পিপিই না পেয়ে রেইনকোট পরে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করেছে চিকিৎসকেরা।
তাসকিনা ইয়াসমিন : দেশের সকল হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক এখন পর্যন্ত তাদের সুরক্ষা পোশাক (পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট-পিপিই) পাননি। যার কারণে অনেকেই হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন। করোনা ভাইরাসের মতো ভয়ঙ্কর সংক্রমিত রোগের জন্য সকলের সুরক্ষা পোশাক নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত সবাই পাননি। তবে, স্বাচিপ’র নেতৃবৃন্দ বলছেন, শীগগিরই সব চিকিৎসক সুরক্ষা পোশাক পাবেন।
বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ হাসপাতালের চিকিৎসক এবং অন্যরা পিপিই পাননি। কেউ কেউ বলছেন, ৯০ ভাগই পায়নি। চিকিৎসক হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, চিকিৎসকদের দ্রুত পিপিই দিন।
চিকিৎসক নেতা নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, দেশে সাধারণ ছুটিতে কোটি কোটি মানুষ ঘরে থাকবে। কিন্তু এদেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ঘরে থাকবেনা। তারা জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করবে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের এই যুদ্ধে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হচ্ছেন সম্মুখ যোদ্ধা। এই যোদ্ধাদের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হু) রিকমেন্ডেশন অনুযায়ী পিপিইসহ অন্যান্য সকল উপকরনে সজ্জিত করা দরকার। শুধু তাইই নয়, এই যুদ্ধে যেহেতু চিকিৎসকগনের আক্রান্ত হবার ও আশংকা আছে সেই জন্য চিকিৎসকদের মনবল ধরে রাখা এবং মনবল বৃদ্ধি করার জন্য ও কাজ করা ও জরুরি।
তিনি বলেন, কিন্তু, আমরা এখন পর্যন্ত যা লক্ষ্য করলাম, তা তে একজন চিকিৎসক হিসেবে নিদারুণ কষ্ট ও অপমান অনুভবই করছি।চিকিৎসকদের যুদ্ধ সজ্জা পিপিই দেয়া থেকে বরং চিকিৎসকদের কখন এবং কোন কোন চিকিৎসকের পিপিই লাগবে সেই বিতর্ক যেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অধিকাংশ চিকিৎসক পিপিই পায় নাই। দেখা যাচ্ছে, চিকিৎসা কর্মের সাথে জড়িতরা পিপিই না পেলেও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসে অনেকেই পিপিই পরিধান করে অফিস করছেন, এটা ও সকল চিকিৎসকের যে পিপিই প্রয়োজন তারই সাক্ষী দিচ্ছে। সার্বিক অবস্থায় চিকিৎসক নিজেকে বড় অসহায় ও বিপন্ন মনে করছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, প্রয়োজনীয় উপকরণ ছাড়া কাওকে এ-ই ধরনের যুদ্ধে কেউ পাঠাতে পারে না, কাও কে আত্মহননের দিকে ঠেলে দিতে কেউ পারে না। মনে রাখা দরকার, আক্রান্ত চিকিৎসক ভয়ংকর, আক্রান্ত চিকিৎসক ও অন্যান্য দের কে কোয়ারান্টাইনে নিলে খুব শীঘ্রই চিকিৎসক সংকট দেখা যাবে। আবার আক্রান্ত চিকিৎসক হতে পারে করোনা ক্লাস্টার বোমা, যে সংক্রমিত করবে অনেককে। সংক্রামক রোগ ও রোগী চিকিৎসায় প্রোটেকশন পাওয়া চিকিৎসকের অধিকার। তবে, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ বলেন, সব যায়গায় আমাদের পোশাকা পৌছাচ্ছে। আমি আজকে খুলনায় যোগাযোগ করেছি। সেখানে ১ হাজার পিপিই যাচ্ছে। সব যায়গায় যাচ্ছে। আমরা যেখানেই শুনি যে সমস্যা আছে। আমরা সেখানেই ফোন করছি। আমরা সব যায়গায় চেষ্টা করছি যেন সবখানে টেস্ট করা যায়। এখন সব জেলায় জেলায় হাসপাতাল নির্দিষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। আমরা একটু সতর্ক। আমরা ডিজি অফিস এবং সিএমএইচের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি যেন দ্রুত পোশাক পৌঁছে। আমরা একটু আশ্বস্ত যে প্রত্যেক দিন ৩০ হাজার পিপিই বাংলাদেশে প্রস্তুত হচ্ছে। আর বাংলাদেশে বিভিন্ন যায়গা থেকে আসছে। চীন, ভারত থেকে আসছে। ডাব্লিউএইচও দেবে। ডাক্তারদের আগের মতো সমস্যা নেই। তিনি বলেন, একটা দ্বন্দ্ব ছিল আগে করা পরবে। এখন সব হাসপাতালে গাইডলাইন হয়ে গেছে। ট্রিটমেন্ট প্রটোকল হয়েগেছে। জ্বরের রোগী, কাশির রোগী কোথায় ট্রিটমেন্ট করবে। তাদের ভর্তি করলে হাসপাতালে কোথায় করবে। এগুলো সব হাসপাতালে হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এখন গত এক সপ্তাহের আগের দৃশ্য নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক ব্রিফিংয়ে বলেন, চিকিৎসকদের পিপিই’র কোন সংকট নেই। এদিকে, বাংলাদেশে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সকল চিকিৎসক-নার্স এবং স্টাফকে একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাবার পর আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। কক্সবাজারে একজন রোগী সনাক্ত হওয়ার পর সেখানকার ১২ জন স্টাফকে কােয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। আইইডিসিআর এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৩ জন চিকিৎসক এবং একজন নার্স করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আলজাজিরার দেয়া তথ্যানুযায়ী, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ইতালিতে ২হাজার ৫শ ২৯জন ডাক্তার-নার্স আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ১৩ জন চিকিৎসক।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা