ভারতের রাজধানী দিল্লীতে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ২৩ জন নিহত হওয়া এবং মসজিদে আগুন দেয়ার ঘটনায় আক্ষেপ প্রকাশ করে আফসান চৌধুরী বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির যে কোন অগ্রগতি হয়নি, এটা ক্রমেই পরিষ্কার হচ্ছে। কারণ, সারা পৃথিবীর মানুষ ভারতকে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ভারত বলে কিন্তু এটা বলার আসলে কোন মানে নেই।
তিনি বলেন, এটা তো জনসংখ্যার ভিত্তিতে বৃহত্তম, চর্চার দিক থেকে ভারত অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এটা এই অঞ্চলের সবার জন্য উদ্বেগের। বরং এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের কোন সুসম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে সবচেয়ে ভাল সম্পর্ক ছিল কিন্তু সেটা এখন আর অতটা ভাল নেই। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এখন ভারতের বিভিন্ন আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করেছে। কিন্তু যেটা চিন্তার এবং কিছুটা আশ্চর্যের বিষয় এই আইনগুলো ভারতে করা হলো, সেটার প্রয়োজনটা কেউ বুঝতে পারছে না। এমনকি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কথাটা বলেছেন, এটা করার দরকার ছিল কিনা! আমিও বুঝতে পারছিনা এটা করার দরকার আছে কিনা! নিশ্চয় ভারতের ভিতরে অনেক শক্তি আছে, যারা চাইছে ভারতকে আমি হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র বানাব। এটা সেখানকার অনেকেই বলছে। দিল্লীর নির্বাচনের সময় যেসব কথা বলা হয়েছে, পুরোপুরি মুসলমান ধর্মাবলম্বী মানুষদের বিরুদ্ধে এটা বাংলাদেশে কোনদিন হয়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধর্মকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দল কোন বক্তব্য দেয়না। বর্তমান ভারতের সরকার বস্তুতপক্ষেই ভারতীয় জামায়াতে ইসলামীর মতো ব্যবহারটা করছে। কিন্তু কেন ব্যবহার করছে সেটা বোঝা যাচ্ছেনা। কি প্রয়োজন এটা করার সেটা বোঝা যাচ্ছে না। আমি এটা করার পেছনের অর্জনটাই ধরতে পারছিনা। এটা না করে তো বিজেপি এমনিই ভাল করছিল। এই ঘটনাগুলোতে বোঝা যাচ্ছে যে, রাজনৈতিক পরিপক্কটাতা অত সহজে আসেনা। বড় দেশ হলেই সংবিধানে ভাল কথা বললে লাভ হয়না। তবে, এখনও ভারতে প্রতিবাদ করার মানুষ আছে এবং এটা হচ্ছে। এটা বলছি না যে, শাহীনবাগে যারা করছে, শুধু তারা না সাধারণভাবেই মানুষ এই আইনগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। বাংলাদেশে কিন্তু সেই তুলনায় প্রতিবাদ কম হয়। একইসাথে বাংলাদেশে ভারতের যে অবস্থা নেই অবস্থা কোনদিন আমি দেখিনি।
আফসান চৌধুরী বলেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ঝগড়া ছিল আমাদের সাথে তারা আমাদেরকে খুন করার চেষ্টা করেছে। তিনটা রাষ্ট্রের মধ্যে – পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে মিল আছে অনেক। এই দুটো রাষ্ট্রের মধ্যে দিল্লীকেন্দ্রিক ভাবনাটা রয়েছে। বাংলাদেশে সেই ভাবনাটা নেই। বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগণের এলাকায় বিভিন্ন ধরণের অত্যাচার হয়, এটা যে, একটা আধুনিক নাগরিক রাষ্ট্র তৈরির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তার প্রমাণ আমরা প্রতিদিন পাই। কিন্তু তারপরও ধর্ম বা ভাষাভিত্তিক ভেদাভেদ আমাদের দেশে নেই। তবে, আমাদের মনে রাখা দরকার এই বিপদটা সবসময় রয়েছে। প্রত্যেকটা দেশের মধ্যে এই সমস্যাটা রয়েছে। এটাকে সামলে রাখার দায়িত্ব থাকে যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের। ভারত সরকার এই দায়িত্বটা পালন করেনি। বরং তারা নিজে এটা উস্কে দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তবে, যে বিপদে ভারতে পড়েছে এটা ভারতের জন্য ক্ষতিকর হবে। তবে, বাংলাদেশী হিসেবে আমার একটা অহংকার আছে, যতই ভারতে হিন্দু-মুসলমানের রায়ট হোক বাংলাদেশে কিন্তু এখনও ঐ পরিস্থিতি নাই। মানুষের মধ্যে সেই ভাবনাও নাই। আমি মনে করি, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন।
উল্লেখ্য, গত রোববার শুরু হওয়া সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছে। অন্তত দুটি মসজিদ সন্ত্রাসীরা পুড়িয়ে দিয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে-বিপক্ষের লোকেরা মারমুখী অবস্থানে রয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে। দেশটির আদালত আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কোথাও কোথাও সাধারণ মানুষ নিজেরাই মুসলিমদের রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা