ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিং ও পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমিরের বিধ্বংসী বোলিংয়ে বিপিএলে প্রথমবারের মতো ফাইনালে পা রাখলো মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন দল। সোমবার রাজশাহী রয়্যালসকে ২৭ রানে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে খুলনা টাইগার্স।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেয় রাজশাহী রয়্যালস। ব্যাট হাতে এবার আর উড়ন্ত সূচনা করতে পারেননি খুলনার দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদি হাসান মিরাজ। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১৫ রানে থামেন মিরাজ। পাকিস্তানের মোহাম্মদ ইরফানের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৮ রান করা মিরাজ।
উইকেটে যান এবারের আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রুশো। ৪ বল খেলে শূন্য রানে ফিরেন তিনি। ইরফানের দ্বিতীয় শিকার হন রুশো। ১৫ রানেই দ্বিতীয় উইকেট হারায় খুলনা। দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর শান্ত-শামসুর রহমান জুটি বাঁধেন। পাকিস্তানের স্পিনার শোয়েব মালিকের বলে বোল্ড হলেও তৃতীয় আম্পায়ারের সহায়তায় নো-বলে ব্যক্তিগত ৯ রানে জীবন পান শান্ত।
জীবন পেয়ে শামসুর রহমানকে নিয়ে দলের স্কোরকে বড় করছিলেন শান্ত। ১২ ওভার শেষে ৯০ রানে পৌঁছে যায় খুলনা। তবে ১৩তম ওভারে এ জুটি ভাঙেন রাজশাহীর ইংলিশ খেলোয়াড় রবি বোপারা। ৩১ বলে ৩২ রান করে ফিরেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে ৫৮ বলে ৭৮ যোগ করেন শান্ত-শামসুর।
শামসুরের বিদায়ের পর ৩৬তম বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শান্ত। অর্ধশতকের পর অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে দলের রানের চাকা সচল রাখেন শান্ত। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরিতে পড়ে আহত অবসর নেন মুশফিক। ১৬ বলে ২টি চারে ২১ রান করেন মুশফিক।
অধিনায়ক ফিরলে রাজশাহীর অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেলের শেষ ওভারে ২২ রান তুলেন শান্ত ও আফগানিস্তানের নজিবুল্লাহ জাদরান। শান্ত ২টি চার ও জাদরান ১টি করে চার ও ছক্কা মারেন। ৫৭ বলে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় অপরাজিত ৭৮ রান করেন দু’বার জীবন পাওয়া শান্ত।
আগের ম্যাচে ৫৭ বলে ৮টি চার ও ৭টি ছক্কায় অপরাজিত ১১৫ রান করেছিলেন শান্ত। অপরপ্রান্তে ১টি করে চার-ছক্কায় ৫ বলে ১২ রান করেন জাদরান। রাজশাহীর ইরফান ৪ ওভারে ১৩ রানে ২ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৫৯ রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের শুরুতেই আমিরের পেস তোপে দিশেহারা হয়ে পড়ে রাজশাহীর টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে দুর্দান্ত এক ইন-সুইংএ রাজশাহীর ওপেনার লিটন দাসের উইকেট উপড়ে ফেলেন আমির। ৩ বলে ২ রান করেন লিটন।
নিজের দ্বিতীয় ওভারে আরও দুই উইকেট শিকার করেন আমির। তার ঝুলিতে জমা পড়েন আরেক ওপেনার আফিফ হোসেন ও অলক কাপালি। আফিফ ১১ ও কাপালি খালি হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন। তাই ২২ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে রাজশাহী।
আমিরের বিধ্বংসী রূপ দেখে উৎসাহী হয়ে উঠেন দক্ষিণ আফ্রিকার রবি ফ্রাইলিঙ্ক। অন্যপ্রান্ত দিয়ে ইংল্যান্ডের রবি বোপারাকে ১ রানে থামান তিনি। তবে এ উইকেটের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রুশো। মিড-অফ থেকে দেঁড়ে কভারের গিয়ে ঝাঁপ দিয়ে ক্যাচ নেন রুশো।
ফ্রাইলিঙ্ক উইকেট নিলেও দমে যাননি আমির। নিজের তৃতীয় ওভারে রাজশাহীর প্রধান ভরসা অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেলকে খালি হাতে বিদায় দেন আমির। আর সেখানেই ম্যাচের ভবিষ্যৎ এক রকম নিশ্চিতই হয়ে যায়। কারণ প্রথম ৩৩ বলে ২৩ রানে ৫ উইকেটের পতন হয় রাজশাহীর। এরপর দলীয় ৩৩ রানে ফরহাদ রেজা বিদায় নিলে রাজশাহীর গুটিয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
তবে সেটি হতে দেননি পাকিস্তাসের শোয়েব মালিক। এক প্রান্ত ধরে স্ট্রাইক নিয়ে খেলতে থাকেন তিনি। নন-স্ট্রাইকে থাকা তাইজুল ইসলামকে যতটা কম সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। চার-ছক্কার ফুলঝুড়িতে ৩৮ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মালিক। অর্ধশতকের পরও চার-ছক্কায় মাঠ মাতিয়েছেন মালিক। এতে দুঃসাহস করে হলেও জয়ের চিন্তা করে রাজশাহী। শেষ ৩ ওভারে ৫৩ রান দরকার পড়ে তাদের।
১৮তম ও নিজের শেষ ওভার করতে এসে জমে যাওয়া মালিক-তাইজুল জুটি ভাঙেন আমির। ওই ওভারে দু’জনকেই বিদায় দেন আমির। ফলে ম্যাচে তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৪ ওভারে ১৭ রানে ৬ উইকেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও তার সেরা বোলিং ফিগার।
এমনকি বিপিএলের ইতিহাসেও এটিই সেরা বোলিং ফিগার। বিপিএলের ইতিহাসে আগের সেরা বোলিং ছিল পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ সামির। ২০১২ সালে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের বিপক্ষে ৬ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন দুরন্ত রাজশাহীর হয়ে খেলতে নামা সামি।
১০টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫০ বলে ৮০ রান করে আউট হন মালিক। ২৩ বলে ১২ রান করেন তাইজুল। সপ্তম উইকেটে ৫৭ বলে ৭৪ রান যোগ করেন তারা। এর মধ্যে ৩৪ বলে ৬০ রান ছিল মালিকের। মালিকের আউটের পর ইনিংসে শেষ বলে অলআউট হয় রাজশাহী। ১৩১ রানে আটকে যায় তারা।
এ ম্যাচ হেরে দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে গেল রাজশাহী। ১৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মুখোমুখি হবে রাজশাহী। ওই ম্যাচের বিজয়ী দল ফাইনালে খুলনার মুখোমুখি হবে ১৭ জানুয়ারি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর খুলনা টাইগার্স : ১৫৮/৩, ২০ ওভার (শান্ত ৭৮*, শামসুর ৩২, ইরফান ২/১৩) রাজশাহী রয়্যালস : ১৩১/১০, ২০ ওভার (মালিক ৮০, তাইজুল ১২, আমির ৬/১৭)।
ফল : খুলনা টাইগার্স ২৭ রানে জয়ী ম্যাচ সেরা : মোহাম্মদ আমির (খুলনা টাইগার্স)।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা