টিকা খাচ্ছেন ঐ এলাকার বাসিন্দা শিশু কাশমেরি জাহানারা রুবি।
সম্পূর্ণ ফ্রি এই টিকা পাবেন ১ বছরের বেশি ঐ এলাকার সকল বাসিন্দা
তাসকিনা ইয়াসমিন
আগ্রহী টিকা গ্রহিতাদের নাম রেজিস্ট্রেশন চলছে।
রাজধানীর লালবাগ-আজিমপুরের দায়রা শরীফ এলাকার উঠানে তারা বেশ কয়েকজন ভলান্টিয়ার বসে আছেন। সঙ্গে কলেরার ওরাল (মুখে খাওয়ানোর টিকা) টিকা। একে একে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের নিয়ে আসছেন। তারা প্রথমে নাম রেজিস্ট্রেশন করে কার্ড নিচ্ছেন। এরপর টিকা খাওয়ার পর হাতে কালি দিয়ে চলে যাচ্ছেন নিজের কাজে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) অস্থায়ী এই টিকাদান কেন্দ্রে গেলে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।
টিকা খাওয়ার পর মিলছে এমন একটি কার্ড, যা একমাস পর দ্বিতীয় ডোজ খাবার সময় কাজে লাগবে।
টিকাদান কেন্দ্রের দলনেতা মো. বদরুদ্দোজা জানান, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এই এলাকায় কলেরা টিকা খাওয়ানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরমধ্যে শুধু ২১ ফেব্রুয়ারি অন্য একটি ভেন্যুতে বেশি চাপ থাকায় সেদিন তারা সেখানকার লোকজনদের সেবা দিয়েছেন।
টিকাদান কর্মীরা বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে চালাচ্ছেন তাদের কার্যক্রম।
তিনি জানান, প্রথম দিন এখানে ৬ জন এই টিকা নিয়েছেন। পরের দিন ৮০০ জন এবং এর পরের দিন ১১শ জন এই টিকা নিয়েছেন। এই টিকা ১ বছর বয়সী শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীদের খাওয়ানো হচ্ছে। তবে, এক বছরের কম বয়সীদের এই টিকা খাওয়ানো হচ্ছে না। এটির দ্বিতীয় ডোজ খাওয়ানো হবে একমাস পর।
এর আগে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজধানীর কলেরাপ্রবণ ৬টি এলাকায় টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে । এরমধ্যে সবচেয়ে কলেরা প্রবণ এলাকা হলো মোহাম্মদপুর। এছাড়া এই তালিকায় রয়েছে আদাবর, দারুস সালাম, কামরাঙ্গীর চর, হাজারীবাগ ও লালবাগ। এই ৬টি এলাকার ১৬টি ওয়ার্ডে ১৯ থেকে ২৫ ফেব্র“য়ারি ১২ লাখ ডোজ টিকা খাওয়ানো হবে। এক বছরের বেশি বয়সী যে কেউ মুখে খাওয়া এই টিকা নিতে পারবেন।
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহলীনা ফেরদৌস ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর’বি) আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এমিরেটাস বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী এ সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপণ করেন।
ভোটদানের পরে নয়, টিকা খাওয়ার পর দেয়া হচ্ছে সনাক্তকরণ
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইসিডিডিআর’বি পরিচালিত এক জরিপে দেখাগেছে, বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে কলেরার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। ডায়রিয়াজনিত রোগের মধ্যে ২০ শতাংশই কলেরার জীবাণুবাহী।
কলোর সংক্রান্ত আইসিডিডিআরবি’র সর্বশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরে ড. কাদরি বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যারা মহাখালী কলেরা হাসপাতালে আসেন তাদের মধ্যে মোহাম্মদপুর এলাকার রোগীদের কলোরা প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এদের মধ্যে প্রতি হাজার রোগীর কলেরায় আক্রান্তের হার ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া আদাবর এলাকায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ, দারুস সালাম এলাকার দশমিক ৩ শতাংশ, লালবাগ এলাকার ২ দশমিক ১ শতাংশ, কামরাঙ্গীরচর এলাকার ১ দশমিক ৫ শতাংশ, হাজারীবাগ এলাকার ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী ৩০ সালের মধ্যে দেশকে কলেরা মুক্ত করতে হবে। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতেই এই টিকাদান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত এই টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা করছে গ্যাভি। আপাতত রাজধানীর ছয়টি এলাকায় এই কার্যক্রম শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলেও জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার ৪৭টি দেশে কলেরার সংক্রমন ঘটে। প্রতিবছর পৃথিবীতে এক দশমিক ৩ মিলিয়ন থেকে এক দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশসহ মোট আটটি দেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ মানুষ এ রোগের শিকার হয়ে থাকে।
দেশকে কলেরামুক্ত করতে আজ থেকে খাওয়ানো হবে টিকার প্রথম ডোজ। এক মাস পরে টিকার দ্বিতীয় ডোজ খাওয়ানো হবে। সিটি করপোরেশনের স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রসহ ৩৬০ টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই টিকা দেয়া হবে।
ছবি : তাসকিনা ইয়াসমিন।
# সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, লাল সবুজের কথা ডটকম।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা