অনলাইন ডেস্ক
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে স্থাপিত এই ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন।
জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১০০টি কবুতর উড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দর্শণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্র্যান্ডিং কক্সবাজারের সার্বিক সহায়তায় ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের ১০ জন শিক্ষার্থী এটি নির্মাণে অংশগ্রহণ করেন। গত ০৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে বুধবার সকাল ৯টায় ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা।
নির্মাণ শিল্পীরা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর বালুর তৈরী ভাস্কর্যটি জাতির জনকের সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ কোন ভাস্কর্য। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে নির্মিত হয়েছে ১০ ফুট উচ্চতার একটি ফ্রি-স্ট্যান্ডিং আবক্ষ ভাস্কর্য এবং আরেকটি শোয়ানো অবস্থায় রিলিপ ভাস্কর্য। ভাস্কর্যগুলো নির্মাণে শিল্পীরা শুধুমাত্র সৈকতের বালি ও পানি ব্যবহার করেছেন।
ভাস্কর্যটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের উন্মুক্ত করা হলে সেখানে দর্শণার্থীদের ভীড় ছিল লক্ষ্যণীয়। স্থানীয়দের পাশাপাশি কক্সবাজার সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও ভাস্কর্যটি দেখতে ভিড় জমান।
জেলা প্রশাসক বলেন, কুষ্টিয়াসহ দেশের কয়েকটি স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার ঘটনায় ভাস্কর্য নির্মাণের মাধ্যমে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে শিল্পকর্মটি উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিবাদের ঢেউ সাগর তীর থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার বঙ্গবন্ধু চত্তরে একটি স্থায়ী ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রস্তাবাধীন বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যটির নকশা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার পর এটি নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রস্তাবিত এই ভাস্কর্যটি নির্মাণের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেন কামাল হোসেন।
অভিনব প্রতিবাদ হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধুর বালু ভাস্কর্য’ নির্মাণের উদ্যোক্তা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্র্যান্ডিং কক্সবাজারের সমন্বয়ক ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন, কুষ্টিয়ায় যখন প্রথমবারের মত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গা অপচেষ্টা চালানো হয় তখনই মাথায় আসে সমুদ্র সৈকতে বালু ভাস্কর্য স্থাপনের মধ্য দিয়ে নতুন আঙ্গিকে প্রতিবাদ জানানোর। এটির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
মূলত উগ্র-মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বালুর ভাস্কর্যের মত শিল্পকর্ম উপস্থাপনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যগুলো নিয়ে উগ্র-মৌলবাদীদের আস্ফালনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে বালু ভাস্কর্য নির্মাণে অংশ নিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান শিপন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ভাঙ্গার ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ হিসেবে বালুর তৈরী ভাস্কর্য নির্মাণে অংশগ্রহণ করেছি। প্রতিবাদটি সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে বঙ্গবন্ধুর সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ বালুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই চিন্তা থেকে ১০ ফুট উচ্চতার একটি ফ্রি-স্ট্যান্ডিং আবক্ষ ভাস্কর্য এবং ৬ ফুট প্রস্থের ও ১০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি রিলিপ ভাস্কর্য নির্মাণ করা। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বালুর কাঠামো দিয়ে এ ধরনের ভাস্কর্য নির্মিত হয়নি। যারা ভাস্কর্য শিল্প সম্পর্কে জানেন তারা বুঝবেন এটি কত কঠিন কাজ।
ভাস্কর্যটি নির্মাণে দুঃসাহসের অনুভূতি কাজ করেছে মন্তব্য করে এ ভাস্কর্য শিল্পী বলেন, একজন শিল্পীর কাছে যেকোন শিল্পকর্ম হচ্ছে তার সন্তান সমতুল্য। তাছাড়া এটি ছিল বঙ্গবন্ধুকে ঘিরেই নতুন মাধ্যমে নতুন উচ্চতার শিল্পকর্ম। যাঁর অবিস্মরণীয় নেতৃত্বেই বাঙালী জাতি আজ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে। তাই শিল্পকর্মটি নির্মাণে শিল্পীদের অন্যরকম অনুভূতিও কাজ করেছে।
অনুষ্ঠানে কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম, কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজিবুল ইসলাম ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্র্যান্ডিং কক্সবাজারের সমন্বয়ক ইশতিয়াক আহমেদ জয় প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা