ফজলুল বারী : করোনা সংকট নিয়ে দেশের মানুষের নানান প্রতিক্রিয়া দেখছি। বুয়েটের কিছু ছাত্রের একটি সিদ্ধান্ত দেখে চমকে গেছি। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন করোনা ভয় দূর না হওয়া পর্যন্ত তারা অনির্দিষ্টকাল ক্লাসে যাবেননা! আবরার হত্যা পরিস্থিতিতে জনগনের সমর্থনে বুয়েটের ছাত্রছাত্রীরা যে শক্তি অর্জন করেছিলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সেই শক্তির সুস্পষ্ট অপব্যবহার।
করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে মহামারীর রূপ নিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তখন বন্ধ করতেই হবে। কিন্তু এখনই সে অবস্থা বাংলাদেশে নেই। অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে নাজুক। এখানে এরমাঝে ৩ জন মারা গেছেন, আক্রান্ত প্রায় দু’শ। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু এ অবস্থা স্বত্ত্বেও এরা পরিস্থিতির জন্যে খেলা বন্ধ করছে, পাঁচশ’র বেশি জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করছে, কিন্তু ক্লাস বন্ধ করছেনা। ক্লাস-পড়াশুনা বন্ধ করলে জাতীয় কি ক্ষতি তা এরা জানে। আর এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবার কর্তৃপক্ষ কয়েকজন ছাত্র নয়। কেউ যাতে কোথাও সীমা লংঘন না করেন। বুয়েটের ছাত্রছাত্রীদের মেধাবী হিসাবে আমরা ভালোবাসি। জনগনের ট্যাক্সের টাকায় তাদের পড়ানো হয়।
শনিবার ইতালি থেকে দেশে ফিরেছেন ১৪২ জন প্রবাসী। ঘোষনা অনুসারে তাদেরকে হজ ক্যাম্পের কোয়ারিন্টানে নেয়া হয়। সেখানকার ব্যবস্থাপনা পাঁচতারকা হোটেলের না। বাংলাদেশের সরকারি নিয়ন্ত্রনের প্রতিষ্ঠান যে রকম থাকে হজ ক্যাম্পও তেমন আছে। হাজীরা আল্লাহর ঘরে যাবার পথে কয়েক ঘন্টার জন্যে সেখানে অবস্থান করেন। অসুবিধা দেখলেও মুখ ফুটে কিছু বলেননা। হয়তো মনে করেন আল্লাহর ঘরে যাবার পথে আরাম চেয়ে অভিযোগ করলে আল্লাহ হয়তো নারাজ হবেন।
এখন এই পরিস্থিতিতে আক্রান্ত দেশ থেকে কাউকে আপাতত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেশে না আসতে বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে। ইতালির চিকিৎসা বিশ্বমানের। সেখানে কেউ আক্রান্ত হলে যে চিকিৎসা পাবেন তা বাংলাদেশের দেয়া সম্ভব না। কিন্তু সেই ১৪২ জন হজ ক্যাম্পের অব্যবস্থাপনা দেখে সেখান থেকে জোর করে চলে যাবার জন্যে জোর খাটাচ্ছিলেন! ইতালিতে এটা করা কি সম্ভব ছিল? আমাদের বেশিরভাগ লোকজন এমন বিদেশে বাধ্য হয় আইন মানেন, দেশে মানতে চাননা!
এমন লোকজনের এখন দেশে আসাটা সামাজিকভাবেও সেভাবে অভ্যর্থনা পাচ্ছেনা। তাদের কেউ যদি মারন ভাইরাসটি বহন করে আনেন, তাদের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা বা গ্রামবাসী সংক্রামিত হন, পরিবারের-গ্রামের টাকা কামানো নায়কেরা যে ভিলেনে পরিণত হবেন ভাইগন। কাজেই সবার এখন মাথা ঠান্ডা রেখে চলা উচিত। বিদেশ থেকে আসা যাদের হোম কোয়ারিন্টানে রাখা হবে তারা সেটি যথাযথ মেনে চলবেন কীনা তা নিয়ে টকশোতে প্রশ্ন শুনি। এটিও সংশ্লিষ্টদের যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।
কারন বিদেশে আমরা যারা থাকি তারা জানি কাজ পেতে, কাজ ধরে রাখতে আমাদের সুস্থ থাকা কত জরুরি। সাধারন জ্বর হলেও নির্দিষ্ট দিনগুলি বিশ্রাম না হলে জ্বর কমেনা। আর অবহেলায় অথবা খামখেয়ালিতে যথাযথ কোয়ারিন্টানে নিয়ম মেনে না থাকলে যদি কেউ করোনা ভাইরাসে অসুস্থ হয়ে যাই বা পরিবারের সদস্যদের আক্রান্ত করি তাহলে বিদেশ যাওয়ার কোন অর্থইবা কী!
করোনার কারনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা ঘোষনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে কেনো করা হচ্ছেনা। সরকার কী মহামারীর অপেক্ষা করছে? এমন প্রশ্নও দেখছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কোন সরকার কি চায় তার শাসনামলে দেশে কোন মহামারীতে মানুষ মরুক? এতেতো তার জনপ্রিয়তারই ক্ষতি। কে হায় নিজের জনপ্রিয়তা ধংস করতে ভালোবাসে! আর বাংলাদেশের লোকজনের জীবনতো সারা সময় জরুরি অবস্থার মধ্যেই আছে। আলাদা করে কী দেবেন জরুরি অবস্থায়!
এক টেলিভিশনের রিপোর্টে দেখলাম ঢাকার এক বাসের ভিতরে গাদাগাদি লোকজন, তাদের অনেকের মুখে মাস্ক। ওই অবস্থায় একজন আরেকজনের ওপর ঝুলে পড়ছেন আর ময়লা হাতে বারবার মাস্ক ঠিক করছেন। বাস থেকে নেমেই একজন মাস্ক ফাঁক করে পানের পিক ফেললেন রাস্তায়!
এ অবস্থার দেশে সরকারি জরুরি অবস্থার নানান নির্দেশনা বাস্তবায়নেতো সেনাবাহিনী নামাতে হবে। সবাইকে যার যার নিরাপত্তায় সতর্ক-যত্মবান হতে হবে। করোনা পরিস্থিতির কারনে এরমাঝে এমন অনেকেই সচেতন হয়ে উঠেছেন। মানুষের চলতি সচেতনতা ধরে রাখতে পারলে উপকৃত হবে দেশ। বাংলাদেশের দরকার সেই জরুরি অবস্থা যা দেশের মানুষকে মেনে চলতে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষকে সচেতন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে উদ্ধুদ্ধ করতে যে পদ্ধতিগুলো অনুসরনের কথা বলেছেন, তাঁর কথাগুলো বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। শেখ হাসিনা তখন করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেন।
তখন তিনি হাঁচি-কাশির সময় কী করতে হবে তা করে দেখান। করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই হতে পারেন বাংলাদেশের মূল ক্যাম্পেইনার। সকাল থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত যেহেতু তিনি দেশের কাজেই ব্যস্ত থাকেন, এমন একজন প্রধানমন্ত্রীর সর্বক্ষনিক তদারকি থাকবে বলেই মন থেকে বলছি বাংলাদেশ এ লড়াইয়েও ভালোভাবেই জিতবে-জিতবেই।
আর করোনা মোকাবেলায় জরুরি হচ্ছে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সচেতনতা, ব্যক্তিগত পরিচ্ছনতা। এটা ক্যাম্পেনের মাধ্যমে মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করার বিষয়। যা এই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই সম্ভব। সাহসটা পাই আরও কিছু কারনে। এক সময় বন্যা মোকাবেলায় টিএসসিতে কিভাবে দিন-রাত রুটি বানানো হতো, রুটি-গুড়, দিয়াশলাই সহ জরুরি নানা প্রয়োজনের প্যাকেট চলে যেতো দুর্গত মানুষের কাছে, এর গল্প হয়তো এই প্রিয় প্রজন্ম শুনেছে, চোখে দেখেনি। এমন মানবিক বাংলাদেশের কারনেই দুর্যোগে বাংলাদেশে মৃত্যু কমেছে। দুর্যোগে লড়াই করতে জানে বাংলাদেশ।
আর এই সময়ে সবাইকে অনুরোধ যার যার অবস্থান থেকে মানুষকে নিরাপদ করতে উদ্যোগ নিন। একজন আরেকজনের ভুল ধরতে সময় নষ্ট করবেননা। ভুল দেখলে তা নিজে নিজে সংশোধন করে মানুষকে দেখান, এভাবে নয়, এভাবে। এমন সম্মিলীত উদ্যোগ-উদ্যমে করোনাকে হারাবেই বাংলাদেশ।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা