ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তিন দিন ব্যাপী ‘২য় আন্তর্জাতিক কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী সম্মেলন ২০১৯’। এবছর সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে অসংক্রামক ব্যাধির নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্ভাবনা”।
প্রতি বছর অসংক্রামক ব্যাধির কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়, যা মোট মৃত্যুর শতকরা ৭১ ভাগ। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বছরে ৩০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী প্রায় দেড় কোটি মানুষের মৃত্যু হয় অসংক্রামক ব্যাধির কারণে; যার ৮৫ ভাগ-এরও বেশি হলো ‘অকালমৃত্যু’ এবং এড়ানো যেত। অসংক্রামক ব্যাধি এসব দেশগুলোতে দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্য সৃষ্টি করে আর্থিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে।
সম্মেলনের অন্যান্য যে প্রতিপাদ্য বিষয় হলো – স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মসূচি, – কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, – শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবিক পরিস্থিতির মতো বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকা, এবং – কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মসূচি এবং অসংক্রামক ব্যাধির প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ।
আইসিডিডিআর,বি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর; ব্র্যাক জেমস পি. গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ (জেপিজিএসপিএইচ) এবং সেভ দ্য চিলড্রেন, বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জানা যায়, বিগত ১০০ বছরে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা সফলভাবে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, টিকাদান, সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, শিক্ষাদান এবং স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত পরামর্শ সেবা দান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁদের এসবের কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশ সংক্রামক ব্যাধি জনিত মৃত্যুহার বিস্ময়কর হরে কমাতে সক্ষম হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রোগের ব্যাপকতা দ্রুত সংক্রামক থেকে অসংক্রামকের দিকে ধাবমান হওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ চিন্তা-ভাবনা করছেন কিভাবে অসংক্রামক ব্যাধি সনাক্তকরণ, রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা এবং রোগ উপশমকারী সেবায় কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে নিয়োজিত করা যায়। বিভিন্ন দৃষ্টান্ত থেকে দেখা গেছে যে, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের অবদানের ফলে জরুরী বিভাগে চিকিৎসা গ্রহীতার সংখ্যা এবং হাসাপাতালে ভর্তির হারও হ্রাস পায়, যার ফলে স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত ব্যয় লাঘব হয়।
বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্ট-এর সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাসসের আলী ‘২য় আন্তর্জাতিক কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী সম্মেলন ২০১৯’-এর উদ্বোধন করেন। তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে টিকাদান, অপরিহার্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং পরিবার পরিকল্পনা প্রসারে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের অবদান অনস্বীকার্য। স্বাস্থ্য খাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ।
আইসিডিডিআর,বি-র হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ ডিভিশনের সায়েন্টিস্ট ও শেয়ার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. ইকবাল আনোয়ার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং ইউনিসেফ, যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র অ্যাডভাইজার ড. রোরি নেফত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ২.০: অ্যালমা-আটা থেকে অ্যাসটানা শিরোনামের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
ইথিওপিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ড. সেহারলা আবদুলাহিও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন : ডেইলি ষ্টার চ্যাম্পিয়ন – রানার্স আপ আরটিভি
এছাড়াও, ঢাকার ধামরাইয়ের সিএইচসিপি সুবেদী গোস্বামী, উগান্ডার হেলথ সিস্টেমস গ্লোবাল থেমাটিক ওয়ার্কিং গ্রুপের সহ-সভাপতি ড. ডেভিড মুসোক, আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. জন ডি ক্লেমেন্স, জেপিজিএসপিএইচ-এর ডিন ও অধ্যাপক ড. সাবিনা ফায়েজ রশিদ, ডিএফআইডি বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ জুডিথ হার্বার্টসন, বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধিবর্গের ফার্স্ট সেক্রেটারি হ্যান্স ল্যামব্রেচট, এবং বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ড. নাসিমা সুলতানা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সারা বিশ্ব থেকে আসা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সম্মেলনটিকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। ৩৫টি দেশ থেকে প্রায় ৫০০ নীতি-নির্ধারক, স্বাস্থ্য পেশাজীবী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতনিধি এবং গবেষকবৃন্দ সম্মেলনে নিবন্ধন করেছেন।
সম্মেলনে সর্বমোট ২৩২টি গবেষণা সারসংক্ষেপ (অ্যাবস্ট্র্যাক্ট) জমা পড়েছে, যার মধ্যে থেকে ১৪১টি মৌখিক ও পোস্টার উপস্থাপনার জন্য নির্বাচিত হয়েছে। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশ থেকে ২০ জন নবীন অংশগ্রহণকারী তাঁদের অ্যবস্ট্র্যাক্টের গুনগত মানের ভিত্তিতে বৃত্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন।
২০১৭ সালে উগান্ডার কাম্পালায় ‘১ম আন্তর্জাতিক কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মসূচির অবদান তুলে ধরা হয়।
সম্মেলনের অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান হলো ইউএসএআইডি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইউকেএআইডি, এমএসএইচ, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস, ব্র্যাক, ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ, এবং ডব্লিউএইচও।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা