এতে বলা হয়, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে থাকলেও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অপরিকল্পিত এবং সমন্বয়হীন কাজের কারণে নাগরিকদের নানা দূর্ভোগের (মেট্রো রেল তৈরির জন্য রাস্তা সরু হয়ে যাওয়ায় যানজট বৃদ্ধি, নারীবান্ধব গণপরিবহনের অভাব, রাস্তাঘাটে চলাচলে নারীর নিরাপত্তার অভাব, নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি, অবাধ মাদকের ব্যবহার, জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি, নদীভরাট, খেলাধুলার জায়গার অভাব, প্রয়োজনীয় ডে কেয়ার সেন্টার ও নিরাপদ আবাসনের অভাব ইত্যাদি) সম্মূখীন হতে হচ্ছে।
এমতাবস্থায় স্থানীয় সরকারের প্রতিটি স্তরের নির্বাচিত নারী সহ সকল জনপ্রতিনিধিদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের সুযোগ ও পরিবেশ সৃষ্টি করে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর সমঅংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি “নিরাপদ, নারী বান্ধব ঢাকা মহানগরী গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৪৫ টি দাবি উত্থাপন করা হয়।
লিখিত বক্তব্য শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সরকারের সাথে নিয়মিত লবি করছে এবং বিভিন্ন দাবি ও সুপারিশমালা জমা দিয়েছে। সম্প্রতি নারী কাউন্সিলর এবং নগর পরিকল্পনাবিদদের সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের অভিমত অনুসারে সিটি কর্পোরেশনের কাজে পরিকল্পনার অভাব এবং সমন্বয়হীনতার কারণে জনদূর্ভোগ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে রাস্তাঘাটে চলাচলে নারীর নিরাপত্তাহীনতা, গণপরিবহনে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি, গণপরিবহনের চলাচলে নারীর জন্য প্রতিবন্ধকতা, যানজট, রয়েছে জনবান্ধব অবকাঠামোর অভাব ইত্যাদি।
তবে, সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে কিছু জনউন্নয়নমূলক কাজ যেমন পাবলিক টয়লেট নগরের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করে দেয়া হলেও এর সুফল নারীরা পাচ্ছে না। অন্যদিকে, নির্বাচিত নারী কাউন্সিলরদের কাজের কোনো সুনির্দিষ্ট রুপরেখা নেই, কাজের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ পায় না, নেই কোনো পরিপত্র। এমতাবস্থায় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পারিবারিক-সামাজিক-ব্যক্তিগত সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য নারীবান্ধব কথাটির প্রতি গুরুত্বরোপ করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম, সহ- সভাপতি লক্ষী চক্রবর্তী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, সংগঠন সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম, লিগ্যাল এইড সম্পাদক সাহানা কবির, অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা, প্রকাশনা সম্পাদক সারাবান তহুরা এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ মোট ৪৮ জন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এ্যডভোকেসী এবং লবি পরিচালক জনা গোস্বামী।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা