তাসকিনা ইয়াসমিন : সরকারিভাবে সরাসরি দেশে লকডাউন ঘোষনা করা হয়নি। অল্প অল্প দিন করে ছুটি বাড়ানো হচ্ছে। এরইমধ্যে গার্মেন্টস কর্মীরা অবর্নণীয় কষ্টের মধ্যে রাজধানীতে এসে আবার বাড়ি ফিরে গেছে। আবার ঢাকায় ধীরে ধীরে রোগী বাড়ছে। এমন অবস্থা নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক আফসান চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সরকাররা বোধহয় যতটা প্রয়োজন ছিল করোনা ভাইরাসকে মনে রাখার সেটা করেনি।একইসঙ্গে যে জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের বসবাস। তারাও খুব নাজুক বিশেষ করে ধর্মের ব্যাপারে। ভারতে তাবলীগ জামাতের কারণে যে সংখ্যক রােগী পাওয়া গেছে সেটাও কিন্তু কম নয়। আমাদের দেশেও এই ঘটনাটা ঘটল। আর ঘটনাটা এইভাবে ঘটল যে, আমাদের দেশে দুই ধারায়, মসজিদে এবং ওরসের মাধ্যমে এটি ঘটল। রিপোর্ট থেকে যেটা আমরা দেখছি দুই যায়গা থেকেই সংক্রমণ ঘটেছে।
তিনি বলেন, মীরপুরের যে সংক্রমণটা এটা মসজিদ থেকে এটা সরাসরি সরকারই স্বীকার করেছে। ঢাকার বাইরে দেওয়ানবাগী পীরের ওরসে গিয়ে একজন ১৮৯ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এ কারণে যেটা বোঝা যাচ্ছে সরকারের সমন্বয়হীনতার বিষয় আছে। সরকার হঠাৎ করে এত পাবলিক কি ভাবল এটা নিয়ে এত সচেতন হলো কেন বোঝা যাচ্ছে না। পাবলিক কি ভাবল না ভাবল এটা তো তাদের এসে যায়না। এই সরকার তো সবল সরকার। এমন কোন সিদ্ধান্ত তারা নেয় না পাবলিকের জনপ্রিয়তার উপর ভিত্তি করে। নির্বাচনতো একটা বড় উদাহরণ। সরকারের তো কিছু এসে যায়নি। এখন যে সরকারের উপরের দিকের যে রাজনীতি এবং বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী তিনি অত্যন্ত সবল। কিন্তু যেহেতু সবাই প্রধানমন্ত্রী নির্ভর তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে।
তিনি বলেন, আইইডিসিআর যদি সংক্রমণের গুরুত্বপূর্ণ মনে করে থাকে, তাহলে তো তারা আগে থেকেই টেস্ট এর বিষয়টা শুরু করতে পারব। পরিচালক যে কথাটা বলেছে সবাই এখন খুব খুশি বিশেষ করে সরকার বিরোধীরা যে আমরা তো আগেই বলেছিলাম। আসলে সত্যিটা হচ্ছে পৃথিবীর কোন দেশের পক্ষে যদি প্রচণ্ডভাবে বেড়ে যায় সেটাকে সামলাবার ক্ষমতা নেই। এখন পর্যন্ত কোন সরকার দেখাতে পারেনি। একমাত্র চীন এটা করে দেখিয়েছে। অতএব, সরকারকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সমন্বয়হীনতার খুব বড় একটা উদাহরণ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিওয়ালাদের। আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রী যদি বলে গার্মেন্টস খুলবে না। তাহলে কেউ কি খুলতে পারবে? তাহলে কেন এই সিদ্ধান্ত এলো না। কেমন যেন দোমনাভাব আছে। যদি করি লোকে কি বলবে? এখন পৃথিবীর কোন দেশ ঐ পর্যায়ে নেই। পৃথিবীর সকল দেশই কিন্তু এই পর্যায়ে চলে গেছে, নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
টেস্টের প্রসঙ্গটি বারবার আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা টেস্ট করে কি করব? শত শত রোগী পেলাম। আমাদের কি চিকিৎসা দেয়ার সামর্থ্য আছে। এটা স্বাস্থ্য বিভাগের লোকেরাও স্বীকার করেছে ভীষণভাবে রোগী হলে চিকিৎসা দেয়ার সামর্থ্য নেই। তাহলে আমরা কি করব? অপছন্দের হলেও আমাদের এই পরিকল্পনাগুলো করে রাখতে হবে। লকডাউনটা যে একটা সমাধান, এটা মানুষের যেন গ্রহণ করতে অসুবিধা হচ্ছে। সবাই ফোন করছে, আমাকে টেস্ট করে ভাল করো। ওষুধ দিয়ে পৃথিবীর কোন যায়গায় ভাল হচ্ছে না। ওষুধ তো নাই।
তিনি বলেন, ভেন্টিলেটরের কথা টেলিগ্রাফ পত্রিকা বলছে, ৮০ ভাগ মানুষ ভেন্টিলেটরে মারা যায়। বাংলাদেশে যত রোগী হওয়ার সম্ভাবনা আছে তার ৮০ ভাগকে ভেন্টিলেটরে ঢোকালে মরবে। অতএব, আমাদেরকে ঐ সব চিন্তা বাদ দিয়ে আমাদেরকে মাত্রাটা হ্রাস করতে হবে। আমার কাছে মনে হয়েছে গরীব মানুষের দোহায় দিয়ে, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মানুষদেরকে একটা ইস্যু দেয়া হয়েছিল চালিয়ে রাখবার জন্য। প্রত্যেক গরীব মানুষের অন্তত দুই থেকে তিনমাস টিকে থাকার সামর্থ্য আছে। সরকার যদি একমাস দিত তারা নিজেরা একমাস টিকতে পারত। দুইমাস তারা ঘরেবসে খেতে পারত। দুই মাস বন্ধ করে দেয়া উচিত ছিল। লকডাউন বা কারফিউ যাই বলি না কেন এটা চালু করা যেত।
আফসান চৌধুরী বলেন, সরকারের মধ্যে একটা দোমনা কাজ করেছে আমি যদি এত কঠোর হই তাহলে লোকে কি ভাববে! আসলে কঠোর হয়ে যদি সংক্রমণ কমে লোকে সাধুবাদ জানাবে। এটা করা দরকার। আর ধর্মের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। সোমবার মসজিদে নামাজ বন্ধ করা হয়েছে। কোন মসজিদের সামনে কি কেউ মিছিল করেছে। করেনি। আমি যেখানে থাকি সেখানে গেট বন্ধ করা হয়েছে। কেউ ঢুকতে পারছেনা। জনগোষ্ঠী বিপদে পড়লে কি করতে হয় তা জানেনা। ৫০বছরে আমরা খুব কম বিপদে পড়েছি। দুর্যোগ কম হয়েছে। ১৯৯১ এর ঝড়ে মানুষ মারা গেছে। কিন্তু তখন ঢাকার বাইরে মানুষ মারা গেছে। এর আগে ৭০ এবং ৬৬ তে ঝড়ে মানুষ মারা গেছে এখন ঝড়ে, বন্যায় মানুষ বেশি মারা যায়না। এখন মারা যাবার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মূলত ঢাকার শহরের মানুষ বেশি আতঙ্কিত। তারা যেহেতু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বেশি নিয়ন্ত্রণ করে তাই ভাইরাসের মতো ছড়াচ্ছে। এখন সরকার কঠোর হোক, মানুষ তাদের সমর্থন করবে।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা