দেশে বেসরকারি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হয় সেলস ও মার্কেটিং বিভাগে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রস্তুত ও উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ওষুধশিল্পসহ বিভিন্ন পণ্যের বিক্রয় ও বিপণনের কাজে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ধরনের চাকরিতে কেমন যোগ্যতা দরকার, কাজের পরিধি কেমন, নিয়োগের বেলায় কী কী দেখা হয়, নিজেকে কিভাবে তৈরি করতে হবে—এসব নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন পাঠান সোহাগ
সাধারণত দেশের বেশির ভাগ ছোট-বড় পণ্য প্রস্তুত, উত্পাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিক্রয় ও বিপণনের কাজে কর্মী নিয়োগ দেয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে সেলস ও মার্কেটিং একই বিভাগের অধীনে, আবার কোথাও কোথাও আলাদা। বড় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান কিংবা পরিবেশকরাও বিক্রয়-বিপণনে কর্মী নেন।
এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের ম্যানেজার মো. হাফিজ ইমতিয়াজ জানান, সেলস ও মার্কেটিংয়ের কার্যক্রম আলাদা। সেলস বিভাগের কর্মকর্তারা সরাসরি প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত। আর মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তারা পণ্যের প্রচার, প্রসার তথা বিজ্ঞাপনের কাজ করেন।
বসুন্ধরা পেপার মিলের সেলস অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ তারিকুল ইসলাম জানান, নিয়োগপ্রাপ্ত একজন সেলসম্যান বা বিক্রয়কর্মী বাজারের দোকানগুলোতে গিয়ে পণ্যের অর্ডার নেন অর্থাত্ সরাসরি বিক্রয় করেন। পণ্য বিক্রয়ের পাশাপাশি ক্রেতাদের (দোকানি) সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। নতুন নতুন ক্রেতার সঙ্গে ব্যাবসায়িক সুসম্পর্ক তৈরি করা তাঁর প্রধান কাজ।
যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সার্ভিসভেদে যোগ্যতার ধরন আলাদা হয়। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে সেলসে এসএসসি কিংবা এইচএসসি আর মার্কেটিংয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি চাওয়া হয়। তবে কিছু কিছু কম্পানিতে মাস্টার্স ডিগ্রি চাইতে পারে। ব্যবসাসংক্রান্ত ডিগ্রি যেমন—বিবিএ ও এমবিএ (মার্কেটিং) থাকলে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
শিল্প-কারখানার ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির প্রয়োজন হতে পারে।
প্রাণ অ্যাগ্রো (মি. নুডলস) লিমিটেডের নরসিংদী জোনের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে সেলস এক্সিকিউটিভ নিয়োগের ক্ষেত্রে এসএসসি পাস চাওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে তিন বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হলেই হয়।’
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ফখরুল হাসান জানান, ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে কাজের বিশাল সুযোগ। সেলস ও মার্কেটিং বিভাগে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ দেওয়া হয় ‘ফ্রেশার অফিসার’। এই পদে আবেদনের জন্য বিবিএ, এমবিএ, ফার্মেসি, রসায়ন ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিজ্ঞান বা অন্যান্য বিষয়ে পড়াশোনা করেও আবেদন করা যাবে, যদি অভিজ্ঞতা থাকে।
আবেদন যেভাবে বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগে যোগাযোগ করে জানা যায়, বিভিন্ন পদে জনবল নেওয়ার জন্য পত্রপত্রিকা, প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট কিংবা অনলাইন জব পোর্টালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। প্রার্থীরা সরাসরি, ডাকযোগে বা ই-মেইলের মাধ্যমে সিভি পাঠিয়ে আবেদন করতে পারবেন।
প্রাণ অ্যাগ্রো (মি. নুডলস) লিমিটেডের এজিএম (নরসিংদী জোন) মো. জাহাঙ্গীর কবির জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে বাছাই পরীক্ষার দিন প্রার্থীদের সিভি নিয়ে সশরীরে আসতে বলা হয়। সেদিনই তাঁদের কাছ থেকে সিভি জমা নেওয়া হয়।
বাছাই পরীক্ষার পদ্ধতি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন পদের জন্য যাঁরা সিভি পাঠান, সেগুলোর মধ্যে থেকে উপযুক্ত প্রার্থীদের সিভি আলাদা করে শর্ট লিস্ট করা হয়। তারপর বিভাগ অনুসারে একটি নির্দিষ্ট দিন লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। এই লিখিত পরীক্ষা বিভাগ ও পদভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। লিখিত পরীক্ষায় একটি নির্দিষ্ট পাস নম্বর ধরা হয়। যাঁরা পাস করেন, তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্তদের ভাইভার জন্য ডাকা হয়। ভাইভায় আলাদা করে পাস করতে হয়। পরে লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করে নিয়োগ দেওয়া হয়।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ফখরুল হাসান জানান, স্কয়ার ফামাসিউটিক্যালে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়। দুটি আলাদা নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে ভাইভা নেওয়া হয়। তারপর মেধাক্রম অনুসারে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিয়োগকর্তা কী কী দেখেন মো. জাহাঙ্গীর কবির জানান, কম্পানিভেদে পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন ও মান নির্ভর করে। সেলসম্যান ও মার্কেটিংয়ে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষায় সনদ ও অভিজ্ঞতার পাশাপাশি প্রার্থীর চালচলন, কথা বলার ধরন, স্মার্টনেস, পোশাক-পরিচ্ছদ, নিখুঁত বাচন ও অঙ্গভঙ্গি, স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি, উন্নত যোগাযোগ দক্ষতা, উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা, মানুষের সঙ্গে মিশতে পারবে কি না, বড় হওয়ার স্বপ্ন আছে কি না—এগুলোই সাধারণত ভাইভা বোর্ডে দেখা হয়।
নিজেকে কিভাবে তৈরি করবেন একাধিক প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, একজন চাকরিপ্রার্থী যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করবেন, সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। প্রতিষ্ঠানের পণ্য সম্পর্কে ধারণা, প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগ্রহ, চাকরিপ্রার্থীদের বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন শর্ত পূরণ করার মতো দক্ষতা থাকতে হবে। সাম্প্রতিক বিষয়, বাজার সম্পর্কেও খোঁজখবর রাখতে হবে। বাংলা, ইংরেজির মতো বিষয়গুলোর ওপর বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে।
কোনো কোনো পদের ক্ষেত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের মার্কেটিং-সংশ্লিষ্ট বিষয়ের খুঁটিনাটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এ ছাড়া কাজ শেখা ও করার মানসিকতা থাকতে হবে। চাকরি হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা বসের কাজ দেখে বাস্তব অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি রাখতে হবে।
বেতন ও সুযোগ-সুবিধা সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং পেশার কম্পানি অনুসারে বেতনকাঠামো পদভেদে ১৫ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত রয়েছে। একজন সেলসম্যান থেকে প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে ওঠা যায়। এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের ম্যানেজার মো. হাফিজ ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে একজন ফ্রেশারের বেতন ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, দুটি উত্সব ভাতা, বৈশাখী ভাতা, টিএ, ডিএ, প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুযায়ী চিকিত্সা তহবিল ও স্টাফ কল্যাণ তহবিল থেকে নির্ধারিত পরিমাণ আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়। যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে। কর্মীদের কাজের গুণগত মানের ওপর ভিত্তি করে ইনসেন্টিভ দেওয়া হয়।’
কী কাজ বিক্রয় প্রতিনিধিদের নিয়োগ দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠান তাদের ডিস্ট্রিবিউটর বা পরিবেশকের অধীনে দায়িত্ব দেয়। প্রাণের (অ্যাগ্রো, বেভারেজ, ডেইরি) মনোহরদী (নরসিংদী) পরিবেশক মো. নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আমার নির্ধারিত এলাকার দোকানগুলোতে বিক্রয় প্রতিনিধিরা গিয়ে অর্ডার নিয়ে এসে আমার কাছে মেমো জমা দেন। সে অনুযায়ী অর্ডার দেওয়া দোকানগুলোতে অন্য কর্মীরা গিয়ে পণ্য দিয়ে পাওনা বুঝে নিয়ে আসেন।’
NB:This post is copied from kalerkantho
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা