ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের নিবন্ধন অনুযায়ী দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ৮৪ লাখ। এর বাইরে অনেকেই আছেন যাদের রোগ সনাক্ত করা হয়নি। বিশ্বে শতকরা ৯ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ডায়াবেটিস রয়েছে। আর বাংলাদেশে প্রতি ১০ জনে ১ জন এ রোগে আক্রান্ত।
এমনই এক মুহুর্তের মধ্যে ১৪ নভেম্বর সারাদেশে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত হবে। দিবসটি পালনের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করতে বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এর হিসাবমতে, ১৯৮০ সালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ কোটি, ২০০০ সালে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি (বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ) ছিল, সেখানে ২০৩০ সালে এ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যাবে।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন বলছে, প্রাপ্ত বয়স্ক যেসব মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশের। যেখানে খুব দ্রুত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটছে। সংস্থাটি বলছে, ২০১৬ সালে ডায়াবেটিসের কারণে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশ ডায়াবেটিস রোগীর বিবেচনায় দশম অবস্থানে, রোগটি নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা জরুরী
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন,বলেন, বিশ্বে ডায়াবেটিসের গড় বিস্তার যেখানে ১১৪ শতাংশ, সেখানে আমাদের দেশে বিস্তারের হার ১৪৯ শতাংশ, যা যথেষ্ট আশঙ্কাজনক। বিশ্বে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিবছর বাড়ছে ১ লাখ রোগী।
তিনি বলেন, এটি তিরোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এটি নিয়ে প্রকাশিত দুইটি গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ২০ ভাগেরও কম রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সফল। এটিই বর্তমান বিশ্বের যে কোনো দেশের ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাত্রার তুলনায় খারাপ অবস্থা। ডায়াবেটিসের দীর্ঘকালীন জটিলতাগুলোতেও বাংলাদেশি রোগীরা বেশি ভুগছে।
নিবন্ধে দেখা গেছে, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি হলো- এখানে অতি অল্প বয়সের ছেলে-মেয়েরা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। বাংলাদেশের আরো একটি বড় ঝুঁকি হলো- বিপুল সংখ্যক গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগী। পৃথিবীতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার বাংলাদেশে তুলনামূলক বেশি। একজন রোগীর যদি প্রতিমাসে গড়ে দুই হাজার টাকা খরচ হয়, তাহলে সে হিসেবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা বাবদ প্রতিমাসে বাংলাদেশে খরচ হচ্ছে ১৮ শত কোটি টাকা এবং প্রতি বছরে খরচ হচ্ছে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
এটি অন্য আরো নানা ধরনের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে চিকিৎসা ব্যয় বাড়তেই থাকে। এ রোগের চিকিৎসা নিতে মানুষের আর্থিক চাপ যেমন বাড়ছে তেমনি মানুষের কর্মক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। যেটি দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে ডায়াবেটিস মহামারী আকার ধারণ করছে। ডায়াবেটিস যে হারে বাড়ছে তাতে আমাদের এখনই এ রোগ প্রতিরোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর যারা আক্রান্ত তাদের সচেতন করে তুলতে হবে, যাতে তারা ডায়াবেটিসকে সুনিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মঠ জীবন নিশ্চিত করতে পারে।
নিবন্ধে দেখা গেছে, দেশের ৮৫ ভাগ অধিবাসী যে পল্লী অঞ্চলে বাস করে, সেখানে ইনসুলিন পাওয়া যায় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ডায়াবেটিসের মতো আজীবন রোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজন ভিন্নতর দৃষ্টিভঙ্গির। যেসব হাসপাতালে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা হয়, সেখানেও এসব রোগীর কোনো নথি কিংবা তালিকা রক্ষা করা হয় না; এমনকি কোনো কেন্দ্রীয় নিবন্ধনও নেই। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ফেসবুক পেজ :
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা