আজ ৪ এপ্রিল ২০২০। স্বেচ্ছাসেবী গণনারী সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ‘সমতার সংগ্রামে চলি সবাই মিলে একসাথে’ এই শ্লোগানকে সামনে নিয়ে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনের। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে সাংগঠনিকভাবে সকল কর্মসূচি স্থগিত করতে হয়েছে। সারা বিশে^র মতো বাংলাদেশেও এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা সকল দেশবাসীর নিরাপদ ও সুস্থ জীবন কামনা করি।
সমাজে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু করে নারী-পুরুষের সমতার আদর্শ আর অসাম্প্রদায়িক চেতনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ গণনারী সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এদেশের নারী আন্দোলনের পথিকৃত জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামাল, মনোরমা বসু, হেনা দাস, উমরাতুল ফজলসহ কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ের নারী আন্দোলনের সাহসী সংগঠকদের। একই সাথে আমরা স্মরণ করছি মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ লাখো নর-নারীকে যাদের আত্মদানের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
আজকের দিনে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই সমগ্র দেশবাসী, সংগঠনের সকল শুভানুধ্যায়ী সমর্থক, সহযোগী নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন ও ব্যক্তি, গণতন্ত্র ও নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল সংগঠক, কর্র্মী ও সদস্য এবং বাংলাদেশের সমগ্র নারী সমাজকে।
নারীর অধিকার মানবাধিকার,নারী নির্যাতন মানবাধিকার লঙ্ঘন এই গভীর বিশ্বাসকে ধারণ করে এই সংগঠন নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি এ দেশের সকল প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। দেশের জনগণের যে কোনো সংকটে দুর্দিনে, খরা, বন্যায় আর্ত মানবতার ডাকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। অর্জন করেছে সকল স্তরের মানুষের আস্থা। আজকে বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রার যে ধারা সূচিত হয়েছে তা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৃশ্যমান। এর পিছনে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অর্ধ শতকব্যাপী নিরলস ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রাম।
সারাবিশ্বে নারী আন্দোলন বর্তমানে এক নতুন পর্যায়ে উপনীত। একদিকে সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে নারীর অগ্রযাত্রা, অপরদিকে এই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য বিদ্যমান নানা ধরনের অপকৌশল। দেশে দেশে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, পারিবারিক সহিংসতা, জঙ্গিবাদের ভয়াবহ উত্থান, সশস্ত্র সংঘর্ষে হাজারো নারীর জীবনের করুণ পরিণতি, অভিবাসী নারীদের জীবনের বিপর্যস্ততা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব একবিংশ শতাব্দীর অনেক অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ একটি সমতাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক যৌক্তিক অগ্রসর চিন্তার সমাজ গঠনের সংগ্রামে সকলকে অংশগ্রহণের ও ভূমিকা পালনের জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, নারী-পুরুষের সম্মিলিত অভিযাত্রার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে একটি গণতান্ত্রিক সমতাপূর্ণ মানবিক বাংলাদেশ। কাউকে পিছনে ফেলে নয়, একটি শান্তিপূর্ণ মানবিক বিশ্ব গড়ার জন্য সকলকে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় যুক্ত করতে হবে। ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করা সম্ভব বলে আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়। শক্তিশালী নারী আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকল স্তরের নারীর সম্পৃক্ততায় সংগঠনকে শক্তি অর্জন করতে হবে। তরুণ প্রজন্মসহ সুবিধাবঞ্চিত, দলিতনারী, তৃতীয় লিঙ্গ, প্রতিবন্ধী নারী, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল নারীকে সম্পৃক্ত করে সমতার সংগ্রামে সবাই মিলে এক সাথে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলার শপথ হোক ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অঙ্গীকার।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা