শিশুবান্ধব ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ। শনিবার (১৬ নভেম্বর) প্রণয়নাধীন সংশোধিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এ শিশুদের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য শিশুদের সাথে মত বিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। রাজউকের সভাকক্ষে রাজউক ও সেভ দ্য চিলড্রেন এর আয়োজনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় শিশুদের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে অন্যতম চারটি প্রস্তাব ছিল : নিকটতম দূরত্বে স্কুল স্থাপন, পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও পার্ক তৈরি করা, নগরে সবুজ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং নিরাপদ আবাসিক এলাকা নিশ্চিত করা।
সভার প্রধান অতিথি রাজউকের চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ বলেন, শিশুদের কাছ থেকে যে প্রস্তাবগুলো আমরা পেয়েছি তার সবগুলো প্রস্তাবই আমরা প্রণয়নাধীন ড্যাপ-এ অন্তর্ভুক্ত করেছি। শিশুদের দায়িত্ব হলো তাদের প্রস্তাব বা মতমতগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা ।
তিনি বলেন, শিশুরা তাদের প্রস্তাবনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে খেলার মাঠের অভাবকে। তাই আমি রাজউকের সকল প্রকল্পের খালি খন্ড জমিগুলোকে কাউকে বরাদ্দ না দিয়ে সেগুলোকে বিনোদন বা অবকাশ যাপনের জন্য পার্ক কিংবা সবুজ চত্বর করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি।
শিশুদের মতামত নিয়ে শহরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে এটা গুরুত্ব সহকারের প্রচারের জন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে অনুরোধ করেন রাজউক চেয়ারম্যান।
ড. সুলতান বলেন, তোমরা (শিশুরা) নিজেরা সচেতন হলে তোমাদের বাড়ি গুলশানের মতো সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন করতে পরো। রাজউক থেকে নকশা অনুমোদন করে সেই নকশা অনুযায়ী বাড়ি তৈরি করতে বড়দের বাধ্য করতে তিনি শিশুদের অনুরোধ করেন। শিশুদের মোবাইল বা ট্যাবে সময় না কাটিয়ে বেশি বেশি পড়াশুনা করার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন।
তিনি বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়ন শুধু রাজউকের একার কাজ নয়, এর সাথে সরকারি-বেসরকারি অনেকগুলো সংস্থা জড়িত । পরিকল্পনামাফিক কাজ করে রাজধানী ঢাকা শহরের উন্নয়নে তাই সকলকে এগিয়ে আসতে হবে ।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ড্যাপ প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমরা পরিকল্পনার সাথে জড়িত দেশের সেরা বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করেছি, দেশের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে এর সাথে সম্পৃক্ত করেছি। সুতরাং ভবিষ্যতে তাদের প্রণয়নকৃত ড্যাপ-এর মাধ্যমে আমরা একটি পরিকল্পিত ঢাকা শহর পাবো বলে আশা রাখি।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের চারপাশের নদীগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাস্টারপ্ল্যান করেছেন। নদীগুলোর দূষণ রোধ করতে এবং নদীগুলোতে পরিষ্কার টলটলে ফিরিয়ে আনতে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে।
আরও পড়ুন : শুদ্ধি অভিযানকে যেকোনো মূল্যে সফল করতে হবেঃ কাদের
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অভ প্ল্যানার্স এর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি সালমা এ শফি বলেন, বড়দের সাথে শিশুরা পরিকল্পনা করলে শহরগুলো বাসযোগ্য হবে। জায়গা কম কিন্তু লোকসংখ্যা বেশি হওয়া সত্ত্বেও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত রাস্ট্রে পরিণত করা সম্ভব ।
এছাড়া বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও সাবেক কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান (সিডিএমপি) এর প্রকল্প পরিচালক মো: আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশের সব কিছূই রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে করা হচ্ছে। ফলে বিকেন্দ্রীকরণ না হলে পরিকল্পিত ঢাকা নগরী সম্ভব নয়। শুধু একটি নির্দিষ্ট এলাকা নয় নগরীর সকল পাড়া-মহল্লায় সব নাগরিক সুবিধা প্রদানের বিষয়টি পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
সেভ দ্য চিলড্রেন এর ডেপুটি ডিরেক্টর সৈয়দ মতিউল আহসান বলেন, আমাদের দেশে গৃহিত মেগা প্রকল্পগুলো শিশুদের কথা ভেবে করা হয়না । পরিকল্পিত শহর গড়ার ক্ষেত্রে শিশুরা তাদের চাহিদা মোতাবেক কিছু প্রস্তাব দিয়েছে।শিশুরা সকলের মঙ্গল কামনা করে, তাই তারা যে শহরের স্বপ্ন দেখে সে শহর জনবান্ধব হবে। পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত ঢাকা গড়তে শিশুদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তিনি রাজউককে ধন্যবাদ জানান।
ড্যাপ এর প্রকল্প পরিচালক মো: আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাড়ির কাছাকাছি পায়ে হেঁটে যাবার মতো মানসম্মত স্কুলের অভাব অন্যতম একটি বড় সমস্যা বলে শিশুরা মতামত দিয়েছে। তাই নতুন ড্যাপ-এ আমরা স্কুল জোনিংয়ের প্রস্তাব রেখেছি। এর ফলে এলাকাভিত্তিক স্কুল-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে।
বাংলাদেশে নগরবাসী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ২৭ লাখ, যার প্রায় অর্ধেক শিশু এবং কিশোর। সরকার ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে একটি পরিকল্পিত, বাসযোগ্য এবং উন্নত ঢাকা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংশোধিত ড্যাপ বাস্তবায়ন করবে রাজউক।
শিশু-কিশোরদের জন্য একটি বাসযোগ্য, নিরাপদ এবং শিশুবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে শিশুদের ভাবনা এবং মতামত বিবেচনায় নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। তাই ঢাকার বিভিন্ন স্কুল থেকে আগত ২০০ শিশুর সাথে রাজউক কর্তৃপক্ষ ও উপস্থিত অন্যান্য অংশীজনদের সাথে সক্রিয় আলোচনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ড্যাপ নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা ও প্রস্তাবনাগুলো চূড়ান্ত করা হয়।
এর আগে গত ৪ মে প্রায় আড়াইশ শিশু রাজউকের সাথে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়। এতে ড্যাপ এ ঢাকা শহরকে তাঁরা কিভাবে দেখতে চায় এবং এ বিষয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরে। এ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রাজউক শিশুদের প্রস্তাবনাগুলোকে সংশোধিত ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করবে এবং তা জানাতে পরবর্তীতে একটি চূড়ান্তকরণ কর্মশালা আয়োজন করবে। তারই ফলশ্রুতিতে আজকের এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজউকের সদস্য পরিকল্পনা মোঃ আজহারুল ইসলাম খান এবং রাজউক ও সেভ দ্য চিলড্রেন এর কর্মকর্তাবৃন্দ।
ফেসবুক পেজ :
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা