ভয়েস, একটি অধিকার-ভিত্তিক গবেষণা এবং অ্যাডভোকেসি সংস্থা, যা তামাক বিরোধী অভিযানে সক্রিয়ভাবে কিাজ করছে। গত ১৫ ই মার্চ শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, বাংলাদেশকে (বিএটিসি, বি) শিল্প ক্যাটাগরিতে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার হিসাবে ঘোষণা করেছে।
দেশের শিল্প উন্নয়নে অবদানের জন্য উক্ত কোম্পানিকে পুরস্কারের তালিকায় প্রথম পুরস্কার প্রাপ্ত হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আমরা এটিকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তামাকমুক্ত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার বিরোধিতা হিসাবে দেখছি। আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়কে পুরষ্কারের তালিকাটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোকে সেই তালিকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করছি।
ভয়েস-এর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা উল্লেখ করে বলেন যে , জনস্বাস্থ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী একটি তামাক কোম্পানিকে এ পুরস্কার প্রধান বিবেচনাপ্রসূত নয়, যেখানে তামাকের কারণে প্রতিদিন ৩৪৫ জন মারা যায়।
আহমেদ স্বপন আরও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ সরকারের এই সংস্থাটিতে শেয়ার রয়েছে মাত্র ৯.৮ শতাংশ। যে কারণে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে না।
তিনি উল্লেখ করেন যে, বিএটিসহ তামাক সংস্থাগুলি গ্রাহকদের রোগ ও মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে। প্রায় দেড় মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে। এবং তামাকসেবনজনিত রোগে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৬০ হাজার মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে পুরুষ ২৬ শতাংশ এবং নারী ১০ শতাংশ। অন্য একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে ৬৭ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা সংক্রামক রোগের কারণে ঘটে। গবেষকরা দেখেছেন যে , কমপক্ষে ৫০ ভাগ লোক তামাক-সংক্রান্ত রোগের কারণে অকাল মৃত্যুবরণ করে। তামাক সম্পর্কিত অসুস্থতার কারণে হারানো উৎপাদনশীলতা এবং সরাসরি স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় থেকে তামাক ব্যবহারের মোট অর্থনৈতিক ব্যয় হ’ল ১৫৮.৬ বিলিয়ন ডলার (অর্থাৎ বাংলাদেশের জিডিপির ১.৪%)।
আহমদ স্বপন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলেন যে, তামাকজনিত স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ শীর্ষ ১৫ টি দেশের মধ্যে অন্যতম।তামাকজাত দ্রব্যের বড় লক্ষ্য শিক্ষার্থী যাদের ৫২.৩ ভাগ শিক্ষার্থী ফুটপাত থেকে বিড়িসিগেরেট কিনে থাকে। ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে নমুনা দেওয়া হয় এবং ৯ ভাগ শিক্ষার্থীকে তামাক ব্র্যান্ডের লোগো সহ প্রচারমূলক পণ্য দেওয়া হয়, যা আইনবিরোধী।
জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন জরুরি এবং সরকারকে অবশ্যই দায়িত্বশীলতার সাথে আচরণ করতে হবে। আহমেদ স্বপন উল্লেখ করেন, যে সংস্থাটি বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতি ঘটানোর পাশাপাশি বড় ধরনের স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটাচ্ছে সে কোম্পানিকে পুরস্কার দেওয়া নীতি বিবর্জিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফটিটিসি) এর ৫.৩ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে আহমেদ স্বপন বলেন, সরকার দায়বদ্ধ আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নে, যেখানে স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য তামাকজাত পণ্য ও কোম্পানিগুলোকে আইন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের আইন ও নীতিমালা পুরোপুরি প্রয়োগ করার জন্য সংশ্রিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিবেন শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঘোষিত পুরস্কারের তালিকা থেকে মৃত্যু বিপণনকারী ব্রিটিশ আমেরিকান কোম্পানিকে পুরস্কারের তালিকা থেকে প্রত্যাহার করতে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা