পর্ণগ্রাফী ও অপসংস্কৃতি মানুষকে দুধর্ষ,অমানবিক ও ধর্ষক বানায়। সার্ফিং দ্য ন্যাশন নামে এক পশ্চিমা মিশনারী এনজিও পর্ণগ্রাফী ও অপসংস্কৃতি ব্যবহার করে সি-বিচে সার্ফিংয়ের আড়ালে, অর্থ ও বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে পর্দানশীন পরিবারের তরুণদের উগ্র অশালীন ও ধর্ষক বানানোর মিশন নিয়ে কাজ করছে।
ইংরেজিতে একটা কথা আছে, “We become what we eat and see.’ অর্থাৎ ”মানুষ যা খায় বা দেখে,তারা সেভাবেই বেড়ে উঠে।” একইভাবে আমরা যা দেখি এবং শুনি সেগুলো আমাদের চিন্তায়-মননে-মগজে ও মানসিকতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ-মার্কিন সিরিয়াল রেপিস্ট ‘ট্রেড বান্ডি’ ধর্ষনের দায়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিল, “মানসিকভাবে তাকে দুর্ধর্ষ রেপিস্ট হওয়ার পেছনে মূল ভুমিকা রেখেছিল ‘পর্নোগ্রাফি’।
সম্প্রতি ভারতের বিহারের মূখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার বলেছেন-“মহিলাদের ধর্ষর্ণ ও যৌন হেনস্থায় ইন্ধন যোগাচ্ছে পর্ণ সাইটের কুরুচিকর বিষয়বস্তু।” তিনি সব ধরণের পর্ণ সাইট নিষিদ্ধের আবেদন জানিয়েছেন। তিনি ইন্টারনেটে পাওয়া সমস্ত অনুপযুক্ত ও কুরুচিকর বিষয়বস্তুগুলিকে নিয়ন্ত্রণের জোর দাবি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, পর্ণগ্রাফী ও অশ্লিলতার কারণেই ভারত আজ ধর্ষণে বিশ্বে রাজধানীর তকমা পেয়েছে।
”সংশ্লিষ্ট গবেষকদের মতে,একজন রেপিস্ট হঠাৎ করেই রেপিস্ট হয়ে উঠে না। তার রেপিস্ট হওয়ার আগের ধাপগুলো সম্পর্কে এনালিস্টরা বলছেন- প্রথমত সিনেমায় প্রদর্শিত সফট পর্নোগ্রাফিতে নারীকে বস্তুকরণ করা হয়। এরই প্রভাবে সিনেমার দর্শক-শ্রোতা হার্ড পর্নোগ্রাফির দিকে ধাবিত হয়। সেখান থেকে সে কল্পনায় তার আশপাশের বা পরিচিত নারীকে বস্তুকরণ বানিয়ে যৌনচিন্তায় বিভোর হয়। তার এই যৌনচিন্তা তাকে সার্বক্ষণিক তাড়িত করে বেড়ায় নারীসঙ্গ পাবার জন্যে। এরপর বাস্তবে তার এই বিকৃত আকাঙ্খা চূড়ান্ত পর্যায় গিয়ে সে একজন ধর্ষক হয়ে উঠে। যখন দর্শকরা মুভিতে ‘আইটেম সঙ’ দেখে তখন সেই মিউজিক-ভিডিওতে অর্ধ-ঊলঙ্গ নারীর দেহ প্রত্যক্ষ করে। মুভিতে নারীদেরকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, সেই নারীর মধ্যে যেন কোনো মানবিক উপাদান নেই, সে শুধুই একটি মনোরঞ্জনের বস্তু! এরকম দৃশ্য বার বার দেখার পরে মুভির দর্শক বাস্তবে যখন পথে, ঘাটে, হাটে, মাঠে, পার্কে, বাসে ঐরকম ড্রেসে সজ্জিত নারীকে দেখতে পায় তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের সাইকোলজি উক্ত নারীকে একই রকমভাবে মনোরঞ্জনের বস্তু হিসেবে কল্পনা ও গণ্য করা শুরু করে। আর এভাবে আইটেম সঙয়ের পর্ণ দৃশ্যগুলো নারীর মানবিক দিকগুলো কেড়ে নিয়ে তাকে বস্তুকরণে রূপান্তর করে।
আমাদের সমাজে এখন পর্ণোগ্রাফির মহা আসক্তি বিরাজমান। এই পর্ণগ্রাফির কারণে সমাজের সকল শ্রেণীর নারীকে একটি যৌন আকাঙ্ক্ষার বস্তুতে পরিণত করা হয়েছে।ফলে বিবাহিত, অবিবাহিত, বিধবা, শিক্ষিকা, প্রতিবেশি, বান্ধবী, কলিগ, বন্ধুর বউ, ভাবি, এমনকি শিশুও পুরুষের যৌন আকাঙ্ক্ষার দৃষ্টি থেকে নিরাপদ নয়। এভাবেই নারীরা আজ পুরুষের যৌন আকাঙ্ক্ষার দৃষ্টিতে পরিণত হচ্ছে। এর মূল কারণ হলিউড, বলিউড, ঢালিউড, টালিউড ইত্যাদি ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রীগুলোর সফট পর্নোগ্রাফি দৃশ্যায়িত করা। ইন্টার্নেটের পর্ন ইন্ডাস্ট্রি গুলোর মাধ্যমেও হার্ড পর্নোগাফি চিত্রায়িত করা হয়। এগুলোই দুধর্ষ, অশালীন, অমানবিক ও ধর্ষক বানানোর মূল নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখে। ভারতীয় সিরিয়াল ও পশ্চিমা অশালীন সিনেমা প্রদর্শন করে বাংলাদেশের মানুষও ভারতকে অনুসরণ করে চলছে।
উল্লেখ্য গত সাত ডিসেম্বর চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠীত জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,চলচ্চিত্র হতে হবে ব্যক্তি, পরিবার, গোষ্ঠী বা সমাজের শিক্ষনীয় বিষয়ের উপর ভিত্তি করে। ছাত্রজীবনে আমরা এ ধরনেরই চলচ্চিত্র তৈরী হতে দেখেছি। আর এধরনের চলচ্চিত্র তৈরী হলে সিনেমা হল দর্শকশূন্য হবে না। এবং হলগুলো বন্ধ হবে না। তাই সমাজকে পর্ণগ্রাফী ও অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সরকার এবং যারা মুভি ও আইটেম সং বানায় তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেশকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এ কঠিন পরিস্থিতিতে ওলামায়ে কেরাম, ইসলামী রাজনীতির নেতৃবৃন্দ, ইমাম, খতীব ও পীর মাশায়েখগণকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সময়ের দাবী।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা