অনলাইন ডেস্ক
মুদ্রানীতির হাতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে এই টাকা তুলে নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী সোমবার থেকে আগস্ট মাসজুড়ে চলবে এই ব্যাংক বিলের নিলাম। গত বৃহস্পতিবার নিলামের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেশের সব ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করছি, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর লিকুইড ফান্ড আছে। এই প্রচুর ফান্ড তাদের হাতে থাকার কারণে কলমানির সুদহার একেবারেই কমে গেছে। আবার অতিরিক্ত তারল্যের চাপে আমানতের সুদহারও তলানিতে নেমেছে। এতে আমানতকারীরাও অস্বস্তির মধ্যে আছে। তাই সব কিছু চিন্তা করে মুদ্রানীতির ম্যাকানিজমে বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মহামারি করোনার প্রথম ধাক্কায় দেশের অর্থনীতিতে যে স্থবিরতা এসেছে, সেটি সুদূরপ্রসারী। প্রণোদনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে এটি কাটিয়ে ওঠার প্রাণপণ চেষ্টা করছে সবাই। কিন্তু এ চেষ্টার মধ্যেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অর্থনীতিকে নতুন শঙ্কায় ফেলছে। ফলে ব্যবসায়ীরা যেমন নতুন বিনিয়োগে আসছেন না, তেমনি ব্যাংকগুলোও আগের দেওয়া ঋণ ফেরত আসা না আসার শঙ্কায় নতুন করে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে। ঋণ যেটুকু বিতরণ করছে, তা মূলত প্রণোদনানির্ভর। এ পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ ব্যাংকের হাতে অতিরিক্ত তারল্য পড়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। এটি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ গত এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে একেবারে অলস পড়ে আছে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সবখান থেকেই বলা হচ্ছে অতিরিক্ত তারল্য বাড়ছে, আমানতের সুদহার পড়ে যাচ্ছে। আবার এই অতিরিক্ত তারল্য অনুৎপাদনশীল খাতেও চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই সব দিক বিবেচনায় হয়তো বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে যে মাধ্যমে টাকা তোলা হবে, সেটির সুদহার কী হবে তা স্পষ্ট নয়।
বাজারের অতিরিক্ত তারল্য সমস্যা তৈরি করলে তা তুলে নেওয়া হবে বলে চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় জানিয়েছিলেন গভর্নর ফজলে কবির। গত ২৯ জুলাই মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে এরই মধ্যে সৃষ্ট উদ্বৃত্ত তারল্য উৎপাদনশীল খাতের পরিবর্তে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত হয়ে সার্বিক মূল্য পরিস্থিতি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় যাতে কোনোরূপ বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সদা সতর্ক রয়েছে। বার্ষিক ভিত্তিতে মুদ্রানীতি ঘোষণা হলেও দৈনিক ভিত্তিতে দেশের সার্বিক তারল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখে প্রয়োজনে খোলাবাজার কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থবছরের যেকোনো সময়ই মুদ্রানীতির নীতিগত দিক পরিবর্তন বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই বিবেচিত। গভর্নরের এমন ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যেই বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে এলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে কিছু সুদ দিয়ে অতিরিক্ত এই টাকা তুলে কিছুদিনের জন্য ভল্টে রাখা হবে।
জানা যায়, বাজার থেকে টাকা তুলতে বেশ কয়েকটি মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এগুলো হলো—রিভার্স রেপো, বাংলাদেশ ব্যাংক বিল ও নগদ জমার হার (সিআরআর)। এর মধ্যে প্রথম দুটি মাধ্যমেই ব্যাংকগুলোর সুদ আয় হয়ে থাকে। বর্তমানে রিভার্স রেপোর সুদহার ৪ শতাংশ। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের সুদহার বাজার চাহিদার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। তবে তা কলমানির সুদহারের চেয়ে কিছুটা কম হবে। বর্তমানে ৭, ১৪ ও ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিল চালু রয়েছে। এর মানে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে টাকা জমা রাখতে পারবে।
এ বিষয়ে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে আগস্ট মাসজুড়ে ৭, ১৪ ও ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম কোন কোন তারিখে অনুষ্ঠিত হবে সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের সব ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও এই বিলে টাকা খাটানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের সব নিলামে দেশের সব ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও বিড দাখিল করতে পারবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাব পরিচালনাকারী যেকোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব বা তাদের ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী গ্রাহকদের পক্ষে বিড দাখিল করতে পারবে। অনলাইন প্রক্রিয়ায় নিলামের তারিখে দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থাপিত এমআই মডেলের মাধ্যমে বিড দাখিল করতে হবে। একই দিনে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে এবং নিলামের ফলাফল দুপুর ২টার মধ্যে ঘোষিত হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা