কিন্তু নাটকের শেষে, সব শিল্পীর হাতে হাত রেখে অঞ্জন যখন নুয়ে অভিবাদন নিলেন, সেই মুহূর্তে হলভর্তি দর্শক যখন দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানালেন অঞ্জনকে, আরও একবার কাঁদলেন তিনি। এ কান্নায় কোনো খাদ নেই। এই কান্না আবেগের! সেলসম্যান লোম্যানের গল্পটা নাট্যকার আর্থার মিলার নির্মাণ করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থনীতির পাগলা ঘোড়ায় ছুটতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সেই আমেরিকান ড্রিম-এর সময়টায়। টাকা উড়ছে, শুধু ধরতে জানতে হবে। ছাপোষা মধ্যবিত্তের জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল উইলি। বেছে নিয়েছিল সেলসম্যানের জীবন। নিজের তারুণ্যের সবটা সে ঢেলে দিয়েছিল সেই স্বপ্নের মধ্যে। জীবনের শেষ অঙ্কে এসে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা উইলি হিসাব মেলাতে পারছে না। ৩০ কিংবা ৩৫ বছর ধরে বাড়ির মর্টগেজের কিস্তি দিতে দিতেও শেষ পর্যন্ত একটা কিস্তি বকেয়াই থেকে যায়। দুই ছেলে বিফ আর হ্যাপির কেউই পায়ের নিচে মাটি পায়নি। এই সময়ে চাকরি হারানো! কিন্তু উইলি কিছুতেই তার তিলে তিলে গড়া সংসার এভাবে ভেঙে যেতে দেবে না। কিছুতেই না। বলতে না–বলতেই তার সংসারে খ্যাপা ষাঁড়ের মতো ঢুকে পড়ে অনেকে। কেউ ফুলদানি আছড়ে ভাঙে, কেউ ছুড়ে ফেলে দেয় চেয়ার। সেই ঝড় থেমে গেলে বুড়ো উইলি জীবনের শেষ শক্তি দিয়ে ঠেলে ঠেলে এলোমেলো চেয়ারগুলো আবার সাজায়। শরীর আর চলতে চায় না। তবু এই তছনছ হয়ে থাকা ঘরটা আবার না সাজানো পর্যন্ত উইলির শান্তি নেই। এই গল্প নিয়ে কাল দুবার দর্শকের সামনে হাজির হয়েছিলেন অঞ্জন। ৬৬ বছর বয়সে অঞ্জন মঞ্চ অভিনেতা হিসেবে প্রথমবার বাংলাদেশে এলেন। কাল দুবারই নাটক শুরুর আগে গেয়ে শুনিয়েছেন। গানের ফাঁকেই বলেছেন, ‘গায়ক আমি হতে চাইনি, আমি তো অভিনেতাই হতে চেয়েছিলাম।’ বাংলাদেশে আসার আগে বলেছিলেন, ‘অভিনেতা হিসেবে এই প্রথম আপনাদের সামনে হাজির হতে চলেছি, জানি না, অভিনেতা হিসেবে আবার হাজির হতে পারব কি না।’ অঞ্জন যদি না–ও পারেন, এই একবারের স্মৃতিটাই তাঁর ভক্তেরা আজীবন মনে রাখবেন। ছাপাখানার ভূতের আয়োজনে মঞ্চনাটক সেলসম্যানের সংসার-এ অঞ্জন নির্দেশনাও দিয়েছেন। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুপ্রভাত দাশ, সুদীপা বোস, অনির্বাণ চক্রবর্তী, উষ্ণক বসু, বর্ণা রাহা, অভিরূপ চট্টোপাধ্যায়, সুহর্ত মুখোপাধ্যায়। NB:This post is copied from prothomalo