মারুফুর রহমান অপু : বাংলাদেশের কি করোনা ভাইরাস মোকাবেলার সক্ষমতা আছে? আমি জানি একবাক্যে সবাই বলবেন নাই। আসলে প্রশ্নটাই ভুল। যদি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখি, যেসব দেশের সক্ষমতা আছে বলে আমরা ভাবি যেমন চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স ইত্যাদি তারা কেউ কিন্তু করোনা মুক্ত না। প্রতিদিনই নতুন রোগী ধরা পড়ছে ও মারা যাচ্ছে। তাহলে মোকাবেলার ব্যপারটা কি? মোকাবেলা হলো এই সংক্রমন যতটা কমের মাঝে রাখা যায় এবং আক্রান্তদের যতটা নিরপদভাবে চিকিৎসা দেয়া যায়।
সংক্রমন কমানোর জন্য উন্নত দেশগুলো যে ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে সত্যিকার অর্থে আমাদের মত দেশে সেই পর্যায়ের ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব না। তাও সরকারিভাবে নানাবিধ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে৷ তবে যা হয়, শতভাগ সক্ষমতার একটি ব্যবস্থাপনাতেও সবাই সমানভাবে কাজ হয়তো করেন না তাই নানাবিধ অব্যবস্থাপনার খবর আমরা পাই, এদিকে মিডিয়াও অব্যবস্থাপনার গল্প এমনভাবে তুলে ধরে যেন মনে হয় কিছুই বোধহয় কাজ করছেনা, যেমনটা আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে তারা বলে থাকে প্রায়ই।
CDC ও IEDCR করোনা ভাইরাস এর স্ক্রিনিং ও ডায়াগনোসিস এর জন্য কাজ করছে৷ প্রয়োজনীয় মেশিন (RT-PCR) ও কিট (WHO প্রদত্ত) এখানে আছে। তবে ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে এই একটি কেন্দ্র মোটেও যথেস্ট না৷
প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে কেন দ্রুত এসব মেশিন আর কিট কেনা হচ্ছেনা। আসলে মেশিন বা কিট সমস্যা না। RT-PCR অনেক সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই আছে (যেমন BSMMU, CMBT, icddrb ইত্যাদি)। সমস্যা হলো করোনা ভাইরাস এর মত একটি হাইলি ইনফেকশাস ডিজিজ এর পরীক্ষা সাধারন ল্যাবে করা যাবেনা। এর জন্য বায়োসেফটি লেভেল ৩ বা অন্তত ২+ ল্যাব লাগবে।
এর অর্থ হচ্ছে এমন একটি ল্যাব যাতে এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে যেন ভেতরের কোন জীবাণু বাইরে বের হতে না পারে এবং ভেতরে যারা কাজ করেন তারা নিজেরা সুরক্ষিত থাকেন। এটি শুধুমাত্র একটি স্থাপনা না, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা যার জন্য জনবল, প্রশিক্ষণ, স্থাপনা সবই প্রয়োজন।
এমন ল্যাব সরকারিভাবে শুধুমাত্র IEDCR এ আছে। রাতারাতি এমন নিরাপদ ল্যাব তৈরি করাও সম্ভব নয়। ফলে মেশিন ও কিট থাকলেও তা দিয়ে আরও অনেক সেন্টারে করোনা ডায়াগনোসিস টেস্ট করা এখনি সম্ভব না। আশা কর নীতিনির্ধারকেরা এগুলো নিয়ে ভাবছেন।
এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের ভাবনা সংশ্লিষ্টরা ভাবতে থাকুন। আমরা কি করতে পারি? করোনা ভাইরাস এর সংক্রমন ঠেকাতে কি করতে হবে এ বিষয়ে কম বেশি সবাই আমরা জানি। কিন্তু মানি কতজন? সিগারেট খেলে ক্যান্সার হয়, জানি ও পরামর্শ দেই, মানি কতজন?! সংক্রমন ঠেকাতে আমরা সাধারন মানুষ হিসেবে আরও যা যা করতে পারি এবং যা নিয়ে আমরা এখনো সচেতন হইনি তা হলোঃ
১) হ্যান্ডশেইক এবং কোলাকুলি এড়িয়ে চলা। এটা বাংলাদেশের কালচারাল প্র্যাকটিস এর অন্যতম হলেও অন্তত করোনা প্রকোপ না কমা পর্যন্ত নিজে ও অন্যের সুস্থতার স্বার্থে আমরা এটা এড়িয়ে চলতে পারি ও অন্যকে এড়াতে বলতে পারি। কেউ হ্যান্ডশেইকের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলে আমরা ভদ্রতার সাথেই হেড নড বা সালাম বা আদাব ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় কাজ সারতে পারি, কারনটি ব্যাখ্যা করে।
২) সাবান পানি দিয়ে সঠিক নিয়মে বারবার হাত ধোয়ার পাশাপাশি পকেটে বা ব্যাগে এলকোহল বেইজড হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে পারি যেন দিনে কয়েকবার করে হাত পরিষ্কার করা যায়৷ যেসব পেশাজীবী সরাসরি মানুষের সাথে সেবা আদানপ্রদানে জড়িত (যেমন ডাক্তার বা উকিল বা পুলিশ বা সাংবাদিক) তারা কাজ করার সময় প্রতিজন মানুষের সংষ্পর্শে আসার আগে ও পরে দ্রুত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার অভ্যাস করতে পারি।
৩) খুব বেশি প্রয়োজন না হলে হাসপাতালে রোগী দেখতে যাওয়া বা রোগীর সাথে থাকা এড়াতে পারি।
৪) নিজে অসুস্থ বোধ করলে বা পাব্লিক প্লেসে গেলে মাস্ক ব্যবহার করতে পারি এবং কাশি আসলে কনুইতে মুখ চেপে হাচি কাশি দেবার অভ্যাস করতে পারি
৬) মেটাল বা প্লাস্টিক সার্ফেস যেগুলো বারবার একাধিক মানুষ হাত দিয়ে ধরে (যেমন দরজার হাতল) সেগুলো সম্ভবপর ক্ষেত্রে হাত দিয়ে ধরা এড়াতে পারি বা বার বার ডিসইনফেক্টেন্ট দিয়ে মুছে ব্যবহার করতে পারি।
৭) বিনা প্রয়োজন পাবলিক গ্যাদারিং এড়িয়ে চলতে পারি। বিশেষ করে এই সময়ে কোন কনফারেন্স আয়োজন, কনসার্ট, রিফ্রেশমেন্ট ট্যুর ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে পারি৷ মিটিংগুলো সম্ভবপর ক্ষেত্রে অনলাইনে সেরে ফেলার অভ্যাস করতে পারি।
এগুলো অনেকের কাছে অতিরিক্ত মনে হতে পারে কিন্তু সাবধানের মাইর নাই। যদিও COVID-19 এ মৃত্যুর হার ২% এর আশেপাশে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বিবেচনায় সংখ্যা বিচারে মোট সংখ্যা কম হবে না যদি এখানে ছড়িয়ে পড়া শুরু করে।
আমরা সেই ২% এর একজন হবার বা অন্যকে হওয়ানোর ঝুকি কেন নেবো? এদেশে আমরা বলছি এখনো করোনা রোগী পাওয়া যায়নি কিন্তু এত মানুষের এত বড় দেশে ছড়াতে বেশি সময় লাগবে না বা আমাদের অগোচরে ছড়াচ্ছে কিনা সেটিও চিন্তায় রাখা যেতে পারে। ফলে অতিরিক্ত সতর্কতার কোন বিকল্প নেই।
# লেখক, চিকিৎসক, সরকারি চাকরিজীবী।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা