মো. আলী আশরাফ খান : পবিত্র কুরআন ও হাদিসে লবণ প্রসঙ্গ
কুরআনে লবণ :
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয় আকাশ-জমিন সৃষ্টি ও রাতদিন বিবর্তনের মাঝে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত :১৯০)।
লবণের মূল উৎস হল সমুদ্রের পানি। সমুদ্রের পানি থেকেই যে লবণ উৎপাদিত হয়, এসম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে কারীমে ইঙ্গিত করেছেন।
সমুদ্রের মাঝেও রয়েছে আল্লাহর অগণিত নেয়ামত আর আশ্চর্য সব নিদর্শন। তেমনি একটি মহা কুদরতি নিদর্শন হচ্ছে দুই সমুদ্রের সংযোগ। দুই সমুদ্রের পানি পরস্পর সম্মিলিত হয়েছে কিন্তু কী আশ্চর্য তা একাকার হয়ে মিশে যায়নি। একটি আরেকটি থেকে সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছে। উভয়ের মাঝে আছে অলঙ্ঘনীয় প্রাচীর।
আল্লাহ তা’আলার এ কুদরতি নিদর্শন বর্ণনা প্রসঙ্গে এরশাদ হয়েছে, “তিনিই দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেছেন সমান্তরাল করে। একটি সুমিষ্ট ও তৃষ্ণা নিবারক এবং অন্যটি লবণাক্ত ও বিস্বাদ। আর উভয়ের মাঝে রেখেছেন এক অন্তরাল ও দুর্ভেদ্য প্রাচীর।” (সূরা ফুরকান, আয়াত : ৫৩)।
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, “তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন। উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরায় (প্রাচীর) যা তারা অতিক্রম করে না।” (সূরা আর রহমান : আয়াত ১৯-২০)।
কুরআনে বর্ণিত এ কুদরতি নিদর্শন যুগে যুগে প্রমাণিত হয়েছে। আধুনিককালে Marine Science বা Oceanology তথা সমুদ্রবিজ্ঞান এর প্রমাণ পেয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন সমুদ্রে এর বাস্তব চিত্র দেখা গেছে। আটলান্টিক মহাসাগরকে ভূমধ্যসাগরের পানির সঙ্গে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। কিন্তু উভয়ের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।
ভূমধ্যসাগরের পানি অধিক লবণাক্ত, বিস্বাদ ও ঘন। ভূমধ্যসাগরের পানি জিব্রাল্টার সেল বা সাগরের তলের উঁচু ভূমির ওপর দিয়ে আটলান্টিক সাগরের ভেতরে শতাধিক কিলোমিটার প্রবেশ করেছে এবং তা এক হাজার মিটার গভীরে পৌঁছার পরও তার উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যে সামান্য পরিবর্তন হয়নি। অথচ উভয়ের মাঝে রয়েছে প্রবল খরস্রোত ও উত্তাল তরঙ্গ। কিন্তু পানি মিশছে না। যেন উভয়ের মাঝে পর্দা পড়ে আছে।
এ অন্তরায় বর্ণনা প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এসেছে, “বল কে দুই সমুদ্রের মাঝে অন্তরায় রেখেছেন? সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে কি কোনো উপাস্য আছে? মূলত তাদের অধিকাংশই জানে না।” (সূরা নামল, আয়াত : ৬১)।
হাদিসে লবণ :
হাদিসেও লবণের বর্ণনা এসেছে। কখনো লবণের ঔষধি গুণ বর্ণনা করা হয়েছে। কখনো উদাহরণ পেশ করার জন্য হাদিসে লবণের আলোচনা এসেছে। এক হাদিসে এরশাদ হয়েছে, হযরত সা’দ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে কেউ মদিনাবাসীদের ওপর আগ্রাসী হয়ে আসবে সে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, যেমনিভাবে লবণ পানিতে মিশলে নিঃঅস্তিত্ব হয়ে যায়। বুখারি, ১৮৭৭।
হুবহু একই আলোচনা ভিন্ন শব্দে মুসলিম শরিফের ১৩৮৬ নং হাদিসের বর্ণনায়ও এসেছে।
অপর এক হাদিসে এসেছে, ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযূর সা.তাঁর অন্তিম অসুস্থতার সময়ে একদিন বের হলেন, মেম্বারের ওপরে গিয়ে বসলেন, আল্লাহ তায়ালার হামদ ও সানা বর্ণনা করলেন, অতঃপর বললেন, একসময় এমন আসবে যখন মানুষ অধিক হবে, অথচ দ্বিনের সাহায্যকারী এতো পরিমাণ কমে যাবে, খাবারের মধ্যে লবণ যত পরিমাণ থাকে। বুখারি, ৩৬২৮।
# লেখক, মহাব্যবস্থাপক (অবসরপ্রাপ্ত), বিসিক।
ফেসবুক :
চলবে …
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা