বর্তমানে সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম স্থানে। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই এই রোগটি নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা জরুরী।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ( ১৪ নভেম্বর)কে সামনে রেখে “বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ; ডায়াবেটিসের ভয়াবহতা ও প্রতিরোধে করণীয়”-শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা একথা বলেন।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ৭১ ফাউন্ডেশন ও ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট উদ্যোগে সকাল ১১ টায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে (সাগর রুনি মিলনায়তন) এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বিশ্বে অসংক্রামক ব্যাধি বিশেষ করে ডায়াবেটিস অন্যতম প্রধান ঘাতক হিসাবে দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বলা হয়েছে, ৩০ বছর আগের তুলনায় ডায়াবেটিসের সংখ্যা এখন চার গুণ বেশি। বর্তমানে সারা বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ কোটিরও বেশি এবং এর কারণে প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশেও এই রোগ ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সেই সাথে ডায়াবেটিসজনিত অন্যান্য রোগের বিস্তার ও জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে আমাদের দেশের ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, অন্ধত্বসহ অন্যান্য রোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বক্তারা বলেন, বিশ্ব রোগ নিরাময় কেন্দ্রের মতে, এই শতকের মাঝামাঝিতে পৌঁছার আগেই বাংলাদেশে এটি মারাত্মক মহামারীরূপে দেখা দেবে। বাংলাদেশে এসব রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় চিকিৎসা ব্যয়ভার মেটাতে অনেকেই দারিদ্র সীমার নিচে চলে যাচ্ছে বা অসচ্ছল হয়ে পড়ছে। এছাড়াও পারিবারিক অন্যান্য অসুবিধা যেমন, কর্মঘন্টা ও উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া থেকে শুরু করে জাতীয় বাজেট ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এই রোগের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ খুব বেশি কঠিন বা চিকিৎসার মতো ব্যয়বহুল নয়। তাই এই রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি সার্বিক বিবেচনায় চিকিৎসার চেয়েও অধিক গুরুত্ব দিতে হবে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায়। এ জন্য জরুরী ভিত্তিতে নিতে হবে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা।
আরও পড়ুন : আন্তর্জাতিক সম্মেলনে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের ৫টি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে উক্ত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বিশিষ্ট্য চিকিৎসক ডা. খালেদ শওকত আলী। প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান । বক্তব্য রাখেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ডায়াবেটিস গবেষক প্রফেসর মো. আবু সাঈদ, পবা’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. মো. আবদুস সোবহান, ডা. জেবুন নাহার প্রমুখ।
তাঁরা বলছেন, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সব বয়সের মানুষই আজ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিবছরই দ্বিগুণহারে বাড়ছে নতুন নতুন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। সচেতনতার অভাবে অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ব্যক্তির সজ্ঞান ও আন্তরিক আগ্রহ আবশ্যক। তবে ব্যক্তিকে উদ্বুদ্ধকরণ, সার্বিক সহায়তা প্রদান, চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি এবং উপায়-উপকরণ সরবরাহ তথা পরিবেশ নির্মাণে অবিসংবাদিত ভূমিকা রয়েছে সরকার ও সমাজের। সুস্থ জনশক্তি বা নাগরিকের সুস্বাস্থ্য সব রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার অন্যতম অবলম্বন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষামতে, নগরায়ণ, ওয়েস্টার্ন ফুড আর সার্বিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতায় এ রোগের বিস্তার ঘটছে। ডায়াবেটিস মেলাইটাস সংক্রামক রোগ না হওয়ায় এখন পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় সব দেশের মতো বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য কার্যক্রমের অগ্রাধিকার তালিকায় এর স্থান অনেক নিচে। ফলে এসব দেশে ডায়াবেটিস স্বাস্থ্য পরিচর্যা কর্মসূচি সন্তোষজনকভাবে গড়ে ওঠেনি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেয়া হয় ঠিকই; কিন্তু রোগীকে ইনসুলিন দেয়া হয় শুধু হাসপাতালে ভর্তি হলেই, বহির্বিভাগের রোগীকে কখনোই ইনসুলিন দেয়া হয় না।
ফেসবুক পেজ :
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা