দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এখনও ৩ কোটি ৫৫ লক্ষ এবং এদের মধ্যে অতি দরিদ্রের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এ সকল জনগোষ্ঠী প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য পায় না। দেশে এখন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। গত দশ বছরে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৭ লক্ষ। খাদ্য অধিকার আইন প্রণীত হলে এসব মানুষের জন্য ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পথে আরো এগিয়ে যাবে।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘জন-যুব জমায়েত ও আলোচনা’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা এসব কথা বলেন। বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ওয়ার্ল্ড ভিশন-এর সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ এ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
সভায় বক্তারা বলেন, দেশের উন্নয়ন লক্ষ্য অনুযায়ী মধ্য আয়ের দেশ, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করা এবং এসডিজির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সকল দরিদ্র এবং অতিদরিদ্রদের খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ ও ‘পিকেএসএফ’-এর চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ সবাইকে খাদ্য আইন প্রণয়নের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সকল উদ্যোগের লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষ। আমাদের প্রস্তাবিত আইনের লক্ষ্যও তাই। সরকারও নিশ্চয়ই এক্ষেত্রে এগিয়ে আসবেন। যুব-তরুণরা আগামীতে এ আন্দোলনে ভবিষ্যতে আরো সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সংসদে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বা কোনো সংসদ সদস্য বেসরকারি বিল হিসেবে তা তুলে ধরতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রীর নীতিগত সম্মতিকে সম্মান জানিয়ে নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে একটি খসড়া প্রদান করলে তা আমি সংসদে উপস্থাপন করব। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এটি হতে পারে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, খাদ্য অধিকার আইন একটি ন্যায্য দাবি। দক্ষিণ এশিয়ায় ইতিমধ্যে ভারত ও নেপাল এ আইন প্রণয়ন করেছে। ধান উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও এর যথাযথ বিতরণ ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে। শর্করার বাইরে আমিষসহ অন্যান্য খাদ্য উপাদান গ্রহণে এদেশের মানুষ এখনও পিছিয়ে। তাই মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার ব্যাপারে রাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপ করতেই হবে। নাহলে অনিরাপদ ও ভেজাল খাদ্যের বিস্তার রোধ করা যাবে না।
বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, খাদ্যের অপচয় অন্য মানুষকে বঞ্চিত করে। বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে খাদ্য অধিকারের মতো একটি মানবিক আইন দেশকে একটি অনন্য মর্যাদায় উত্তীর্ণ করবে।
খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, যুব সমাজের পাশাপাশি সকল শ্রেণী ও পেশার নারী-পুরুষ এবং নাগরিকদের অংশগ্রহণে খাদ্য অধিকার আন্দোলন আরও বেগবান হবে। একইসাথে নীতি-নির্ধারক, প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমর্থন ও সহায়তা ‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়ন উদ্যোগ ও বাস্তবায়নের সাফল্য লাভে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
‘ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবার জন্য পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য চাই, খাদ্য অধিকার আইন চাই’ স্লোগানকে সামনে রেখে বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজকরা আলোচনা সভা শেষে একটি র্যালীর আয়োজন করেছে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা