সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে মানব-পাচার প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা সৃষ্টিতে কাজ করার লক্ষ্যে ৫-বছর মেয়াদী একটি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বাংলাদেশ এবং কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা)। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে আইওএম।
বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) আইওএম-এর ঢাকার কার্যালয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন আইওএম বাংলাদেশ-এর মিশন প্রধান ও বাংলাদেশ জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক নেটওয়ার্ক-এর সমন্বয়ক গিওরগিগি গাওরি এবং কোইকা বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ইয়ংহা ডো। আইওএম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানা গেছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০১৯ সালে প্রায় ৭ লাখ অভিবাসী দেশের বাইরে গেছেন। যে সব অভিবাসীরা অবৈধ পথে দেশের বাইরে যাচ্ছে তারা পাচারকারীদের হাতে শোষণ ও নিপীড়নের ঝুঁকির মুখে পড়ে। সারাবিশ্বে বর্তমানে আধুনিক দাসত্বের শিকার আনুমানিক চার কোটির বেশি মানুষ এবং জোর পূর্বক শ্রমের সর্বোচ্চ বিস্তার এশিয়া এবং প্রশান্ত অঞ্চলে বিদ্যমান।
একদিকে যেমন মানব-পাচারের শিকার ও ভুক্তভোগীদের সংখ্যার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই, অপরদিকে বাংলাদেশে মানব-পাচারের অভিযোগে প্রায় ৪,৭০০ মামলা বিচার প্রক্রিয়া শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।
“কোইকা-আইওএম কম্প্রিহেনসিভ প্রোগ্রাম টু কমব্যাট হিউম্যান ট্রাফিকিং ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক এই প্রকল্পটি তিনটি ক্ষেত্রে কাজ করবে, যেমন- পাচারকারীদের বিচার নিশ্চিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগের দক্ষতা বৃদ্ধি, মানব পাচারে ক্ষতিগ্রস্থদের টেকসই পুনঃরেকত্রীকরণে সহায়তা প্রদান এবং ঢাকা, যশোর, সাতক্ষীরা এবং কক্সবাজারসহ সারাদেশে দশ লক্ষ মানুষের মাঝে পাচারের ঝুঁকি এবং নিরাপদ অভিবাসনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি।
আইওএম বাংলাদেশ-এর মিশন প্রধান ও বাংলাদেশ জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক নেটওয়ার্ক-এর সমন্বয়ক গিওরগিগি গাওরি বলেন, “মানব পাচার একটি বৈশ্বিক ঘটনা এবং বাংলাদেশের জন্য একটি ক্রম বর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। নানা কারণে বিপদাপন্ন বাংলাদেশি শিশু, নারী ও পুরুষ মানব পাচারের শিকার হয়ে থাকে। এরমধ্যে রয়েছে যৌন নির্যাতন, জোর পূর্বক শ্রম, প্রতারণা মূলক বিবাহ, শোষণ মূলক শিশু শ্রম এবং অংগ-প্রত্যঙ্গের বাণিজ্য। আইওএম বাংলাদেশ কোইকা’র এই সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ যা সুশৃঙ্খল, নিরাপদ এবং দায়িত্বশীল অভিবাসন নিশ্চিত করতে কাউকে পিছনে না ফেলে আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।”
গিগাওরি আরো বলেন, “২০১২ সালে পাস হওয়া মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আমরা বিচার বিভাগ, আইন প্রণয়ন কারী সংস্থা, মন্ত্রণালয় এবং এর বিভাগ সমূহের দক্ষতা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করবো। এ ক্ষেত্রে সরকারের অনেক উদ্যোগ রয়েছে। আমরা জানি যে, সরকার এদেশের সবচেয়ে ঝুঁকি পূর্ণদের উপর সংঘটিত এসকল অপরাধসমূহ মোকাবেলায় নিজের সক্ষমতা জোরদার করার লক্ষ্যে সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে এবং চুক্তি স্বাক্ষর হওয়া এই প্রকল্পে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে একত্রে কাজ করতে আমরা আশাবাদী।”
মানব পাচারের শিকার ৮০০ ব্যক্তিকে আশ্রয়, পুনঃপ্রতিষ্ঠিতকরণ সহায়তা প্রদানের মধ্য দিয়ে তাদের বিপদাপন্নতা হ্রাস ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ৫ বছর কাজ করবে প্রকল্পটি। পুনরেকত্রীকরণ সহায়তার মধ্যে রয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষণ, জীবন-দক্ষতা প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং ক্ষুদ্র-উদ্যোগ উন্নয়নে সহায়তা প্রদান। এই প্রকল্পটি তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী এবং নাগরিক সমাজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে যাতে করে তারা পাচারের শিকার ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও নির্দেশ করতেপারে। আইওএম ২,১০০ এর বেশি সরকারি কর্মকর্তাদের পাচারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থদের সনাক্ত ও সহায়তা প্রদান এবং মানব পাচারকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারকার্যে দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে। কক্সবাজার, যশোর, সাতক্ষীরা এবং ঢাকায় আদালত কর্তৃক চিহ্নিত ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা সেবার ক্ষেত্রে রেফারেল পরামর্শ প্রদান করবে আইওএম। মানব পাচার অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের সহায়তা প্রদানে একটি মধ্যবর্তী স্ট্যান্ডার্ড আবাসন তৈরি করা হবে এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে।
প্রকল্প উদ্বোধনকালে কোইকা’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ইয়ংহা ডো বলেন, মানব পাচার একটি মানবতা বিরোধী ঘৃণ্য অপরাধ। আমরা আশা করি, এই প্রকল্পের প্রতিরোধ ও সহায়তামূলক পদক্ষেপ পাচার রোধে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখবে। একই সাথে, মানব পাচার কারীদের সফল বিচার পাচার চক্র পরিচালনাকারী অপরাধীদের জন্য জোরালো বার্তা হিসেবে কাজ করবে যে তাদের অপরাধের জন্য তাদের গ্রেফতার ও শাস্তি প্রদান করা হবে। বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করার মধ্য দিয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ, বিশেষকরে লক্ষ্যমাত্রা ৫ (জেন্ডার সমতা), এবং লক্ষ্যমাত্রা ১৬ (শান্তি, ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছ-জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান) অর্জনে সহায়তা করা।”
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা