ফজলুল বারী : বাংলাদেশে জয়নাল হাজারি, নিজাম হাজারি আছেন। তাদের যারা ভালোবাসেন তাদের সিংহভাগ ভয়ে ভালোবাসেন। কিন্তু সাত হাজারি তামিম ইকবালকে সবাই ভালোবাসেন মন থেকে। দেশ সেরা দুর্ধর্ষ ‘চাঁটগাইয়া ব্যাটসম্যান’ বহুদিন পর এসে বড় ইনিংস খেললেন সিলেটের মাঠে। প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসাবে মঙ্গলবার প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে সাত হাজারি ক্লাবে নিজের নাম লিখিয়েছেন তামিম ইকবাল। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দর্শকরাও সৌভাগ্যবান। কারন ঘটনাটি ঘটেছে তাদের চোখের সামনে। ব্যক্তিগত ৮১ রানে থাকতে একটি চার মেরে এই মাইল ফলকে পৌঁছেন তামিম। ১৩৮ বলে করেছেন ১৫৮ রান। এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান তামিমের। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে যে কোন ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বেশি রানও বাংলাদেশি ড্যাশিং এই অপেনার ব্যাটসম্যানের। ওয়েলডান তামিম। চীয়ার্স।
এমনিতে বাংলাদেশের অনেকের জিম্বাবুয়ে দলটিকে নিয়ে এক ধরনের নাক উঁচু ভাব আছে। এদের কাছে জিম্বাবুয়ে একটা দল হলো নাকি! এরা অতীত জানেননা। এক সময় জিম্বাবুয়ের কাছেও গো হারা হারতো বাংলাদেশ। এন্ডি ফ্লাওয়ার ভ্রাতৃদ্বয় নামের দুর্ধর্ষ দু’জন ব্যাটসম্যানও ছিল জিম্বাবুয়ের। সেখান থেকে খেলতে খেলতে বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে। এখন জিম্বাবুয়ের চেয়ে ক্রিকেট অবকাঠামো বাংলাদেশের ভালো। আর সব দলেরই খারাপ সময় পাড়ি দিয়ে জয়ের ধারায় ফিরতে এমন কিছু দল লাগে। যেমন ভারত-পাকিস্তানের লাগে বাংলাদেশের মতো দল। বাংলাদেশ যখন টেস্ট স্টেটাসের জন্যে লড়াই করছিল তখন ভারত-পাকিস্তানের ভোটের সমর্থনও লেগেছে।
পাকিস্তান যা মনে করিয়ে দিতে খোঁটাও মারে। সর্বশেষ বিশ্ব ক্রিকেট বিচ্ছিন্ন পাকিস্তানে তাদের দেশে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে আকুতি কাকুতির সুরে বলেছিল, ‘তোমাদের জন্যে না আমরা কতো কী করেছি!’ ওই সময়ে ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন সৌরভ গাঙ্গুলি মূল্যবান একটি কথা বলেছিলেন। সৌরভ বলেছিলেন পর্যাপ্ত অবকাঠামো প্রস্তুতি ছাড়া টেস্ট স্টেটাস নিলে বাংলাদেশ দলটি বিশ্বের শক্তিশালী দলগুলোর রেকর্ড সৃষ্টিতে ব্যবহৃত হবে। সৌরভের কথা তখন আমাদের ভালো লাগেনি। কিন্তু আজকের বাস্তব সত্য হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটের অনেক রেকর্ডই সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশকেও এখন জয়ের ধারায় ফিরতে জিম্বাবুয়ের মতো দল লাগে এটা সত্য। জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে জয়ের ধারায় ফিরে বাংলাদেশ সুবিধামতো অনেক ক্রিকেট পরাশক্তিকেও হারাতে পারে।
বাংলাদেশ সর্বশেষ ভারত-পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাজে ভাবে হেরেছে। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া বাংলাদেশকে ভুলিয়েভালিয়ে নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে হারিয়ে জয়ের ধারায় ফিরেছে পাকিস্তান। সবাই এমন সুবিধামতো দল খোঁজে। আর বাংলাদেশের উন্নাসিকরা মুখখানা বাংলা পাঁচের মতো করে বলেন, ওহ! এটাতো জিম্বাবুয়ে। জিতবেইতো। কিন্তু জিম্বাবুয়ে হোক বা আয়ারল্যান্ড-স্কটল্যান্ড হোক, খেলেই জিততে হয়। খেলেই নিজের ডাবল টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছেন আরেক দেশ সেরা মুশফিক। কিন্তু সেই জয়েও প্রশংসা মেলেনি এই নিঃসঙ্গ শেরপার! তাকে টেনেহিঁচড়ে পাকিস্তানে নিতেই চায় বিসিবির বর্তমান নেতৃত্বের! এবার পাকিস্তানে দল পাঠানোর আগে বিসিবির পক্ষে বলা হয়েছিল পাকিস্তানে যার খুশি যাবে, যার ইচ্ছা নয় তারা যাবেনা। কিন্তু মুশফিকের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করে বিসিবি!
এক রকম প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরে বলা হয়েছে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় হিসাবে বিসিবির সে কোন সফরে যেতে মুশফিক যেতে বাধ্য এমন প্রচ্ছন্ন হুমকি দেন বিসিবি বস নাজমুল হাসান পাপন! জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে সিলেটে প্রধান নির্বাচক এবং কোচের মুশফিকের সঙ্গে বৈঠক এবং বিসিবি বসের বার্তার খবর চাউর হয়ে গেলে উত্তেজনা-ক্ষোভ ছড়ায় বিভিন্ন মহলে। ওই বৈঠকে বলা হয় মুশফিক পাকিস্তান সফরে না গেলে তাঁকে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ওয়ানডে স্কোয়াড থেকে বাদ দেয়া হবে। ওই হুমকির মুখেও অটল ভূমিকায় থাকেন মুশফিক। খবরটি মিডিয়ায় চলে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সামাল দিতে সিদ্ধান্ত পালটায় বিসিবি। মুশফিকও দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলেছেন। আগের ম্যাচের রিটায়ার্ড হার্ট লিটন দাসের কারনে উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান মুশফিককে না খেলিয়েও উপায় ছিলোনা। সাত হাজারি তামিমের সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ রানের দিনে বাংলাদেশ দল তেমন একটি অস্বস্তিকর অবস্থাতেই আছে। ভারত পাকিস্তানে যাবেনা বলে এশিয়া কাপ হবে দুবাইতে। আর করোনা ভাইরাসের পাকিস্তানে বাংলাদেশ দলের সবাইকে বাধ্যতামূলক নিয়ে যেতে মরিয়া দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট নেতৃত্ব!
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা