জাহাঙ্গীরনগরে যাঁরা আজকে আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ক্লাশ বর্জন নিয়ে নিন্দায় মুখর , যে কোনো মূল্যে যাঁরা ক্লাশ নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাশরুমে ধরে রাখতে যারা অনির্ধারিতভাবে আচমকা ২/৩ ঘন্টার ক্লাশ নিচ্ছেন, একসাথে ২/৩টা উপস্থিতি দিচ্ছেন, শিক্ষা বিতরণে তাঁদের নিষ্ঠাকে আমি সম্মান জানাই। তাঁদের পাশে নিজেকে স্থাপন করে লজ্জায় কুন্ঠিত হই।
যে শিক্ষার্থীরা আমাদের আন্দোলনে ত্যক্ত-বিরক্ত, যাঁরা ক্লাশ করতে উন্মুখ তাঁদের সামনে আমি আজ অপরাধী বটে।
ক্লাশ না হওয়া নিয়ে আপনাদের খেদ, উষ্মা পুরোপুরি সঙ্গত, আমি মানতে বাধ্য।
কিন্ত একটা দুর্বল, ত্রুটিযুক্ত পরিকল্পনা যে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্ষতি করে দেবে– তা নিয়ে আপনি ভাবিত নন কেন?
কোটি টাকার প্রকল্প ক্যাম্পাসে আসার মূহুর্ত থেকে শুরু হয়ে গেলো টেন্ডারে অনিয়ম, একমাত্র ব্যাংকটিতে পাওয়া গেলোনা ফর্ম, ঘটলো টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা, ইমেইল মারফত সংক্ষুব্ধ পক্ষ জমা দিলো অভিযোগ– প্রশাসন এগুলোর কোনোটাতে যথাযথ সাড়া দিলোনা, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হলোনা, তা নিয়ে আপনার খেদ, উদ্বেগ কোথায়?
আরও পড়ুন : আমি ছাত্রলীগের কাছে কৃতজ্ঞ : জাবি ভিসি
পাবলিকের পয়সা নিয়ে নয় ছয় হচ্ছে দেখেও আপনার টনক নড়েনা কেন? আপনি নিজে পাবলিকের পয়সার ভাগ পেয়েছেন, ভর্তুকিতে পড়ছেন, পড়েছেন। আজ সেই পয়সা চুরি হলে আপনার গায়ে লাগেনা কেন?
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকেরা যথোচিত কাজটিই করেছেন। উপাচার্যের বাসায় টাকা ভাগ বাটোয়ারার খবর শুনে তাঁকে বিনীতভাবে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন। তাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক এবং পারিষদবর্গ সাংবাদিকদের উপর চড়াও হলেন কেন? অমুকে দৌড়ে এসে ছবি তুলে রাখলেন, তমুকে বললেন ‘মামলা দিয়ে দেবো’। বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্তাকর্তাদের এই তম্বি নিয়ে আপনার মনে প্রশ্ন তৈরি হয়না কেন? কেন আপনি বিচলিত বোধ করেন না?
এরপরে উপাচার্যের জবানীতে পত্রিকায় খবর এলো যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ টাকার ভাগ চেয়েছে। তার জবানীতেই আরও খবর এলো যে ঠিকাদাররা ২কোটির বদলে এক কোটি টাকা দিয়েছেন এমন কথা তিনি শুনেছেন। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের মাঝে মনোমালিন্যের খবর এলো। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পদধারীরা বললো যে তারা বিপুল অংকের সেলামী পেয়েছে। সেসবও পত্রিকা এলো। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এমন সব লজ্জাজনক খবরেও আপনার হেলদোল নাই কেন? উপাচার্য নিজের বাসভবনে বসে টাকাভাগাভাগির কাজটা করে দিয়েছেন, এটাও আপনার কাছে কোনো খবর নয় কেন?
খবরগুলো যদি মিথ্যা হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে প্রেস কাউন্সিলে বিচার দিতে পারতো। যে ছাত্র নেতারা টাকা ভাগাভাগির কথা রটিয়ে বেড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে পারতো। তা যখন বিশ্ববিদ্যালয় করেনা, বরং, অভিযোগ উত্থাপনকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় আর প্রতিষ্ঠান, তার সর্বোচ্চ পদে আসীন ব্যক্তি এবং তাঁর পরিবার অভিযোগের দায় মাথায় নিয়ে বসে থাকেন। এবং তখনও কেন আপনার মনে ক্ষোভ কিংবা হতাশা দানা বাঁধেনা? তখনও কেন আপনি এই লজ্জাজনক নিশ্চুপতা নিয়ে কথা তোলেন না?
এই পর্যায়ে আমরা বলেছি যে অভিযোগ উঠলেই কেউ দোষী হয়ে যায়না। কিন্তু এত কথা বাজারে ছড়াচ্ছে আর এই অভিযুক্তরা তা শক্তহাতে মোকাবেলার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেনা, সে কারণেই পুরো বিষয়টার একটা সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আমাদের এই দাবী নিয়ে আপনারা জোরেশোরে কিছু বলেন না কেন? আমরা কি ভুল কিছু বলেছি? না হলে এই দাবী আপনারও দাবী হয়ে ওঠেনা কেন? আপনার মনেও কি একবারের জন্য সন্দেহ তৈরি হয়না যে তাহলে কি আসলেই কোনো ঘাপলা আছে ব্যাপারটায়? না থাকলে তদন্তের প্রশ্নে এত গড়িমসি কেন?
আপনি আর আমি ইউনিভার্সিটির বাসে গাবতলী পার হতে হতে সদ্য ছাপা হওয়া টাকা ভাগাভাগির খবর নিয়ে হাসাহাসি করি, ‘কি লজ্জা,কি লজ্জা!’ বলে মাথা দোলাই। আপনি কিংবা আমি ক্লাশের ব্রেকে টাকার ভাগ নিয়ে ছাত্রলীগের সম্পাদকের চম্পট দেবার খবরটার সত্যতা যাচাইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু দিন শেষে এসব নিয়ে প্রশ্ন যারা তোলে, তাদের থেকে সাত হাত দূরে থাকি। টিআইবির পিন্ডি চটকায়ে সই স্বাক্ষর দেই। উন্নয়নের পক্ষে মিছিল করি। আর বোবাকালার মত ক্লাশের অ্যাটেনডেন্স নেই আর দেই। অন্যদিকে প্রশ্ন যারা তোলে তারা হয়ে যায় শিবির, প্রশ্ন যারা তোলে তারা হয়ে যায় অজ্ঞাতনামা হামলাকারী, তারা পুনর্বার মামলা খায়। গায়েবী নির্দেশে তাদের ফোন বন্ধ হয়। তাদের বাড়িতে গোয়েন্দা যায়। চাউর করা হয় যে আপনার পোষা গুণ্ডারা প্রথমে কয়েকটাকে শিবির বলে মার দেবে, হাসপাতালে পাঠাবে আর তারপর সেখান থেকে তাদেরকে অ্যারেস্ট করা হবে।
অগ্রজ ও অনুজপ্রতিম বন্ধু সকল, আপনাদের চাটুকারিতায় আর মোনাফেকিতে কিংবা নির্বিকার ঔদাসীন্যে, আর নিশ্চুপতায় আমার রাগ হবার কথা ছিলো। অথচ আমি বিমর্ষ হই। আমি বুঝতে পারি এই সমাজে কি ভয়ংকর সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। হত্যা, লুন্ঠন দেখেও এখন পাশ ফিরে শুয়ে থাকা যায়। চারপাশের বিভীষিকা আর অনাচারের মধ্যে বসেও এখানে বিসিএস কি কন্সালটেন্সির কড়ি গোনা যায়। কাজেই থাকুন নির্বিকার নৈঃশব্দ্যে। শুধু দেইখেন, আপনার মৌনতা যেন অপরাধীর কাছে সম্মতির বার্তা না পৌঁছায়।
# সাঈদ ফেরদৌসের ফেসবুক থেকে।
লালসবুজের কথার ফেসবুক পেজ
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা