অনলাইন ডেস্ক
চলমান সাধারণ ছুটিতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলো দুঃস্থ বা অসহায় নয়, বরং পরিস্থিতির শিকার। দুর্দিনে এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে অভিনব কায়দা অবলম্বন করছেন সমাজকর্মী পারভেজ হাসান। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ব্যাগ ভরে মানুষের ঘরের সামনে রেখে চলে আসছেন। যার যেটুকু প্রয়োজন সে সেটুকু নিয়ে নিচ্ছে। এ পদ্ধতিতে সাভারের হাজারের বেশি পরিবারের খাবারের প্রয়োজন মেটাচ্ছে পারভেজের ‘সহমর্মিতা ফাউন্ডেশন’।
জরুরি খাদ্য প্রয়োজনে রাখা হয়েছে হেল্পলাইন সুবিধা, প্রকাশ করা হচ্ছে না খাদ্যসামগ্রী গ্রহণকারীর নাম বা পরিচয়। দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বেশিরভাগ মানুষ। বিশেষ করে দৈনিক উপার্জনে জীবিকা নির্বাহ করা লোকেরা পড়েছেন বেশি বিপাকে। নিম্নবিত্ত ও দিনমজুরদের পাশাপাশি বিপাকে আছেন মধ্যবিত্তরাও।
পারভেজ জানান, দরিদ্রদের জন্য সরকারসহ নানা মহলের নানা উদ্যোগ রয়েছে। তারা চাইলে হাত পাততে পারেন। কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ‘বুক ফাটে কিন্তু মুখ ফোটে না’। চক্ষুলজ্জায় যারা চাইতে পারেন না, পরিস্থিতির শিকার এমন মানুষের জন্য তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
পারভেজ বলেন, ‘সরকার দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর জন্য একটা বরাদ্দ রেখেছে। তা ছাড়াও সরকার কথা দিয়েছে সবার পাশে থাকার। কিন্তু আপনি যদি একটু গভীর ভাবে চিন্তা করেন, দেখবেন। একজন গরিব মানুষ বা যিনি সবসময় চেয়ে খান। উনি কিন্তু যে কোন পরিস্থিতিতে সবার কাছে হাত পাততে পারেন। কিন্তু একজন মধ্যবিত্ত কোনো অবস্থাতেই তার খারাপ সিচুয়েশন কাউকে জানতে দিতে রাজি হয় না। কারণ তাদের ক্ষুধার ভয়ের থেকে চক্ষুলজ্জার ভয় বেশি থাকে। তাই আমরা সহমর্মিতা ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে একটা হেল্পলাইন রেখেছি। ০১৬২৮০১৬৩৮৫ এই নাম্বারে কল দিলে তার পরিচয় গোপন করে খাবার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিচ্ছি।‘ অনেকেই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে গিয়ে ছবি তোলা ও ভিডিও চিত্র ধারণকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। যা বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্র।
এক্ষেত্রে ভিন্ন পারভেজ। যাদেরকে খাবার দেয়া হচ্ছে, তাদের ছবি তো অনেক পরের বিষয়, তাদেরও পরিচয়ও প্রকাশ করতে চান না এই সমাজকর্মী। বর্তমানে মানুষের পাশে থাকাটাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন পারভেজ। বলেন, ‘আমি সবসময়ই চেষ্টা করি অসহায় মানুষের প্রয়োজন এবং পরিস্থিতি বুঝে তার পাশে থাকার। কারণ আমার বিশ্বাস প্রয়োজন এবং খারাপ পরিস্থিতি মানুষকে অসহায় করে তোলে।‘
দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের এই দুঃসময়ে আপনারা চাইলেই দেশের মানুষের কল্যাণে দারুণ ভূমিকা রাখতে পারেন। জাতি তার দুঃসময়ের বন্ধুদের প্রতি সবসময়ই কৃতজ্ঞ থাকবে।‘ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটলেও অনেকেই এখনো এ বিষয়ে উদাসীন। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাচল করতে বলা হলেও তারা তা মানছেন না।
জনগণের উদ্দ্যেশে পারভেজ আহ্বান জানান, ‘আপনি কতটুকু শিক্ষিত বা কতটুকু অজ্ঞ তার সম্পূর্ণ বহন করে আপনার আশেপাশের সময়ের বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করা। যেহেতু আমাদের এবং পুরো পৃথিবীর সময়টা এখন খারাপ যাছে তাই এই পরিস্থিতিতে সঠিক নিয়ম মেনে বাসায় থাকা। খুব প্রয়োজন না পরলে বাসা থেকে না বেরোনো, আর বের হওয়ার প্রয়োজন পড়লেও প্রয়োজনীয় প্রটেকশন নিয়ে বের হওয়া। সেখানে সেখানে থুথু না ফেলা এবং সাবধানতা অবলম্বন করা। কারণ আমরা নিজেরা ভালো থাকলে, ভালো থাকবে দেশে এবং দেশের মানুষ।‘
বর্তমানে সাভার সহ দেশের চারটি জেলায় পারভেজের নেতৃত্বে এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যা রাজধানী সহ দেশের অন্যান্য জেলাতেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে শুরু করা হবে বলে জানান পারভেজ হাসান। ২০১৯ সালে ১৭ জুলাই রাজধানীর শুক্রাবাদে এক শিশু তার অসুস্থ মায়ের মাথায় পানি ঢালছিল। হাসপাতালে নেয়ার মতো পরিস্থিতি না থাকায় অবুঝ শিশু তার সাধ্যমতো মায়ের সেবা করছে। হতদরিদ্র সে মা’কের পাশে দাঁড়ান পারভেজ হাসান। হাসপাতালে নিয়ে যান, চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলেন। এ ঘটনাটি এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালে পরিণত হয়। প্রশংসা কুড়ান পারভেজ। চলে আসেন আলোচনায়। এরপর শুক্রাবাদের ফুটওভার ব্রিজের নিচে বসবাসকারী পরিবারটিকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ঘর-বাড়ি ও আয়ের ব্যবস্থা করতে ভূমিকা রাখেন এই পারভেজ। এরপরেও চলছে তার মানবিক নানা কার্যক্রম।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা