অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব মোকাবেলায় সরকার প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই প্যাকেজটি মূলত ব্যাংক ঋণ নির্ভর প্রণোদনা। এতে আবার কিছু অংশে ভর্তুকি দেবে সরকার। ফলে একই সঙ্গে এতে যেমন ভর্তুকি বাড়বে আবার সেই সঙ্গে বাড়বে ব্যাংক ঋণের সুদ ব্যয়। ফলে অর্থবছর শেষে সুদ ব্যয় খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫-৭ হাজার কোটি টাকা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, সুদ ব্যয় এবং ব্যাংক ঋণ কমাতে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমিয়ে আনা হয়েছিল। পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে বাজেট ঘাটতি কিছুটা পূরণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যাংক ঋণ এবং সুদ ব্যয় কমিয়ে রাখা কঠিন হবে। অর্থবছর শেষে দুটোই বাড়তে পারে।
সূত্র মতে, বাজেটের সুদ ব্যয় কমাতে সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর দ্বিগুণ আয়কর বসিয়েছে। এতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে অর্ধেকে নেমে এসেছিল। তারপর শেষ রক্ষা হচ্ছে না। কারণ, করোনা পরিস্থিতিতে দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দফায় প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এতে দুস্থদের পাশাপাশি সব শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাবেন।
এসব প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ দেওয়া হবে ব্যাংকের মাধ্যম। প্যাকেজের আওতায় ব্যাংক যে ঋণ দিবে তার কিছু অংশ সরকার ভর্তুকি দেবে। এই ভর্তুকির টাকা যাবে ব্যাংক ঋণের সুদ ব্যয় খাতে। তাছাড়া ৫ কোটি গরীব মানুষদের যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে আনা হবে তাতেও সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এ ব্যয়ও মেটানো হবে ব্যাংক খাত থেকে।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সুদ ব্যয় খাতে ৫৭ হাজার ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বর্তমানে সুদ পরিশোধে জিডিপি’র ২ শমিক ৫ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে। অর্থবছর শেষে তা বেড়ে ৬২ হাজার কোটিতে ঠেকতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা বলছেন, সুদ ব্যয়ের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যেতে পারে হিসাবে বাইরে। চলতি অর্থবছর সরকার অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংক ঋণ থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ৪৭ হাজার কোটি টাকা। মূলত বাজেট ঘাটতি মেটাতেই সরকার এ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার শুধুমাত্র ব্যাংক ব্যবস্থা থেকেই ঋণ নিয়েছে ৫২ হাজার ১৩৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বেশি। সব মিলিয়ে অর্থবছর শেষে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং সুদ ব্যয়ের পাল্লা বেশ ভারীই হবে।
অবশ্য গত কয়েক অর্থবছরের বাজেট তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সরকারের সুদ ব্যয় বাড়ছেই। ছয় অর্থবছরের ব্যবধানে বাজেটে সরকারের সুদ ব্যয় আড়াই গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থ বিভাগের হিসাবে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছে ৫১ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে মোট ব্যয় হয়েছে ৪১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় বেড়েছে ৯ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা