নারী শ্রমিকদের সমমজুরী ও নিরাপত্তা চাই’- এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত নারী শ্রমিকদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ‘সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী।
রেখা চৌধুরী বলেন, নারীদের কাজের পথে নানা বাধা বিপত্তি থাকবে। সেগুলি অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। নারী নির্যাতনের ধরণ এবং ভয়াবহতা সর্বত্র একই। পোশাক শিল্পে নির্ধারিত শ্রম ঘন্টা ও ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় ১৮৫৭ সালে। নারী শ্রমিকদের এই দাবি এখনও পূরণ হয়নি। এর সাথে বরং যুক্ত হয়েছে কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশের অভাব, স্যানিটেশনের অভাব ও ডে- কেয়ার সেন্টারের অপ্রতুলতা। সমস্ত বাধা কাটিয়ে উঠতে সকল শ্রমিক নারীকে ঐক্যব্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারীদের শ্রমের কারণেই আজ বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের উন্নয়নের মহাসড়কে নারী শ্রমিকদের অবদান অসামান্য । তারাও কর্মক্ষেত্রে মজুরী বৈষম্য, নিরাপদ কর্মপরিবেশের অভাব, যৌন হয়রানি ও সহিংসতাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত।
তিনি বলেন, তারা নিজেদের জীবনমানের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমাদেরকে নারী শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে।
সভায় বিশেষ অতিথি এবং সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বলেন, কর্মক্ষেত্রে এখনো নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়। গার্মেস্টস শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ নয়। কোন আন্দোলনে থাকে না। উপস্থিত শমিক নারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের নিজেদের অধিকার ফিরে পেতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। সরকার চায় নিজেরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে নিজেদের অধিকার বুঝে নিন।
বিশেষ অতিথি শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সমন্বয়কারী কামরুল আহসান বলেন, বর্তমানে নারী শ্রমিক আােন্দালন চ্যালেঞ্জের মুখে। আজও শ্রমনীতি বাস্তবায়িত হয়নি। আইএলও কনভেনশন অনুসারে আমাদের দেশের ১৫ ধরণের কাজ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এর জন্য কোন প্রস্তুতি এখন ও নেয়া হয়নি। এটি সরকারকে আমলে নিতে হবে।
সভায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনকালে সংগঠনের এডভোকেসি ও লবি শাখার পরিচালক জনা গোস্বামী বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম পোশাক শিল্পে বর্তমানে ৬৫ ভাগ নারী শ্রমিক কর্মরত আছেন। আগে এই হার ছিল ৮৫ ভাগ। কর্মক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে অপারগতা ও যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব এসব কারণে নারী শ্রমিকদের ঝড়ে পড়ার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা, নিরাপদ টয়লেটের অভাব, চাকরির অনিশ্চয়তা রয়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটি না পাওয়া, মজুরী বৈষম্য, ডে-কেয়ারের অপ্রতুলতা রয়েছে। যৌন হয়রানি ইত্যাদিও প্রত্যক্ষভাবে নারী শ্রমিকদের ঝড়ে পড়ার সাথে যুক্ত।
আরও পড়ুন : শিশুবান্ধব ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা করা হবে : রাজউক চেয়ারম্যান
তিনি বলেন, এই অবস্থায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের হার বৃদ্ধি করতে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্দিকে আরো গতিশীল করতে কর্মক্ষেত্রে মজুরী বৈষম্য দূর করতে হবে, নারী শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য পৃথক বাস চালু করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারী বান্ধব টয়লেটের ব্যবস্থা করা, ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা করতে হবে। এ সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা সম্বলিত নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং ২০১৩ সালের শ্রম আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন ইত্যাদি সুপারিশ তিনি তুলে ধরেন।
মুক্ত আলোচনায় নারী শ্রমিকরা বলেন, গৃহকর্মী হিসেবে যারা কাজ করে তাদের গৃহমালিকরা অত্যন্ত নিম্নশ্রেণীর মনে করে। মারধর করে, অতিরিক্ত কাজের চাপ দেয়। অন্যদিকে গার্মেন্টসে যেসকল নারীরা কাজ করে তারা পুরুষের চেয়ে কম মজুরি পায়। পুরুষরা যেখানে ১২০০ টাকা মজুরি পায় সেখানে নারীরা পায় ৩০০ টাকা। চাকরির নিশ্চয়তা নেই, ছুটি নেই, নিরাপদ কাজের পরিবেশ নেই।
সমমজুরী ও নিরাপত্তা চাই উল্লেখ করে তারা বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা নেই এবং সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। গার্মেন্টস মালিকের কুপ্রস্তাবে কোন নারী শ্রমিক রাজি হলে সে বেতন, ছুটি এসব ঠিকমত পায় অন্যথায় কোনটিই মেলে না। গণপরিবহনে যাতায়াতেও যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। টাকায় অভাব থাকায় ঠিকমত পুষ্টিকর খাবার খেতে না পারায় শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ‘দূর্বলতার’ দোহাই দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এছাড়াও ঘন ঘন ছাটাই করা হয়, আবার ঘুষ ছাড়া চাকরি পাওয়া যায় না। এই অবস্থায় আলোচকরা দাবি জানান নারীদের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে যাতে ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শেখানো যায়, নিজের যত্ন নেয়া যায়। কারখানা থেকে পরিবহনের ব্যবস্থা বা যাতায়াতের ভাড়া প্রদান করতে হবে। সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কারখানায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। গণপরিবহনে যৌন হয়রানি বন্ধ করতে খসড়া নীতিমালা করে তা প্রণয়ন করতে হবে ইত্যাদি।
ফেসবুক পেজ :
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা