অনলাইন ডেস্ক
তবে দেশটির কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২৬৫ আসনের মধ্যে ১৭০টিতে জয় পেয়েছে বলে দাবি করেছে দলটি।
এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে পিটিআই সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে বলে শনিবার দলটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর খান ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল শনিবার মাঝরাতের মধ্যে প্রকাশ করা না হলে রোববার পিটিআই দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গহর খান দাবি করেছেন, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ভোটে জাতীয় পরিষদের ২৬৫টি আসনের মধ্যে ১৭০টিতে জিতেছে পিটিআই। শনিবার গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে পিটিআইয়ের এই নেতা বলেছেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত নিশ্চিতভাবে দাবি করছি, পিটিআই এই মুহূর্তে জাতীয় পরিষদের ১৭০টি আসনে এগিয়ে আছে। এর মধ্যে ৯৪টি আসনের ফল ইসিপি স্বীকার করেছে।’’
পিটিআইয়ের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান গহর আলী খান দেশটির সব প্রতিষ্ঠানকে দলটির ম্যান্ডেটের প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়ে ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, শনিবার রাতের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশ না করা হলে রোববার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করবে পিটিআই।
নির্বাচনে পাকিস্তানের সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও নওয়াজ শরিফ পৃথকভাবে বিজয় দাবি করেছেন। ইমরান খান কারাবন্দি রয়েছেন এবং তার দলকে নির্বাচনে বাধা দেওয়া হয়েছে, তা সত্ত্বেও সর্বাধিক আসনে জয় পেয়েছে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
অর্থনৈতিক সংকট আর গভীর রাজনৈতিক মেরুকরণের মাঝে জঙ্গি সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করা পারমাণবিক অস্ত্রধারী দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে বৃহস্পতিবার সাধারণ নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ভোটের ৪২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও দেশটির নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করতে পারেনি।
পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডনের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় পরিষদের ২৬৫টি আসনের মধ্যে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯২টি আসনে জয় পেয়েছেন। আর নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭১টি, বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রার্থীরা ৫৪টি, জামিয়তে উলেমা-ই-ইসলাম (জেইউআই-এফ) ৩টি ও অন্যান্যরা ৩৩টি আসনে জয় পেয়েছেন।
এ ছাড়া একটি আসনে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। ১২টি আসনের ফলাফল ঘোষণা এখনও বাকি আছে। যদিও দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ বলছে, ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা ৯৫টি, পিএমএল-এনের প্রার্থীরা ৭৪টি এবং পিপিপির প্রার্থীরা ৫৪টি আসনে জয় পেয়েছেন। এ ছাড়া এমকিউএম-পি ১৭টি, জেইউআই-এফ ৩টি, পিএমএল ৩টি, আইপিপি ২টি, বিএনপি ২টি, পিএমএল-জেড ১টি, এমডব্লিউএম ১টি, পিএনএপি ১টি, বিএপি ১টি, পিকেএমএপি ১টি এবং এনপি ১টি আসনে জয় পেয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের ২৪৫টি আসনের ফলাফল জানা গেছে। সেখানে দেখা গেছে, ৯৮টি আসনে জয়ী হয়েছেন ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ৬৯টি আসন পেয়েছে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫১টি আসন।
• জোট সরকার গঠনে দৌড়ঝাঁপ
নির্বাচনে ভোটের হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) চেয়ারম্যান নওয়াজ শরিফ ইতিমধ্যে সরকার গঠনের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে জোট গঠনের তৎপরতাও শুরু করেছেন তিনি। পিএমএলএন চাইছে, নতুন জোট গঠিত হলে সেই জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন নওয়াজ শরিফ।
কিন্তু ভোটের হিসেবে তৃতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) জানিয়েছে, নতুন জোটে যেতে তেমন কোনও সমস্যা না থাকলেও নওয়াজ শরিফকে পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি রয়েছে দলটির।
পিপিপির শীর্ষ মুখপাত্র খুরশিদ শাহ জিও নিউজকে বলেছেন, নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হতে চান। এজন্যই জোট গঠনের তৎপরতা চালাচ্ছেন… জোট সরকারের অংশ হতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা তাকে (নওয়াজ) প্রধানমন্ত্রীর পদে দেখতে চাই না। আমরা চাই, পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন আমাদের দলের চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।’
• ১৪ মামলায় জামিন ইমরানের
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ১৪ মামলায় জামিন দিয়েছেন ইসলামাবাদের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আদালত (এটিসি)। শনিবার ইসলামাবাদ এটিসির বিচারক মালিক ইজাজ আসিফ এক শুনানি শেষে এই রায় দেন। ইমরান খানের পাশাপাশি তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) জ্যেষ্ঠ নেতা শাহ মেহমুদ কুরেশিকেও ১৩ মামলায় জামিন দেওয়া হয়েছে।
যেসব মামলায় ইমরান ও কুরেশি জামিন পেয়েছেন তার সবগুলোই গত বছরের ৯ মে সংঘটিত দাঙ্গার সাথে সংশ্লিষ্ট। ইসলামাবাদ হাই কোর্টে হাজিরা দিতে গিয়ে ওইদিন আদালত চত্বরে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ইমারান খান। তারপর অভূতপূর্ব বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেবার সেনানিবাস ও সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হয়।
• যা বললেন সেনাপ্রধান
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিফ মুনির জাতীয় নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় শনিবার দেশটির নাগরিকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নৈরাজ্য আর মেরুকরণের রাজনীতি থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জাতির এখন ‘‘স্থিতিশীল হাত’’ দরকার।
এই নির্বাচন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির আশ্রয়স্থল যাতে হতে পারে, এক বিবৃতিতে সেই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন আসিফ মুনির।
এদিকে, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। একই সঙ্গে দেশটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সব ধরনের অনিয়মের ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে তারা।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা