বিশিষ্ট কলামিস্ট ও সাংবাদিক পাক্ষিক অনন্যার সাবেক নির্বাহী সম্পাদক, সাংবাদিক দিল মনোয়ারা মনুকে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তাকে দাফন করা হয়েছে বলে জানান এএলআরডির কর্মী মুক্তা। এর আগে দুপুরে লালমাটিয়ার বিবির মসজিদ, জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং কচিকাঁচার মেলায় তার জানাযা সম্পন্ন হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবে জানাযার আগে স্ত্রীর মৃত্যুতে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, এক ঘণ্টার ব্যবধানে মনু পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলো। রাত ১২টার আগেও ও সুস্থ ছিল। এক ঘন্টা পরেই তিনি মারা যান। তিনি বলেন, স্ত্রীর পক্ষ থেকে সকলের কাছে ক্ষমা চান এবং কারো তার কাছে কোন পাওনা থাকলে তে চেয়ে নেবার অনুরোধ জানান। এসময় পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, আমার জিদের বশে অনন্যা শুরু করা। সেটা চালু করার পর আপানাদের যত জনের সঙ্গে আমার পরিচয় সেটা মনুর মাধ্যমেই হয়েছে। একসময় অফিসের নানা জটিলতার কারণে মনু আমার এখানে কাজ থেকে সরে দাঁড়ায়। আমি মনুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
গতকাল রোববার (১৩ অক্টোবর) রাত ১২টার দিকে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে বারডেম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মনোয়ারা মনুকে। পরে রাত ১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
১৯৭৪ সালে উপমহাদেশের বিখ্যাত ‘বেগম’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন দিল মনোয়ারা মনু। এরপর অনন্যা পত্রিকায় দীর্ঘ ২৫ বছর কাজ করেন তিনি। মনোয়ারা মনু জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তিনি গণমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি নারী সাংবাদিক কেন্দ্র’র সহ সভাপতি ছিলেন। ছিলেন কচিকাঁচার মেলার সহ-সভাপতি। এছাড়া অসংখ্য সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন শ্রদ্ধেয় এ সাংবাদিক।
পাক্ষিক ‘অনন্যা’র সাবেক নির্বাহী সম্পাদক ও নারী সাংবাদিক নেতা দিল মনোয়ারা মনুর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দিল মনোয়ারা মনু ১৯৫০ সালের ২ সেপ্টেম্বর বাবা অালী অাহমেদ খান ও মা জাকেরা অালীর ঘরে ফরিদপুরের ভাঙায় জন্মগ্রহণ করেন। ইডেন কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ সম্পন্ন করেন। ১৯৭৪ সালে বেগম পত্রিকায় সহ সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। নাসিরউদ্দিন অাহমেদ, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই এবং বেগম সম্পাদক নুরজাহান বেগমের সান্নিধ্যে স্বেহধন্য ছিলেন। সম্পাদক তাসমিমা হোসেন সম্পাদিত পাক্ষিক অনন্যায় ১৯৮৮ সালে যোগদান করেন। সেখানে টানা ২৫ বছর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাক্ষিক অনন্যায় তার কাছে কাজ শিখে, তার অধীনে কর্মরত বহু রিপোর্টার, সাব এডিটর, ফটোগ্রাফার এখন দেশী-বিদেশী বহু মিডিয়ায় এবং গণমাধ্যম বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন। তার দীর্ঘ কর্মজীবনের স্বীকৃতিতে পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন তাকে অাজীবন সম্মাননা দিয়ে এক বিরল সম্মান জানান। নিজ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন মেধা, শ্রম ও একনিষ্ঠতার সঙ্গে কাজ করার জন্য কাউকে সম্মানিত করার এমন ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ইতিহাসে প্রায় বিরল। তিনি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জন্মলগ্ন থেকে এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি গত চারবছর ধরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের গণমাধ্যম উপ পরিষদের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সহ-সভাপতি ছিলেন। কেন্দ্রীয় কচি কাঁচার মেলার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অব বাংলাদেশ (এএলঅারডি)’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ছয় ভাইবোন ( তারা মোট ১১ ভাইবোনের মধ্য ২ বোন ও এক ভাই অাগেই প্রয়াত), তাদের সন্তান, পেশাজীবনের অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। স্ত্রীর মৃত্যুতে তার অাত্মার মাগফিরাত কামনা করে স্বজনদের কাছে দোয়া চেয়েছেন স্বামী শামসুল হুদা। দিল মনোয়ারা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা প্রয়াত অাকতার অাহমেদ খান এর বড় বোন। তার মৃত্যুর খবর শুনে তার লালমাটিয়ার বাসায় ছুটে যান অসংখ্য গুণগ্রাহী। এদের মধ্যে ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কাজী মদিনা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সীমা মোসলেম, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র’র সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু এবং সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য, সমাজকর্মী কামাল আহমেদ প্রমুখ।
জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারী সাংবাদিক কেন্দ্র, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, শিশু সাংবাদিকদের নেটওয়ার্ক, সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী জ্ঞাপন করেন।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা