ফজলুল বারী ঃ বাংলাদেশবাসী প্রিয় প্রজন্ম। অথবা বাংলাদেশি প্রিয় প্রজন্ম পৃথিবী জুড়ে যে যেখানে আছো তাদেরকে আছো তাদেরকে বলছি, প্লিজ সতর্ক হও, আমাদের পৃথিবী এখন বড় বিপদের সম্মুখিন। বাংলাদেশেও তোমাদের প্রায় সবার হাতে এখন স্মার্ট ফোন সেট, ইন্টারনেটের নেটওয়ার্কের মধ্যে তোমরা প্রায় সবাই। এবং বাংলাদেশে তোমরা তুলনামূলক অনেক সস্তায় এনজয় করছো এই ইন্টারনেট সেবা। সে কারনে করোনা ভাইরাস মহামারী নিয়েও বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা-মানুষের বহুমুখী সংকট তা তোমরা জানতো পারছো। কিন্তু বাংলাদেশের যে সব ছবি আমরা বাইরে থেকে দেখছি তা দেখে ভয় পাচ্ছি প্রিয় প্রজন্ম। এই সংকটকে কারোরই হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। সবার আগে ব্যক্তি নিরাপত্তা আগে। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে আমার জন্যে, আমাদের কারো জন্যে আমাদের পরিবারের কোন সদস্য বা আশেপাশের কেউ যাতে বিপদগ্রস্ত না হন।
প্রিয় প্রজন্ম বাংলাদেশের প্রতিদিনের কিছু ভুল চোখে পড়ছে। এর কিছু ছোট ভুল বাড়াচ্ছে বড় বিপদের ঝুঁকি। বাংলাদেশের কিছু অসতর্ক প্রবাসী মহামারী রোগটি বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন। তাদের মাধ্যমে এটি এরমাঝে শুধু তাদের পরিবার নয়, আশেপাশের পরিবারে-গ্রামে-মহল্লায়-সমাজে ছড়িয়ে দিয়েছেন! বিদেশে লকডাউনের মাধ্যমে করোনা পরিবেশ সামাল দেয়া হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক চীনে এটি যেভাবে কড়াকড়িভাবে মানা হয়েছে তা আর কোথাও সেভাবে মানা হয়নি। গনতান্ত্রিক ভদ্রতা-ভব্যতা অথবা শিথিল-হেলাফেলার জন্য এটি এখন ছড়িয়ে পড়েছে গনতান্ত্রিক দেশগুলোতে। বাংলাদেশে শুরু থেকেই লকডাউনের দাবি উঠছিল। কিন্তু যেখানে নাগরিকদের বড়অংশের মানুষের দিন আনি দিন খাই অবস্থা, সেখানে রিকশা-ভ্যান- অটো-টেম্পো-থ্রি হুইলার সহ নানান স্থানীয় যানবাহনের মিছিল চলে, সেখানে মানুষ যেখানে হরতাল মানেনা সেখানে লকডাউন মানবে তা সরকারও বিশ্বাস করতে চায়নি।
এরপর সরকার সাধারন ছুটি ঘোষনা করতে গিয়ে করলো বড় একটি ভুল! সাধারন ছুটিকে লকডাউন না বলতে ছুটি ঘোষনার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহন বন্ধ করলোনা! গণপরিবহন বন্ধ করতে গিয়ে মেইল ট্রেন বন্ধ করলো, আন্তঃনগর ট্রেন বন্ধ করলোনা! এই সুযোগে রেল স্টেশনগুলোতে ছড়িয়ে পড়লো ঈদে বাড়ি যাবার মতো উপচে পড়া ভিড়! এরপর আন্তঃনগর ট্রেন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে নিতে ঝুঁকি নিয়ে মানুষজনের বাড়ি যাওয়ার ভিড়ে রোগটাও দেশের সবখানে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে গেলো প্রিয় প্রজন্ম। অতএব বিদেশে আমাদের বর্তমান জীবনযাপনের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, বাংলাদেশে এখন শুধু বিদেশ ফেরত না, ট্রেন-গণপরিবহনে গাদাগাদি করে বাড়ি যাচ্ছেন, নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে সবাইকে স্বেচ্ছায় ১৪ দিনের কোয়ারিন্টানে থাকা উচিত। এভাবে বাড়িযাওয়া সবাই যে এরমাঝে জীবানু আক্রান্ত তা বলছিনা, তবে সাবধানের মার নেই। এখানে আরেক ভুলের সুযোগ আছে। মালামাল-খাদ্য সামগ্রী বহনের ট্রাক সহ নৌযানেও বাংলাদেশের বিস্তর মানুষজন ভ্রমন করেন। এগুলোয় যাতায়াতের সুযোগের মাধ্যমে পুলিশের কিছু সদস্য মালকড়ি কামাবে। এরসঙ্গে মহামারী রোগটি নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবে।
প্রিয় প্রজন্ম, এই বিপদে ঝুঁকি কমাতে প্রথম দরকার ব্যক্তিগত পরিছন্নতা। মুখে শুধু একটা মাস্ক পরে ঘুরে বেড়ালেই চলবেনা। হাত দুটি সর্বক্ষন পরিষ্কার রাখতে হবে। হ্যান্ডশেক-কোলাকুলি বন্ধ। মনে করবে এসব তোমার জন্যে হারাম। গাড়ির হাতল, লিফটের দরজা সহ নানাকিছু যেগুলো অনেক মানুষ স্পর্শ-ব্যবহার করেন, সেগুলো ধরতে সাবধান। সেগুলো যদি ধরতেই হয়, যত দ্রুত সম্ভব সেই হাত দুটি আবার সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে সাফসুতরো করতে হবে। টাকার মাধ্যমেও এখন এই জীবানু ছড়াতে পারে। এখন এটি যত কম ব্যবহার করা যায় তত মঙ্গল। এরজন্যেই বলা হচ্ছে যত কম ঘরের বাইরে যাওয়া যায়। প্রিয় প্রজন্ম তুমি যখন ছুটি পেয়ে ঝুঁকিপূর্ন পথে বাড়ি যাবার লাইনে, তোমার বয়সী অস্ট্রেলিয়ানরা নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব মেনে সেন্টারলিংক অফিসের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছে। কারন বেকারত্বের ঝুঁকিতে থাকায় অস্ট্রেলিয়া সরকার আগামী ছয়মাস প্রতি সপ্তাহে তাদেরকে সাড়ে পাঁচশ ডলার করে ভাতা দেবে। আর তুমি শুধু বাড়ি যাওয়াই শিখলে! তাদের মতো কেনো তোমাকে দেয়া হবেনা এটি জোরগলায় দাবি করে বলতে শিখলেনা!
অস্ট্রেলিয়ায় এই সামাজিক দূরত্বের প্রথম মডেল ধরা হয়েছিল দেড় ফুট, তা পরে চার ফুটে উন্নীত করা হয়। এসব সামাজিক দূরত্ব মানতে পারলে উন্মুক্ত স্থানে পাঁচশ, ইনডোরে একশ মানুষের উপস্থিতি অনুমোদন করা হয়েছিল। কিন্তু রোগটি বাড়তে শুরু করায় ইনডোরের উপস্থিতি একশ’র কমে নামিয়ে আনলে এদের মসজিদ-গির্জা সহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহও বন্ধ হয়ে যায়। শর্তসাপেক্ষ পরিস্থিতির কারনে গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ সিডনির লাকেম্বার বড় মসজিদে জুম্মার জামাত হয়নি। নতুন শর্তের কারনে অর্থাৎ সামাজিক দূরত্বের শর্তের কারনে আগামী শুক্রবার থেকে এদেশের কোন মসজিদেই আর জুম্মার জামাত হবেনা।
ঝুঁকি এড়াতে অস্ট্রেলিয়ার সব রেষ্টুরেন্ট-বার-নাইটক্লাব-ক্যাসিনো সহ যেখানেই সামাজিক দূরত্বের শর্ত লংঘনের সুযোগ আছে এর সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে টেইকওয়ে খাবারের জন্যে রেষ্টুরেন্ট-কফিশপ খোলা থাকবে। বিদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার আকাশ সীমান্ত বন্ধ করলেও দেশের ভিতরে গণপরিবহন বন্ধ হয়নি। জনসংখ্যার চেয়ে অস্ট্রেলিয়ার গণপরিবহন, বিশেষ করে ট্রেন-বাসের সংখ্যা বিস্তর থাকায় এগুলোর ভিড় নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব।
আমাদের সতর্ক জীবনযাপনের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, এখন আর শুধু বিদেশ ফেরতদের মাধ্যমে নয়, ভিড় সতর্কতার নীতিমালা না মেনে যারা বাড়ি গেছেন তাদের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এই মহামারীর বিপদ।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা