ঝিনাইদহ পৌরসভার পাবলিক পার্কের (শিশুপার্ক) মাঠে বহুতল ভবন নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এটি পাবলিক পার্কের শ্রেণি অপরিবর্তিত রেখে সংরক্ষণ ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া পাবলিক পার্কের জায়গায় নির্মাণ কাজকে কেনো বিবাদীদের ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে বেলার পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ কবীর।
ঝিনাইদহ পৌরসভার পার্কটি এলাকার শিশু-কিশোর-বয়োবৃদ্ধদের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। জাতীয় দিবসসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি এ পার্কেই পালিত হয়ে থাকে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার ব্যক্তি পার্কে ভ্রমণ করে থাকেন।
সম্প্রতি ঝিনাইদহ পৌরসভা শিশু পার্কটির শ্রেণি পরিবর্তন করে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে পার্কে বিদ্যমান শিশুদের খেলার সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বুলডোজার দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে গাছ। মাটি ভরাট করা হয়েছে এবং পাইলিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে।
পাবলিক পার্কটি (শিশুপার্ক) রক্ষার দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করে প্রতিকার না পেয়ে এলাকাবাসী বেলা বরাবর আইনগত সহায়তা চেয়ে আবেদন করলে বেলা রিট আবেদনটি দায়ের করে।
আরও পড়ুন : নুনের সাতকাহন – ৯
ঝিনাইদহ শহরের একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইংরেজ আমলে পার্কের জায়গাটি ছিল জেমস চুইডি নামের এক ব্রিটিশ নাগরিকের। সেখানে তিনটি খেলার মাঠ ছিল।
দেশভাগের পর জমিটি সরকারের অধীনে আসে। এরপর ১৯৬১ সালে দুই একর ১৮ শতাংশ জমির ওপর পার্কটি গড়ে ওঠে। শহরের প্রাণকেন্দ্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়কে এই পার্ক স্থাপন করেন তত্কালীন ঝিনাইদহ মহকুমা কর্মকর্তা কে এম রব্বানী।
পরবর্তী সময়ে ঝিনাইদহ ডেভেলপমেন্ট কমিটির পক্ষে সভাপতি কে এম রব্বানী ১৯৬৩ সালে ঝিনাইদহ টাউন কমিটিকে এ পার্কের উন্নয়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব দেন। বেশ কিছু লিখিত শর্তে ঝিনাইদহ টাউন কমিটির চেয়ারম্যান এস এম মতলুবুর রহমান সেই সময় দায়িত্ব গ্রহণ করায় পার্কের নামে জমি দলিল করে দেওয়া হয়।
শর্তগুলোর একটি হলো- এই সম্পত্তি ঝিনাইদহ টাউন কমিটি বা স্থলাভিষিক্তরা শুধু পার্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। পার্কের জন্য ক্ষতিকারক কোনো কাজ করতে পারবেন না। পার্কের উন্নয়ন ছাড়া কোনো পাকা স্থাপনা করা যাবে না।
এই সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তর করা যাবে না। শর্ত খেলাপ করলে দ্বিতীয় পক্ষের কাছ থেকে প্রথম পক্ষ সম্পত্তি দখলে নিতে পারবে, অর্থাৎ জমিদাতা জমি ফেরত নিতে পারবেন।
কিন্তু পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সব শর্ত উপেক্ষা করে এই পার্কের স্থানে বাণিজ্যিক ভবন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে একটি ১০ তলা মার্কেট কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। এ কারণে পার্কে স্থাপন করা শিশুদের খেলাধুলার সব সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বুলডোজার দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে গাছপালা। মাটি ভরাট করা হয়েছে। এখন ভবন তৈরির জন্য পাইলিংয়ের কাজ চলছে। পৌরসভার এমন উদ্যোগে নাগরিকরা ক্ষুব্ধ। পার্কের স্থানে বাণিজ্যিক ভবন তৈরির বিষয়টি তারা মেনে নিতে পারছে না।
ফেসবুক :
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা