জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন এক বিবৃতিতে ৩ মার্চ প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় অগ্নিঝরা মার্চ কলামে নূরে আলম সিদ্দিকীর ‘সেদিনের ইতিহাস বিকৃতির সুযোগ নেই’ শীর্ষক লিখিত কলামের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা করেছেন।
শনিবার ( ৭ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক অগ্নিঝরা মার্চ নিয়ে লিখতে গিয়ে জনাব নূর আলম সিদ্দিকী কোনো কারণ ছাড়াই তার স্বভাবসুলভ ‘স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস’ ও জাসদ বিরোধীতার বিদ্বেষের প্রকাশ করতে গিয়ে ধান ভানতে শীবের গীতের মতো জাসদ বিরোধী প্রলাপ বকেছেন। জানব নূর আলম সিদ্দিকী তার বক্তব্যে ৭০ এর নির্বাচনের পূর্বে ‘নির্বাচনের কথা বলে যারা ইয়াহিয়ার দালাল তারা’, ‘মুক্তির একই পথ-সশস্ত্র বিপ্লব’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর-পূর্ব বাংলা স্বাধীন কর’ ইত্যাদি শ্লোগানকে তৎকালীন ছাত্রলীগের স্বাধীনতাপন্থী অংশের শ্লোগান হিসাবে চাপিয়ে দিয়ে স্বাধীনতাপন্থীদের ৭০ এর নির্বাচন বিরোধী অতিবিপ্লবী হটকারী হিসাবে চিহ্নিত করার অপপ্রয়াস পেয়েছেন। ‘স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস’ ও ‘জাসদ’ এর বিরুদ্ধে তার বিদ্বেষ তাকে এতটাই উন্মাদ করে রেখেছে যে, তৎকালীন চীনপন্থী হিসাবে পরিচিত ছাত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন অংশ ও চীনপন্থী কমিউনিষ্ট পার্টির বিভিন্ন অংশের দেয়া শ্লোগানগুলোকে ছাত্রলীগের স্বাধীনতাপন্থীদের শ্লোগান বলে চালিয়ে দিতে ডাহা অসত্য বলতে তার সামান্যতম বাধেনি।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের স্বাধীনতাপন্থী তথা ‘স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস’পন্থীদের ৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করার কোন প্রশ্নই কখনই আসেনি। বরং ছাত্রলীগের স্বাধীনতাপন্থী অংশ, নিউক্লিয়াসপন্থীর অংশের নেতা-কর্মীরা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও সুসংগঠিতভাবে দেশের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে গ্রামে মাটি কামড়ে পরে থেকে ৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু-আওয়ামী লীগ-নৌকার পক্ষে গণরায় অর্জণে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। ছাত্রলীগের স্বাধীনতাপন্থী অংশ তথা ‘স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস’পন্থীরা জাতীয়তাবাদী সংগ্রামকে স্বাধীকার সংগ্রাম, স্বাধীকার সংগ্রামকে স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধীনতা সংগ্রামকে মুক্তিযুদ্ধের পথে পরিচালিত করতে যে অগ্রসর ও মূলচালিকা শক্তি হিসাবে ভ‚মিকা পালন করেছিল সেগুলোর কোনটিতেই বঙ্গবন্ধু বিরোধীতা দুরের কথা বরং সব কিছুতেই অনুমোদন-সমর্থন দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে দিয়েছেন। ৬৯ সালে জয় বাংলা শ্লোগান চালু করা, শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়া, ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা ২ মার্চ স্বাধীনতার পতাকা প্রদর্শন ও উত্তোলন, ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, ১৯৭১ সালের মার্চে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ শ্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগের সদস্যদের প্রকাশ্য সামরিক প্রশিক্ষণ ও মার্চপাস্ট, ২৩ মার্চ সামরিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন, ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকহানাদার বাহিনীর ক্র্যাকডাউনের পর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার সাথে সাথেই ঢাকাসহ সারা দেশে প্রাথমিক সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং মুক্তিযুদ্ধকে একটি রাজনৈতিক জনযুদ্ধ হিসাবে বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদী জনযুদ্ধের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনী গড়ে তোলা ছাত্রলীগের স্বাধীনতাপন্থী অংশ তথা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াসের কাজ। নূর আলম সিদ্দিকী ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি হিসাবে এ সকল ঐতিহাসিক বীরত্বপূর্ণ ঘটনায় কোথাও কোথাও উপস্থিত থাকতে বাধ্য হলেও তার যে স্বাধীনতার প্রশ্নে ছাত্রলীগের আপসহীন বিপ্লবী অংশের ভ‚মিকার প্রতি কখনই সমর্থন ছিল না তা তৎকালেও সকলের সামনে প্রকাশিতই ছিল। ৬৯ সালে ছাত্রলীগের কর্মীরা যখন জয় বাংলা শ্লোগান দিতেন, তখন জনাব নূর আলম সিদ্দিকী বহু চেষ্টা করেও জয় বাংলা শ্লোগান দেয়া বন্ধ করতে পারেনি। কোথাও কোথাও ৭১ এর অগ্নিঝরা মার্চের উত্তাল দিনগুলোতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ শ্লোগানও জনাব নুর আলম সিদ্দিকী বাধা দিয়েও আটকাতে পারেননি। ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েও তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের স্বাধীনতার পক্ষে জোয়ার তোলায় তার মনে যে হীনমন্যতা তৈরি হয়েছিল তা আজও ‘স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস’ ও ‘জাসদ’ বিদ্বেষ হিসাবে প্রকাশ পায়।
মুক্তিযুুদ্ধে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসাবে এবং ১১টি সেক্টরে গণবাহিনীর সদস্য হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ তখন জনাব নূর আলম সিদ্দিকীর ভ‚মিকা কি ছিল, তিনি কোলকাতায় কেমন বিলাসী জীবন কাটাতেন সেই ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ না হয় এই বিবৃতিতে নাইবা উল্লেখ করলাম। তবে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের পর জনাব নূর আলম সিদ্দিকী তার কয়েকজন সশস্ত্র অনুসারী নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাক ভবনে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে বঙ্গবন্ধু উপাধিটি ব্যবহার না করার জন্য হুমকি দিয়েছিলেন, খুনী খন্দকার মোশতাকের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন, পরবর্তীতে সামরিক শাসক জিয়ার সাথে হাত মিলিয়েছিলেন এবং ১৯৭৬ সালে জিয়ার প্রবর্তিত কুখ্যাত পিপিআর রাজনৈতিক দলবিধি-১৯৭৬ এর অধীনে মূল আওয়ামী লীগ যেন রাজনীতি করার সুযোগ না পায় তার জন্য মিজান চৌধুরীকে সভাপতি করে আওয়ামী লীগ (মিজান) গঠনের পিছনে মূল হোতা ছিলেন। জিয়া ও পরবর্তীতে এরশাদের সাথে হাত মিলিয়ে ডলার-পাউন্ডের ব্যবসায় এবং গুলশানসহ অভিজাত এলাকায় স্বনামে-বেনামে প্লট নিয়ে প্লট বাণিজ্য করে হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থ-সম্পদের মালিক বনেছেন। সেই ইতিহাস আড়াল করা অন্যায় হবে।
জাসদের দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, যারা ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ গঠন করেছেন তারা ৬০ দশকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম-স্বাধীকার সংগ্রাম-স্বাধীনতার সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও বলিষ্ঠ ভ‚মিকা রেখেছেন। আদর্শিক প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর সাথে বিরোধ থেকে তারা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করলেও খন্দকার মোশতাক-তাহের উদ্দিন ঠাকুর-নূরে আলম সিদ্দিকীর মত বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র করেননি।
তিনি বলেন, জাসদ রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন-নির্যাতনে দূর্বল হওয়া বা জাসদের প্রতিষ্ঠাতা নেতা-কর্মীরা অনেকেই দল ত্যাগ করার ঘটনা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াসের তত্ত¡াবধায়নে পরিচালিত ছাত্রলীগের স্বাধীনতাপন্থী অংশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক বীরত্বপূর্ণ ভ‚মিকা ও অবদানে সামান্যতম ম্লান করে না।
নূরে আলম সিদ্দিকী, কাজী আরেফের অল্প বয়সের কথা বলে তার নিউক্লিয়াসের সদস্য হিসাবে অগ্রণী ভ‚মিকা নিয়ে যে তাচ্ছিল্য করেছেন সেটাও তার হীনমন্যতা ও মনোবৈকল্যেরই বহি:প্রকাশ। জাসদের দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, জনাব নূর আলম সিদ্দিকীর বিদ্বেষ ও হীনমন্যতা থেকে ঐতিহাসিক সত্য অস্বীকার করে প্রলাপ বকা ইতিহাসকে সঠিক ও সত্য করে চলা থেকে বিরত করতে পারেনি, পারবেও না।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা