সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস (৭২৪ নম্বর) ক্রসিং এর জন্য লুপ লাইনে প্রবেশের সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তুর্ণা-নিশীথা এক্সপ্রেস (৭৪১ নম্বর) উদয়ন এক্সপ্রেসকে সজোরে ধাক্কা দেয়। ফলে মর্মান্তিক এ ট্রেন দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়।
বুধবার (২০ নভেম্বর) রেল মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেল স্টেশন এলাকায় সংঘটিত দুর্ঘটনার কারণ এবং দায়ী কারা এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের রিপাের্ট প্রকাশকালে রেলপথ মন্ত্রী মো: নূরুল ইসলাম সুজন একথা বলেন।
তদন্ত কমিটিগুলোর রিপোর্ট মোতাবেক দেখা যায় যে, আন্ত:নগর ৭৪১ নম্বর তুর্ণা-নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার এবং গার্ড সিগন্যালসমূহ যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ না করে ট্রেন পরিচালনার কারণে এ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়।
এমতাবস্থায়, সিগন্যাল অমান্য করায় সংঘটিত এ দুর্ঘটনার জন্য কমিটিগুলো তুর্ণা-নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকোমাস্টার তাছের উদ্দিন, সহকারী লোকোমাস্টার অপু দে এবং গার্ড মোঃ আব্দুর রহমান-কে দায়ী করা হয়।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, রেল পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, রেলওয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ, বিজিবিসহ সকল সরকারী সংস্থা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং জনসাধারণের সহযোগিতায় উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা হয়। আমি ঘটনা জানার সাথে সাথে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সর্বনিম্ন সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। আহতদের সর্বোচ্চ সুচিকিৎসার নির্দেশনা দেই । ন্যুনতম আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে নিহত ১৫ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করি। পরবর্তীতে ঢাকার সিএমএইচে একজন এবং সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন মোট দুইজন চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান।
রেলপথ মন্ত্রী উল্লেখ করেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবার প্রতি ২৫ হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে আমরা রেলপথ মন্ত্রণালয় হতে নিহতদের পরিবার প্রতি ১ লক্ষ টাকা এবং আহতদের পরিবার প্রতি ১০ হাজার টাকা সাহায্য ঘোষণা করি। আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের সরকারী আধুনিক হাসপাতালে রোগীদের ভর্তির ব্যবস্থা করি। শুধু তাই নয়, আমরা প্রতিনিয়ত আহতদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, ঘটনার পর পরই ঘটনাটি তদন্তের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় হতে একটি, বাংলাদেশ রেলওয়ে হতে দুইটি এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসনের পক্ষে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে তিনটি কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
তিনটি কমিটিই তদন্ত করে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। কমিটিগুলো ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তা প্রায় একই রকম।
আরও পড়ুন: এবার ভোলা রুটেও দিনের বেলায় জাহাজ চালু করছে গ্রীন লাইন পরিবহন
উল্লেখ্য যে, কমিটিগুলো ভবিষ্যতে এ ধরণের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য নিম্নোক্ত সুপারিশসমূহ পেশ করেছে।সেগুলো হচ্ছে – ট্রেনের লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার এবং গার্ডদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকির জন্য লোকোমোটিভে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা। ট্রেনের অপারেশনের সাথে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ, ট্রেনের অপারেশনের সাথে যুক্ত কর্মচারীদের শূন্য পদ পূরণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, স্টেশন এবং ট্রেনের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য ক্লোজ ইউজার গ্রুপের মোবাইল ফোন অথবা আধুনিক অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা এবং বাংলাদেশ রেলওয়েতে এটিএস (Automatic train stop) সিস্টেম প্রবর্তন করার ব্যবস্থা নেয়া।
মন্ত্রী বলেন, আশা করি, এসকল সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।
এ সময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মোফাজ্জেল হোসেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো: শামছুজ্জামান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, অপারেশন সহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
ফেসবুক পেজ :
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা