রাকিবুল হক এমিল
মধ্যবিত্ত পরিবারের যারা এপার্টমেন্ট কিনেন অথবা ডেভেলপারকে জমি দেন বাড়ি বানাতে- তাঁদের একটা কমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সেটি হল- ডেভেলপারের দেয়া ড্রয়িং বা ছবি দেখে বাস্তব চিত্র বুঝতে পারেন না। নিজেদের ফ্লোর রেডি হবার আগে অন্য দু একটি ফ্লোরের ইটের গাঁথুনি দেখে টের পান কি হতে যাচ্ছে।
মাঝারী ডেভেলপারের বিল্ডিংগুলোয় এক ফ্লোরে সব চাহিদা মেটানোর কমিট্মেন্ট থাকলেও, শেষ পর্যন্ত দেখা যায় লিলিপুটের বাসা হয়েছে। অর্থাৎ, তিন বেডরুম, তিন টয়লেট, “চমৎকার” কিচেন, দুই বারান্দা, লিভিংরুম, ডাইনিংরুম সবই আছে- কিন্তু সবই এতোই ঠাসাঠাসি যে, এই বাড়িতে বসবাস করা ব্যক্তির জন্য মানসিক শান্তি বছরে একবার দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার উপর নির্ভর করে। এই বিল্ডিংগুলোও কোন না কোন স্থপতি নকশা করেন। কিন্তু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডেভেলপারের জবরদস্তি ব্যবসায়ীক চিন্তার কাছে পরাধীন হয়েই ডিজাইন করতে হয়।
যাপিত জীবনে প্রতিদিন আপনাকে অফিসে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, বাচ্চাদের স্কুলে বা রাস্তায় চলতে-ফিরতে যে চাপ বহন করতে হয়- তা থেকে বেঁচে গিয়ে মানসিকভাবে নব উদ্যোম ফিরে পেতে হলে প্রতিদিন সকালেই আপনাকে অনুপ্রাণিত হতে হবে। এখন এ জন্য আপনার পক্ষে প্রতিদিন কক্সবাজার গিয়ে সমুদ্র দেখে ঘুম ভাঙ্গা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় দিগন্ত বিস্তৃত আকাশের দিকে তাকিয়ে ভোর দেখে সকাল শুরু করা! তাহলে, কি করবেন? ডেভেলপার যে কুঠরি বানিয়ে দিবে, তাতেই প্রতিদিন মন খারাপ করে ঘুমাতে যাবেন, আর বিষন্ন হয়ে অফিসের জন্য প্রস্তুতি নিবেন?
অনেকেরই ডেভেলপারের দেয়া ডিজাইনের সঙ্গে বাড়ির ডিজাইন মিলছে না
কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে পারেন-
১।রুম বা ঘর বলতেই আমরা বুঝি ছাদ পর্যন্ত চার দেয়াল। অথচ সব ঘরেই কি ছাদ পর্যন্ত চার দেয়াল দরকার আছে? এতে করে ছোট ফ্ল্যাট আরো ছোট হয়ে যায়।
২। দরকার বেডরুমে অন্তত পূর্ব দিকের সকালের আলো কিছুটা হলেও আসুক। সম্ভব হলে সেই ব্যবস্থা রাখুন বারান্দার দিক থেকে।
৩। ছোট একটি এপার্টমেন্টের সব স্পেইসেই হয়তো উজ্জীবিত হবার মত পরিবেশ আনতে পারবেন না, কিন্তু ফ্ল্যাটের দুই একটি স্থানে অন্তত সেই সুযোগ রাখুন।
৪। বসার ঘর বা লিভিংরুম এবং কিচেনকে গুরুত্ব দিন। যারা পরিবার নিয়ে একসাথে খেতে ভালবাসেন, তাঁরা ডাইনিং স্পেইসকে গুরুত্ব দিন।
৫। সব সময় চেষ্টা করুন- বাসার ভিতরকে বাইরের প্রকৃতির সাথে কিছুটা হলেও সংযুক্ত করতে। যদি সুযোগ থাকে।
৬। কিচেনকে বন্দী করে ফেলার কি দরকার? সঠিক ইকুইপমেন্ট থাকলে ওপেন কিচেন ব্যবহার করতে পারেন। ডাইনিং স্পেইস অথবা সকালে অফিসে যাওয়ার আগে স্বামি-স্ত্রী নিজেরাই খাবার বানিয়ে কিচেনের সাথে লাগোয়া কাউন্টারে বসে খেয়ে নিতে পারেন। এতে করে বন্ডিং বাড়বে এবং কিছু প্ল্যানিংয়েও সুবিধা হবে।
৭। বারান্দাকে শুধুমাত্র কাপড় শুকানোর জায়গা বানিয়ে ফেলবেন না। দুটো ছোট্ট চেয়ার দিন। মাঝে মাঝে বসার ব্যবস্থা রাখুন। আর যদি বারান্দার উল্টো দিকেই অন্য বাড়ির বারান্দা বা জানালা হয়- তাহলে বারান্দা জুড়ে বাশের চিক লাগিয়ে নিতে পারেন। কিছুটা প্রাইভেসি হবে, আবার বারান্দাকে ঘরের ভিতর নিয়ে আসাও হবে। সাধারণত বারান্দাকে দরজা বন্ধ করে একাকি বাইরে ফেলে রাখি আমরা- সারা জীবনেও উপভোগ করা হয় না।
৮। প্রয়োজন ছাড়া ফার্নিচার রাখবেন না। চেষ্টা করুন ঘরের কেবিনেটগুলো সিলিং পর্যন্ত তৈরি করতে। একই কেবিনেট দিয়ে সব ধরণের প্রয়োজন শেষ করার চেষ্টা করুন। অন্যান্য ফার্নিচার উঁচু উঁচু না বানিয়ে, লো হাইট করুন, এতে ঘর বড় মনে হবে।
৯। ঘরের দেয়ালের রঙ উজ্জ্বল রাখুন। একদম সাদা নয়, কিছুটা লাইট গ্রে বা মিল্কি হোয়াইটের মধ্যে থাকুন। মনে রাখবেন- বাসা সাঁজাতে সারা জীবন আপনি যা যা কিনবেন, তার রঙ কি হবে আপনি জানেন না। নানা রঙ হতে পারে, নানান জিনিস। তাই দেয়ালটা এক কালার রাখুন। অনেক আর্ট গ্যালারীর মত ভাবুন বিষয়টা।
১০। সবশেষে বলবো লাইটের কথা। বাসার ভিতর অন্তত দুই ধরণের লাইটের মুড ব্যবহার করুন। একটি উজ্জ্বল, কাজ করার সময় বা কোন অনুষ্ঠানের সময় এই উজ্জ্বলতা দরকার হবে। আরেকটি হাল্কা আলো-ছায়া ধরণের। যা স্পট লাইট, লুকোনো লাইটের আলো ইত্যাদি দিয়ে করবেন। এতে করে বাসার ভিতরে গান শোনা, টিভি দেখা বা বিশ্রামের সময় পরিবেশটা ভাল লাগতে পারে।
এমন অনেক ছোট ছোট বিষয় আপনার নিত্যদিনের জীবনকে অনুপ্রাণিত করতে পারে আগামীকাল বেঁচে থাকবার জন্য। একটু গুরুত্ব দিন নিজের থাকবার পরিবেশের প্রতি, পরিবারের সবাই সুন্দর থাকবেন।
একজন ক্ষুদ্র স্থপতি হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ থেকে কিছু কমনসেন্সের কথা ব্জানালাম। আশা করি অনেকের উপকার হবে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা