দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গভাবে অনুষ্ঠান সম্প্রচার ও বাণিজ্যিক সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’-এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এর সঙ্গে দেশের সকল টেলিভিশন চ্যানেল এ স্যাটেলাইটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্যাটেলাইটটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল। আমি বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী, ডিজিটাল শব্দটি আমি জানতাম না। এটা আমাকে দিয়েছিল সজীব ওয়াজেদ জয়।
দেশের সব টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যকম শুরু করেছে জানিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতদিন আপনারা দেশের বাইরে টাকা পাঠাতেন। এখন আপনাদের অনেক টাকা বেঁচে গেলো।
তিনি বলেন, ‘আশাকরি ইলেকট্রনিক সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর আরও অনেক বাধা দূর হবে। পরনির্ভরশীলতা থাকবে না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পেলাম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্যাটেলাইটের সেবা প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে ভাড়া দিয়ে সেখান থেকে আমরা অর্থ উপার্জন করতে পারবো। এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক সহজে বার্তা পৌঁছাবে।
‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’-এর এ সেবা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ জানান, বর্তমানে স্থানীয় টিভি চ্যানেলের অধিকাংশই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে সফলভাবে তাদের আনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।
ড. শাহজাহান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সামর্থের ৪০ শতাংশ বিক্রি করেছি। আগামী দিনগুলোতে বাকি সামর্থ্যও বিক্রির আশা করছি। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবা বিক্রি করে মাসে ৭ কোটি টাকা আয় করবো বলে ধারনা করছি।
সরকার আশা করছে আগামী আট বছরের মধ্যে দেশীয় বাজার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পুরো টাকা উঠিয়ে আনা সম্ভব হবে। টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য ডাইরেক্ট টু হোম সার্ভিস স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
ফ্রান্সের প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস গত নভেম্বর মাসে বিএস-১ এর নিয়ন্ত্রণ কর্তৃত্ব বিসিএসসিএল’র কাছে হস্তান্তর করে। ২০১৮ সালের ১২ মে ফ্লোরিডা থেকে এটি মহাকাশে উৎক্ষেপন করা হয়। বিএস-১ এর প্রথম পরীক্ষামূলক সম্প্রচার করা হয়, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) চ্যাম্পিয়ন-২০১৮ অনুষ্ঠান সফল সম্প্রচারের মাধ্যমে।
তিনি আরো জানান, স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলো প্রতি মাসে গড়ে ৪হাজার মাকির্ন ডলারের বিনিময়ে মেঘা হাটর্জ ফ্রিক্যুয়েন্সিতে অপস্টার-৭ এবং এশিয়াস্যাট স্যাটেলাইট থেকে ফীড রিসিভ করবে।
এর আগে গত ১৯ মে বিসিএসসিএল ছয়টি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করে।এই টিভি চ্যানেলগুলো হচ্ছে, সময় টিভি, যমুনা টিভি, দীপ্ত টিভি, বিজয় বাংলা, বাংলা টিভি ও মাই টিভি। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল বিটিভির চারটি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে ইতোমধ্যেই অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করেছে।
এ বিষয়ে বিসিএসসিএল কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে টেলিভিশনগুলোর সঙ্গে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
দেশের সকল টিভি চ্যানেলের তাদের অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর ৫টি ট্রান্সপন্ডারের সামর্থ্য প্রয়োজন হবে। এছাড়াও বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানি আকাশ ছয়টি ট্র্যন্সপন্ডার ভাড়া নিয়ে ডাইরেক্ট টু হোম বা ডিটিএইচ স্যাটেলাইট টিভিতে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।
টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স এসোসিয়েশনের (অ্যাটকো) একটি প্রতিনিধি দল গত ২৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে তারা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ২ অক্টোবর বিএস-১ এর মাধ্যমে সকল বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার শুরু করতে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আন্তরিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি টিভি চ্যানেল মালিকদের খরচ কমিয়ে আনতে আর্থ ষ্টেশন স্থাপনের পরিবর্তে এর গ্রাউন্ড ষ্টেশনের সঙ্গে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে বিসিএসসিএল সকল টিভি চ্যানেলকে সংযুক্ত করা হচ্ছে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা