ফজলুল বারী : সরকারি বিধি নিষেধ মেনে শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানরা জুম্মার নামাজ পড়েছেন অথবা পড়েননি। করোনা ভাইরাস সংক্রমন নিয়ে উদ্বেগ আতঙ্কের পরিস্থিতিতে ইনডোরে একশ, আউটডোরে পাঁচশ’র বেশি মানুষের সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। সিডনির লাকেম্বার ওয়ানজি রোডের মসজিদটি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ। প্রতি শুক্রবার এই মসজিদের জুম্মার জামাতে পাঁচশ’র বেশি মুসল্লি নামাজ পড়েন। কিন্তু ইনডোরে একশ’র মধ্যে সরকারি বিধি নিষেধের কারনে এই শুক্রবারে লাকেম্বার ওয়ানজি রোডের মসজিদে জুম্মার নামাজই হয়নি। লাকেম্বা মাসালার মতো ছোট ছোট নামাজ পড়ার অনেক জায়গা আছে অস্ট্রেলিয়ায়। শুক্রবার লাকেম্বা মাসালার বাইরে দেখা গেলো মুসল্লিদের লাইন। গুনে গুনে একশ জন করে একেকটি জামাতের পর, এই একশজন বেরিয়ে যাবার পর পরবর্তি জামাতের জন্যে ঢুকছিলেন আরও একশজন। অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসলমানরা এভাবে সরকারি বিধি নিষেধ মেনে চলেই ধর্মকর্ম করেন।
কিন্তু শুক্রবার অস্ট্রেলিয়া সরকার নতুন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপাতত মসজিদ মাসালা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে হবে। নতুন সিদ্ধান্তে ইনডোরে একশ’র কম জনসমাবেশেও শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। শর্তটি হলো প্রত্যেকের অবস্থানের সঙ্গে আরেকজনের দূরত্ব থাকতে হবে চার বর্গ মিটার। এতে করে শুধু মসজিদের নামাজ, গির্জার প্রার্থনা নয়, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস চালু রাখাই কঠিন হয়ে যাবে। মুসলমানদের নামাজের লাইনে গায়ে গায়ে দাঁড়াতে হয়। ফাঁক রাখা যায়না। চার বর্গ মিটার ফাঁক রেখে জামাতে নামাজ হবেনা। উল্লেখ্য করোনা ভাইরাসের সংক্রমন এড়াতে সৌদি আরব সহ নানান দেশ মসজিদে জামাতে নামাজ নিষিদ্ধ করেছে। অস্ট্রেলিয়ায় যার ধর্ম তার কাছে রাষ্ট্রের কি বলার আছে নীতি। কিন্তু সৌদি আরব বিষয়টি যেভাবে বলতে পারে অস্ট্রেলিয়া তা পারেনা। বাংলাদেশেতো এটা বলা সম্ভবই না। শুধু মুসলমানদের নামাজ নয়, নানাকিছুতে অস্ট্রেলিয়া কিন্তু এভাবেই কৌশলে ধীরে ধীরে লকডাউনের দিকে যাচ্ছে।
এখানকার একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে জনমনে ভীতি যাতে পেয়ে না বসে এরজন্যে একেকটি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে সতর্কতার সঙ্গে। এখনও ঘোষনা দিয়ে স্কুল বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু অনেক স্কুলে উপস্থিতি অর্ধেক হয়ে গেছে। বেসরকরি স্কুলগুলো এরমাঝে অঘোষিত বন্ধ তথা অনলাইনের ক্লাসে চলে গেছে। বেশিরভাগ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস হচ্ছে অনলাইনে। শুক্রবার আবার ঘোষনা দিয়ে এ বছরের নেপলেন পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। প্রতিবছর ক্লাস থ্রি, ফাইভ, সেভেন এবং নাইনের ছাত্রদের অংক-ইংরেজিতে দেশজুড়ে নেপলেন পরীক্ষায় বসতে হয়। শুক্রবার জানানো হয়েছে এই পরীক্ষাটি এবার হবেনা। জটিল এই পরিস্থিতিতেও অস্ট্রেলিয়ায় স্কুল বন্ধ ঘোষনা করা হচ্ছেনা কেনো? এ ব্যাপারে ওয়াকিফহালরা জানেন, স্কুলতো বন্ধ ঘোষনা করতেই হবে। কিন্তু দেশের অর্থনীতির অধোগতি ঠেকাতে এটি ছিল সরকারের একটি চেষ্টা মাত্র।
অস্ট্রেলিয়ার তিন মিলিয়ন ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ে। এর অর্ধেকের বেশি বাবা-মা কাজের বাজারের সঙ্গে যুক্ত। স্কুল বন্ধ করে দিলে বাবা-মা এমন যে কোন একজনকে ছেলেমেয়েকে দেখাশুনা করতে কাজ থেকে ছুটি নিতে হবে। এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়ার আইনে ১৮ বছরের কম বয়সী কোন ছেলেমেয়েকে আনএটেন্ডেন্ট অবস্থায় রাখা যায় না। এরজন্য সাধারন স্কুল হলিডের সময়ও বাবা-মা যে কোন একজনকে কাজ থেকে ছুটি নিতে হয়। কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে স্কুল বন্ধ ঘোষনা করতেই হবে। এরজন্যে বলা হচ্ছে সরকার ধীরে ধীরে লকডাউনের দিকেই যাচ্ছে। জনমনে ভীতি যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্যে একেকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে ধীরেসুস্থে। সূত্রগুলোর ধারনা সরকার ধীরে ধীরে ছয় মাসের লকডাউনের প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে। এরজন্যে দেশের জাতীয় এয়ারলাইন্স কোয়ান্টাসের সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে ছয় মাসের জন্যে। নাগরিকদের জন্যে বলা হচ্ছে আগামী ছয়মাস যেন তারা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেশের বাইরে না যান। উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়ার কোন স্থল সীমান্ত নেই। আকাশ পথই এদেশে বৈধভাবে আসার মাধ্যম। বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার আকাশ সীমান্ত। এই সময়ে বাইরের কেউ আর অস্ট্রেলিয়ায় আসতে পারবেননা। বাইরে থাকা অস্ট্রেলিয়ানরাই শুধু ফিরতে পারবেন দেশে। কিন্তু এসেই সবাইকে থাকতে হবে ১৪ দিনের হোম কোয়ারিন্টানে।
সাধারন সময়ে মে মাসে অস্ট্রেলিয়ার বাজেট ঘোষনা করা হয়। কিন্তু শুক্রবার রাজ্য সরকারগুলোর প্রিমিয়ারদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, এবার বাজেট দেয়া হবে অক্টোবরে। রাজ্য সরকারগুলোও বাজেট দেরি করে দেবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমন নিয়ে ভীতি আতঙ্কের মধ্যে ভীতি এড়ানোর নানা চেষ্টা তদবির করেও ভীতি কাটানো যাচ্ছে কী? এদেশের সুপারমার্কেটগুলোর দিকে তাকালে তা বলা যাবেনা। সুপারমার্কেটগুলোয় আগে শুধু টয়লেট টিস্যুর রেক খালি হতো। এখন অন্য খাদ্য সামগ্রীর রেকও খালি হচ্ছে। এমন দৃশ্য অস্ট্রেলিয়ায় আগে কেউ দেখেনি। প্যানিক বায়িং সামাল দিতে কোন কোন এলাকায় পুলিশের প্যানিক পেট্রোল। অস্ট্রেলিয়ার সুপার মার্কেটগুলোতে প্যানিক বায়িং’এর কারনে রেক খালি হলেও কিন্তু কোন পণ্যের দাম বাড়েনি। দাম বেড়েছে বাংলাদেশি দোকানগুলোয়! এরা বলছে চাল সহ বাংলাদেশি-ভারতীয় পন্যের সরবরাহ সমস্যায় দাম বেড়েছে। খদ্দেরদের কেউ কেউ এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে বলছেন, এসব বাংলাদেশি বুদ্ধি। অস্ট্রেলিয়ান সুপার মার্কেট এসোসিয়েশন বলছে সুপারমার্কেটের পন্যের সংকট আগামী সপ্তাহ নাগাদ নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে। দেশে কোন পন্যের সরবরাহে সংকট নেই। সংকট সামাল দিতে দেশের পেনশনার ও স্বল্প আয়ের মানুষজনকে সরকারি এককালীন বরাদ্দ ৭৫০ ডলার সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক একাউন্টে ঢুকবে মার্চের শেষে। সরকার বলেছে তারা এমন আরও ভাতার পরিকল্পনা করছে।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা