অনলাইন ডেস্ক
অনেক প্রত্যাশা নিয়ে প্রিয় সঙ্গীকে নিলামে তুলেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। শেষ পর্যন্ত যত বড় টাকার অঙ্ক মিলল, তার ছিল আশাতীত।
মাশরাফির ১৮ বছরের সঙ্গী ব্রেসলেট নিলামে বিক্রি হয়েছে ৪২ লাখ টাকায়। ব্রেসলেট কিনে নিয়েছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিএলএফসিএ। নিলামের সর্বোচ্চ দর ছিল ৪০ লাখ টাকা। তবে আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি নিলামের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাড়িয়ে দিয়েছে আরও ৫ ভাগ। তাতে চূড়ান্ত মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪২ লাখ টাকা।
নিলামের পর মাশরাফি জানালেন, এত মূল্য পাওয়া তার নিজেরও ধারণার বাইরে ছিল।
“অসম্ভব ভালো লাগছে, অসম্ভব ভালো লাগছে। এই জিনিসটিই আমার জন্য অনেক ইমোশনাল। আমার আশাও ছিল না এত বেশি হবে। যে সম্মান আমাকে দেখানো হয়েছে, এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা।”
আগেই মাশরাফি ঘোষণা করেছিলেন, নিলাম থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে তার ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগে সহায়তা করা হবে অসহায় মানুষদের। কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি তার এলাকায় ব্যাপক সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। পাশাপাশি সহায়তা করেছেন ক্রিকেটাঙ্গনের অনেককেও। ব্রেসলেটের নিলাম থেকে পাওয়া অর্থ কিভাবে কাজে লাগাবেন, সেটির একটি ধারণাও তিনি দিলেন।
“এখনও আসলে বিস্তারিত পরিকল্পনার সুযোগ পাইনি। তবে ইচ্ছা আছে, নড়াইলের বাইরেও সহায়তা করার চেষ্টা করব। দেশজুড়ে অনেক সংস্থা খুব ভালো কাজ করে চলেছে। তাদেরকে যদি কিছু হেল্প করা যায…আর নড়াইলের জন্যই রাখতে হবে। নড়াইল অনেক দরিদ্র এলাকা, অনেক কিছু করার বাকি আছে। ওখানেই বেশির ভাগটা করতে হবে।”
“নিলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ। এটির মূল উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে যেন ভালো রাখতে পারি। যে অর্থ এসেছে, চেষ্টা করব যত বেশি মানুষকে সম্ভব ভালো রাখার।”
এই নিলামের আরেকটি অনন্য দিক হল, নিলামে বিক্রি হলেও ব্রেসলেট থাকবে হাতেই। বিএলএফসিএর চেয়ারম্যান মমিন উল ইসলাম জানিয়েছেন, এই ব্রেসলেট কিনে নিয়ে তারা আবার মাশরাফিকেই উপহার দিতে চান।
দেড় যুগ আগে কাছের এক বন্ধুর মামাকে দিয়ে মাশরাফি বানিয়ে নিয়েছিলেন এই ব্রেসলেট। এরপর এই দীর্ঘ সময়ে ব্রেসলেটটি হাত থেকে খুলেছেন খুব কম সময়ের জন্য। নিলামে তোলার সময় তিনি বলেছিলেন, এই ব্রেসলেট তার জীবনের কতটা জুড়ে আছে।
“গত ১৮ বছরে খুব কম সময়ই এটি খুলেছি হাত থেকে। অপারেশনের সময়, এমআরআই করানোর সময় খুলতে হয়েছে। আর কয়েকটি ম্যাচ বা কিছু সময়ের জন্য খুলেছি শুধু। তবে যখনই খুলেছি, কখনোই স্বস্তি বোধ করিনি। মনে হতো, কী যেন নেই, খালি খালি লাগত। আমার সবসময়ই মনে হয়েছে, এটি আমার সৌভাগ্যের প্রতীক।”
“আমার ক্যারিয়ারের সব উত্থান-পতনের স্বাক্ষী এই ব্রেসলেট। যত লড়াই করেছি, মাঠের ভেতরে-বাইরে যত কিছুর ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে, সব কিছুর স্বাক্ষী এটি। আমার ১৮ বছরের সুখ-দুঃখের সাথী। আমার অনেক আবেগ-ভালোবাসা জড়িয়ে এটিতে, এই ব্রেসলেটকে আসলে ব্যাখ্যা করা আমার জন্য খুব কঠিন।”
ব্যাখ্যাতীত ভালোবাসার সম্পদ মাশরাফি হাতছাড়া করেছেন পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করেই। বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে বোলার নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্যও। করোনাভাইরাস দুর্যোগের শুরু থেকেই নিজ এলাকায় ব্যাপক আকারে ত্রাণ ও সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি উদ্ভাবনী সব পদক্ষেপ নিয়ে দারুণ প্রশংসিত হয়েছেন দেশজুড়ে। এছাড়াও ক্রিকেটারদের তহবিলে সহায়তা, ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট আরও অনেক জায়গায়ও করেছেন সহায়তা। নিজ এলাকা থেকে শুরু করে ক্রিকেট আঙিনা, এই সহায়তা কার্যক্রমের বেশির ভাগই মাশরাফি করেছেন নিজের উদ্যোগে ও নিজস্ব অর্থায়নে।
কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, সেটি ভেবেই নিজের দীর্ঘ সময়ের সঙ্গীকে বিসর্জন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাশরাফি। “আমি আমার সাধ্যমতো করার চেষ্টা করেছি। এখনও করছি। কিন্তু সেটিরও তো শেষ আছে, আমার তো অঢেল টাকা নেই। যতটুকু বুঝতে পারছি, এই সঙ্কট অনেক দিন থাকবে। আমার তো মনে হয়, আমাদের জীবদ্দশার সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস চলছে এখন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মনে হয় গোটা বিশ্ব এত বড় সঙ্কটে পড়েনি। আমাদের দেশের বাস্তবতা আরও কঠিন। প্রায় দুই মাস ধরে অনেক কিছু স্থবির হয়ে আছে। নিম্ন আয়ের মানুষ, এমনকি অনেক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারও কষ্টে আছে।”
“আমার তাই মনে হয়েছে, আরও অনেক বড় পরিসরে সহায়তা করতে হবে সামনে এবং অনেক দিন ধরে করতে হবে। কেউই জানি না, কতদিন পরে আমরা মুক্তি পাব। আর করোনাভাইরাস চলে গেলেও কিন্তু আর্থিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে অনেক। এজন্য মনে হয়েছে, আমার সবচেয়ে কাছের কিছু নিলামে তুলে যদি তহবিল সংগ্রহ করা যায়, তাহলে আরও বেশি মানুষকে বেশি দিন ধরে সহায়তা করতে পারব।”
সব মিলিয়ে ভালোবাসা, দেশপ্রেম ও মানবতার এ যেনো এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
fblsk
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা