অনলাইন ডেস্ক
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপদগামী সদস্য ধানমণ্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।
পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্তবাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।
বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন। গোটা জাতির স্বপ্নের রূপকার এ ব্যক্তিত্ব বাঙালির বিশ্বজয়ের মহানায়ক এবং ঐক্য, প্রেরণা ও স্বাধীনতার মূর্ত প্রতীক। তার ইস্পাতকঠিন নেতৃত্ব আর অভীক লড়াকু সত্তা বাঙালি জাতিকে দিয়েছে অধিকার আদায়ের অনিঃশেষ প্রেরণা। পাকিস্তানি শাসকদের ধারাবাহিক শোষণ, দমন-পীড়ন, ঔপনিবেশিক লাঞ্ছনা-বঞ্চনা আর দীর্ঘদিনের নির্যাতন-নিপীড়ন-বৈষম্যের অপমান থেকে বাংলার জনগণকে মুক্তির নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দেন। সেদিন তার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- এ অমর আহ্বানেই স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয় নিপীড়িত কোটি বাঙালি।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা শুরু হওয়ার পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠেই ধ্বনিত হয় মহান স্বাধীনতার অমর ঘোষণা। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ওই রাতেই তাকে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এর পর মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তাকে বন্দি থাকতে হয় পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে। তবে মৃত্যুর খড়গ মাথার ওপর ঝুললেও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি বাঙালির মহান অকুতোভয় এ নেতা। যে কারণে পাকিস্তানি স্বৈরশাসককেও নতি স্বীকার করতে হয়। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাঙালির প্রাণের এ নেতাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় তারা। এর পর বীরের বেশে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু।
রোববার (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস। আজকের সূর্যোদয় হবে সেই মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে। এ দিনে নিউইয়র্ক সিটির পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ কেন্দ্র টাইম স্কয়ারে বঙ্গবন্ধুর অডিও-ভিজুয়াল ক্লিপ প্রদর্শিত হবে।
বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে টাইমস স্কয়ারে বিশ্বখ্যাত বিশাল ‘বল ড্রপ’ বিলবোর্ডে ২৪ ঘণ্টায় প্রতি দুই মিনিট অন্তর অন্তর ৭২০ বার বঙ্গবন্ধুর ক্লিপটি দেখানো হবে। অডিও-ভিজুয়াল ক্লিপটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ বিভিন্ন সময়ের স্মরণীয় মুহূর্তগুলো থাকবে।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন। টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়াও, দিবসটি উপলক্ষে দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সংস্থা জাতীয় শোক দিবসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্ব স্ব কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতপূর্বক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে।
জাতীয় শোক দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা