ব্যাংকগুলোতে চলছে তারল্য সংকট। ঋণ ও আমানত (এডিআর) অনুপাত বেশি থাকায় অনেক ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার মতো অর্থও নেই। এতে তলানিতে নেমেছে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি। গত মে পর্যন্ত বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২.১৬ শতাংশ। জুন পর্যন্ত বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১২ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলোর এডিআর সমন্বয়ের চাপ থাকবে। ফলে আগামী ছয় মাস বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ খুব একটা বাড়বে বলে মনে করেন না বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এ জন্য বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
গতকাল সোমবার চলতি অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে এক মতবিনিময়সভায় এমন মতামত উঠে আসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ব্যাংকের সব বিভাগের মহাব্যবস্থাপক, নির্বাহী পরিচালক, উপদেষ্টা ও ডেপুটি গভর্নররা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানিয়েছে, এ মাসের শেষ সপ্তাহে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গভর্নর ফজলে কবির।
জানা যায়, নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়নের আগে এবারও সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহে রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে এসংক্রান্ত মতবিনিময়সভা আয়োজনের কথা ভাবা হচ্ছে। ওই সভায় দেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, গভর্নর, ব্যাংকার, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের মতামত নেওয়া হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন গভর্নর ফজলে কবির।
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, বিলাসী লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে সেটির কাছাকাছিও যদি যাওয়া না যায় তবে সেটার গুরুত্ব থাকে না। তাই প্রকৃত যে অর্জন করা সম্ভব সেই পরিমাণ বেসরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়ার মতামত এসেছে। তবে এটা প্রাথমিক আলোচনা। এটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়ার পরই মুদ্রানীতির লক্ষ্য ঠিক করা হবে।
জানা যায়, বৈঠকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দেওয়ার মতামত দেওয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি ঋণপ্রবাহ কমিয়ে ধরলে সরকার প্রক্ষেপিত হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাধাগ্রস্ত হবে কি না সে বিষয়ে যুক্তি দিয়েছেন কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, চলতি মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সাড়ে ১৬ শতাংশ। কিন্তু প্রকৃত অর্জন ১৩ শতাংশেরও কম হবে। এই ১৩ শতাংশ বেসরকারি ঋণের জোগান দিয়ে এবার ৮ শতাংশের ওপর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হচ্ছে। তাই নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৩-১৪ শতাংশের মধ্যে রাখলেও ৮ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব বলে মত দেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে তাঁরা বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ কমলেও সরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। কারণ দেশে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলসহ বড় বড় যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং সেখানে বিশাল কর্মযজ্ঞ হচ্ছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কাঙ্ক্ষিত জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাজারে মুদ্রা ও ঋণ সরবরাহ সম্পর্কে একটি আগাম ধারণা দিতে প্রতি ছয় মাসের জন্য আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রথমবার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৮.১৩ শতাংশ। বাজেটে এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭.৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮.২ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ।
NB:This post is copied from kalerkantho
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা